অনেক সমীকরণের বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ

সবচেয়ে বড় কথা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ মানেই বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছু। সেটি ক্রিকেট হোক কিংবা ফুটবল। জয়-পরাজয়ের আগের সময়টা যেন মাঠের লড়াইয়ের চেয়ে বেশিকিছু থাকে। অথচ ফুটবলে র‌্যাংকিংয়ের পাশাপাশি সাফল্যে ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। তবুও অন্যরকম উত্তেজনায় ঠাসা থাকে দুই দলের ম্যাচটি।

বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের শেষ তিন ম্যাচের দ্বিতীয়টিতে আজ ভারতের মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ। কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই ম্যাচ নিয়ে নেট দুনিয়ায় চলছে দারুণ উত্তেজনা। এছাড়া দেশের জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন মিডিয়াগুলোও বেশ সরব নানা সংবাদ প্রকাশে। সবচেয়ে বড় কথা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ মানেই বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছু। সেটি ক্রিকেট হোক কিংবা ফুটবল। জয়-পরাজয়ের আগের সময়টা যেন মাঠের লড়াইয়ের চেয়ে বেশিকিছু থাকে। অথচ ফুটবলে র‌্যাংকিংয়ের পাশাপাশি সাফল্যে ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। তবুও অন্যরকম উত্তেজনায় ঠাসা থাকে দুই দলের ম্যাচটি।

এই যেমন কাতারে বসেই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের উত্তাপটা টের পাওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেছে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। কোচ হিসেবে দ্বিতীয়বার চেনা এই প্রতিপেক্ষের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে যাচ্ছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর শেষবার দুইদল মুখোমুখি হয়েছিল। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রথম লেগের অ্যাওয়ে ম্যাচটি কলকাতার সল্টলেকের যুব ভারতী ষ্টেডিয়ামে প্রায় জিতেই যাচ্ছিল জামাল ভুইয়ার দল। ৮৭ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে লিড ধরে রাখতে পারলেও শেষদিকে আর সম্ভব হয়নি।

সাদ উদ্দিনের গোলে যে উল্লাসটা শুরু হয়েছিল সেটি কেড়ে নেন আদিল খান। সেই স্মৃতি দুই দলের ফুটবলারদের মতো দর্শকদের কাছে বেশ টাটকা। আজকে ভারতের কাছে সেই ম্যাচে পয়েন্ট হারানোর প্রতিশোধ নেওয়ার পালা। অন্যদিকে শ্রেয়তর দল হিসেবে ম্যাচটি যে কোন অঘটন ছিলনা, বাংলাদেশকে সেটা প্রমাণ করতে হবে। পাশাপাশি বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের জন্য অনেক সমীকরণ রয়েছে। ম্যাচ শেষে সেগুলো মেলাবেন বিশ্লেষকরা। তবে দুই দলের লড়াইয়ে বাংলাদেশের জন্য বেশি হতাশার ছিল ১৯৮৫ সাল।

ইমতিয়াজ সুলতান জনির নেতৃত্বাধীন দলটি ফাইনাল ম্যাচে আসলামের গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। সাফ গেমসের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে গ্যালারিভরা দর্শকরা অপেক্ষায় কখন স্বর্ন জিতব। অথচ ওই ম্যাচেই হার দেখতে হয়। দ্বিতীয়ার্ধে ভারত প্রথমে গোল শোধ করে টাইব্রেকারে জয় ছিনিয়ে নেয়। অথচ নির্ধারিত সময়ের মতো শটের লড়াইয়েও এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এদিকে ফিফা র‌্যাংকিং এ বছরখানেক আগে ৯৬ তে পৌছে গিয়েছিল ভারত! কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স তাদেরকে ১০৫ এ ঠেলে দিয়েছে।

মূলত নিয়মিতভাবে আস্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার কারণেই র‌্যাংকিং এ এতটা উত্থান ঘটে। সেখানে ১৮৪ থাকা বাংলাদেশকে ফেবারিট বলার মানুষও তেমনভাবে পাওয়া যাবেনা। ১০ জন নিয়ে কাতারের বিপক্ষে ড্র করায় আত্ববিশ্বাসটা অনেক বেড়ে গেছে তাদের। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে খুব একটা ভাল করতে না পারায় পিছিয়ে পড়ছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতের মোকাবেলা করার পর র‌্যাংকিং কোনভাবেই ফ্যাক্টর হয়ে দাড়ায় না। ভারতের মতো শেষ ম্যাচটাও যে বাংলাদেশ ড্র করেছে।

শুরুতে গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ার পর সেখান থেকে লড়াই করে ফিরে এসে ৮৪ মিনিটে গোল আদায়ের পাশাপাশি পয়েন্টও পায় বাংলাদেশ। আজ ’হোম ম্যাচে’ তাই আতিথ্য দেবে ভারতকে। কারণ এই ম্যাচটি বাংলাদেশের মাটিতে খেলার কথা ছিল কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে শেষ তিনটি ম্যাচই কাতারের মাটিতে খেলতে বাধ্য হয়। ভারতের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ২৯ টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৩টিতে জয় পায় বাংলাদেশ। ভারতের ১৫ জয়ের বিপরিতে ড্র হয়েছে ১১ টি ম্যাচ। এর মধ্যে আবার সর্বশেষ ৭টি ম্যাচের মধ্যে আবার ৪টি ম্যাচ অমিমাংসিতভাবে শেষ হয়। তবে কোচ হিসেবে জেমি ডে দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকদিক থেকেই উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের।

