তামিমের জয়, সাকিবের হার

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের চতুর্থ রাউন্ডে এসে রানের দেখা মিলেছে। দিনের প্রথম তিন ম্যাচে রান উৎসব হওয়ার পর শেষ তিন ম্যাচেও রানের দেখা পেয়েছে ব্যাটসম্যানরা। আগের তিন ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর চতুর্থ ম্যাচে এসে রানে ফিরেছেন মোহাম্মদ মিঠুন, নুরুল হাসান সোহান ও সৌম্য সরকার।

তিন জনই ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন। তিন জনের হাফ সেঞ্চুরিতে জয় পেয়েছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব, গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। চতুর্থ রাউন্ড শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব।

তবে রান উৎসবের দিনেও রানে ফিরতে পাননি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়। এবারের আসরে এখনো বড় ইনিংস খেলতে পারেননি দুই অধিনায়কের কেউই। তবে বল আগের তিন ম্যাচের মত আজও দুর্দান্ত ছিলেন সাকিব।

সাকিবের ব্যর্থতার দিনে টানা তিন ম্যাচ জয়ের পর চতুর্থ ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের কাছে ১৭ রানে হেরেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। বড় রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই মোহাম্মদ এনামুলের তোপের মুখে পড়ে মোহামেডান। দলীয় ৮ রানে এই স্পিনারের সোজা বলে লাইন মিস করে রানের খাতা খোলার আগেই এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন পারভেজ হোসেন ইমন।

এই স্পিনারের পরের ওভারে লাইন মিস করে সাকিব আল হাসান ও ইরফান শুকুর বোল্ড হয়ে গেলে চাপে পড়ে মোহামেডান। ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া সাকিবের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ২ রান। আর আগের ম্যাচের হাফসেঞ্চুরিয়ান শুকুর ফেরেন শূন্য রানে। এর আগে ওপেনার মাহমুদুল হাসানকে (১২) প্রথম শিকারে পরিনত করেছিলেন এবাদত হোসেন।

৬৩ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর শেষের দিকে নাদিফ চোধুরি হাফ সেঞ্চুরি করলেও পরাজয় এড়াতে পারেনি মোহামেডান। ৪৩ বলে ৫৭ রান করেন নাদিফ। এছাড়া শামসুর রহমান করেন ২৯ রান। শেখ জামালের পক্ষে এনামুল তিনটি ও জিয়াউর রহমান দুটি উইকেট শিকার করেন।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু করলেও পাওয়ার প্লে শেষেই সাকিব আল হাসানের তোপের মুখে পড়ে শেখ জামাল। জোড়া আঘাতে সাকিব ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ আশরাফুল ও ফারদিন হাসানকে। ১৫ রান করে আশরাফুল ও শূন্য রানে ফারদিন ফিরে যাওয়ার পর নাসির হোসেন (৯), সৈকত আলী (২০) ও ইলিয়াস সানি (৫) ফিরে গেলে ৮১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে শেখ জামাল।

তবে এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শেখ জামালকে। নুরুল হাসান সোহান ও জিয়াউর রহমানের ৬৯ রানের জুটিতে মোহামেডানকে ১৬২ রানের চ্যালেঞ্জ ছিঁড়ে দেয় মোহামেডান। সোহান ৩৪ বলে ৬৬ রান করে ও জিয়াউর ১৭ বলে ৩৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। মোহামেডানের পক্ষে দুটি করে উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান ও আবু হায়দার রনি।

দিনের আরেক ম্যাচে সৌম্য সরকারের হাফ সেঞ্চুরিতে লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটারর্স। ১৩২ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলীয় ২১ রানে ওপেনার মেহেদী হাসানকে (১৩) হারালেও দ্বিতীয় উইকেটে সৌম্য সরকার ও মুমিনুল হকের ৮২ রানের জুটিতে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় গাজী গ্রুপ।

এরপর ৪৩ বলে ৫৩ রান করে সৌম্য ও ২৯ বলে ৩৪ রান করে মুমিনুল আউট হয়ে গেলেও জয় পেতে সমস্য হয়নি গাজী গ্রুপের। বাকি কাজটা শেষ করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ইয়াসির আলী। মাহমুদউল্লাহ ১৫ রান করে ও ইয়াসির ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। রুপগঞ্জের পক্ষে একটি করে উইকেট শিকার করেন কাজী অনিক, নাবিল সামাদ ও মোহাম্মদ শহীদ।

এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা লেজেন্ডস অব রুপগঞ্জের শুরুটা ভালো হয়নি।  রানের খাতা খোলার আগেই আজমির আহমেদ ফিরে যাওয়ার পর নাঈম ইসলাম (১৩) ও জাকির আলী (৯) আউট হয়ে গেলে ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ার পর রুপগঞ্জের হাল ধরেন মেহেদী মারুফ ও আল আমিন হোসেন।

দুজনের ৩২ রানের জুটিতে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে রুপগঞ্জ। কিন্তু ১৬ রান করে আল আমিন ও ২৪ রান করে মেহেদী ফিরে গেলে আবার চাপে পড়ে রুপগঞ্জ। এরপর সাব্বির রহমানের ১৮ ও সোহাগ গাজীর ২১ রানে ভর করে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩২ রান সংগ্রহ করে রুপগঞ্জ। গাজী গ্রুপের পক্ষে দুটি করে উইকেট শিকার করেন মেহেদী হাসান, মকিদুল ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

দিনের অপর ম্যাচে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে ৭২ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। ১৬৮ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে পারটেক্স। শূন্য রানে নাহিদুলের প্রথম শিকার হয়ে হাসানুজ্জামান ফিরে যাওয়ার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় পারটেক্স।

৭৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর আর ঘুঁড়ে দাঁড়াতে পারেনি পারটেক্স। রুবেল হোসেনের বোলিং তান্ডবে ৯৫ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে রুবেল চারটি, নাঈম হাসান ও নাহিদুল ইসলাম দুটি করে উইকেট শিকার করেন।

এর আগে প্রথমে ব্যাট করে মোহাম্মদ মিথুনের হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে ১৬৮ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। ৩৬ বলে ৫৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন মিথুন। এছাড়া ৪৭ রান এসেছে অধিনায়ক তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে। পারটেক্সের পক্ষে একটি করে উইকেট শিকার করেন জুবায়ের হোসেন, মেহরাব হোসেন জুনিয়র ও জয়নাল ইসলাম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

  • শেখ জামাল-মোহামেডান

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ১৬১/৫ (ওভার: ২০; সৈকত- ২০, আশরাফুল- ১৫, সোহান- ৬৬*, জিয়াউর- ৩৫*) (সাকিব- ৪-০-১২-২, রনি- ৪-০-৫৩-২)

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ১৪৫/৮ (ওভার: ২০; মাহমুদুল- ১২, পারভেজ- ০, সাকিব- ২, শামসুর- ২৯, নাদিফ- ৫৭) (জিয়াউর- ৪-০-২০-২, এনামুল- ৩-০-১৩-৩)

ফলাফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ১৭ রানে জয়ী।

  • রুপগঞ্জ-গাজী গ্রুপ

লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জ: ১৩২/৮ (ওভার: ২০; মেহেদী- ২৪, নাঈম- ১৩, আল আমিন- ১৬, সাব্বির- ১৮, সোহাগ- ২১, মুক্তার- ১১, অনিক- ১৩) (মাহমুদউল্লাহ- ৪-০-১৯-২, মেহেদী- ৩-০-২৩-২, মকিদুল- ৪-০-৩৮-২)

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ১৩৩/৩ (ওভার: ১৭.৫; মেহেদী- ১৩, সৌম্য- ৫৩, মুমিনুল- ৩৪, মাহমুদউল্লাহ- ১৫*, ইয়াসির- ১৩*) (নাবিল- ২-০-১২-১, শহীদ- ৩-০-২২-১)

ফলাফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৭ উইকেটে জয়ী।

  • প্রাইম ব্যাংক-পারটেক্স

প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ১৬৭/৫ (ওভার: ২০; তামিম- ৪৭, রনি- ৮, এনামুল- ১৬, মিঠুন- ৫৭, আরাফাত- ১৮) (জুবায়ের- ৩-০-২২-১, জয়নাল- ৪-০-৩৩-১)

পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ৯৫/১০ (ওভার: ১৭.২; মুসা- ২৯, রাজিবুল- ২৩, তাসামুল- ৮) (রুবেল- ৪-১-৩০-৪, নাহিদুল- ২.২-০-২৩-২, নাঈম- ৩-০-১৪-২)

ফলাফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৭২ রানে জয়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link