এ পর্যন্ত ২৫ ম্যাচে অংশ নিয়ে ২১ গোল করার বিপরিতে হজম করেছে ২৮টিতে। আগের ২৫টি ম্যাচের মধ্যে ১৮ গোল করার বিপরিতে ৬৬ গোহ হজম করতে হয়েছে। বাংলাদেশ দলের উন্নতিটা এখানে স্পষ্ট। তবে প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতের দূর্বলতা বেশ ভালই জানা আছে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের। এর আগে সর্বশেষ ম্যাচটি ভারতের মাটিতে খেলায় তাদের সম্পর্কে ধারণা আছে বাংলাদেশের। এখন চলছে নতুন করে ভারত-বধের কৌশল নিজেদের পরিকল্পনা সাজানো।

এ ব্যপারে দলের অধিনায়ক জামাল ভুইয়া বলেন, ‘আমি ভারতের আই লিগে অনেক খেলোয়াড়ের সাথেই খেলেছি। এছাড়া সল্পলেকে দেড় বছর আগেও খেলেছি। আমরা তাদের সঙ্গে আগে আরও খেলেছি। ভারতের শক্তি ও দুর্বল দিক সম্পর্কে তাই বেশ ভালই জানা আছে। আমরা যেমন তাদের সম্পর্কে জানি ঠিক তারাও আমাদের সম্পর্কে জেনে থাকবে। কোচদের সাথে মিলে কাজ করছি। আশা করছি ভাল ফলাফলই করতে পারব।’

কোচ জেমি ডে বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারাটা আত্ববিশ্বাসটা বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতের ভুলত্রুটি নিয়ে কাজ করছি। পাশাপাশি আমাদের ডিফেন্সে অনেক চাপ আসতে পারে। খেলোয়াড়দের ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য এভাবেই তৈরি করছি। তবে আমার কাছে মনে হয় পয়েন্ট পেলেই সেটি হবে তৃপ্তি দায়ক।’

২০১২ সালের ৮ নভেম্বর দ্বিতীয় মেয়াদে বাংরাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর বড় আয়োজন করে ঘোষনা দিয়েছিলেন, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খেলতে চায় বাংলাদেশ। সে সময় এটাই তার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছিলেন। কাতারে যাওয়ার টিকিটের লড়াইয়ে থাকলেও বাংলাদেশ দলের জন্য দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সেখানে রয়েছে কেবল এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের খেলা। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর সেরা চার রানার্সআপ দলও সরাসরি এশিয়ান কাপে খেলবে। বাকিদের কোয়ালিফাই খেলে আসতে হবে।

‘ই’ গ্রুপে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে এখনো সব সম্ভাবনা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। ৪৬টি দেশ রাউন্ড টু পর্বে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। ৭ খেলায় ১৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে কাতার। ৫ খেলায় ১২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ওমান আর ৬ খেলায় আফগানিস্তানের ৫, সমান খেলায় ৩ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে এবং ৬ খেলায় ৩ পয়েন্ট বাংলাদেশ গ্রুপের পাঁচ দলের মধ্যে পঞ্চম স্থানে। শেষ দুটি ম্যাচে জিতলেও বাংলাদেশ কিংবা ভারতের বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইয়ের পরেব রাউন্ডে যাওয়ার কোনো সুযোগ আপাতত নেই। সেখানে সুযোগ যতটা তা ২০২৩ এশিয়ান কাপে খেলার রয়েছে।

এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জনের নিয়ম কানুন নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে। কোয়ালিফাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডের ৮টি গ্রুপের ৮ চ্যাম্পিয়ন দল সরাসরি মূল পর্বে খেলবে। গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সেরা ৪টি দল সরাসরি মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা লাভ করবে। গ্রুপের বাকি চারটি দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দল, ৮টি তৃতীয় স্থানে থাকা দল এবং সেরা চারটি চতুর্থ স্থানে থাকা দল এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইংয়ের রাউন্ড থ্রি পর্বে খেলে মূল পর্বে উঠার জন্য লড়াই করবে। গ্রুপের শেষ ৪টি চতুর্থ স্থানে থাকা দল এবং ৮টি পঞ্চম স্থানে থাকা দল কোয়ালিফাইংয়ের তৃতীয় রাউন্ডের প্লে-অফ খেলায় মুখোমুখি হবে।

বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটুকু সেটিও পাঠকদের জানা দরকার। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া বা সেরা চারটি দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর মধ্যে থেকে মূল পর্বে সরাসরি যোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব নয় জামাল ভুইয়াদের জন্য। ভারত এবং ওমানের বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচ জিতলে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থান পাওয়া সম্ভব হবে যদি অন্যান্য দলও তাদের বাকি ম্যাচগুলো হেরে যায়। গ্রুপে চতুর্থ স্থানে খেলা শেষ করলেও সব গ্রুপ মিলিয়ে সেরা চার চতুর্থ স্থানাধিকারীর মধ্যে জায়গা করে নিলে এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের তৃতীয় রাউন্ডে খেলার সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের। আর পঞ্চম স্থানেই থাকলে বাংলাদেশকে কোয়ালিফাইংয়ের তৃতীয় রাউন্ডের প্লে অফ খেলা ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...