৭০ এবং ৭১ এই দুই সংখ্যার মাঝে তফাৎ খুব বেশি না। এই তো একটি মাত্র অংকের। কিন্তু এই একটি মাত্র অংক বাড়িয়ে নিতে একজন অপেক্ষা করছেন। তাঁর অপেক্ষাটা প্রায় আড়াই বছরের। মাসের হিসেব করলে ২৮ মাস ধরে তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন। হয়ত ইতোমধ্যে আন্দাজ করে ফেলেছেন ঠিক কাকে ঘিরে হচ্ছে আলোচনা।
হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। ঠিক ধরেছেন কথা হচ্ছে বিরাট কোহলিকে নিয়ে। তবে আরেকটু নিরাশ করি। আজকের মূল আলোচনা অন্য আরেক কোহলিকে নিয়ে।
সে কোহলি আবার ছিলেন বিরাটের সতীর্থ। তাঁর নাম তারুয়ার কোহলি। দুই কোহলি একসাথেই খেলেছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। অধিনায়ক বিরাট কোহলির দলের ওপেনার ছিলেন তারুয়ার কোহলি। রানও করেছিলেন বেশ। ২১৮। অন্যদিকে বিরাট কোহলি করেছিলেন ২৩৫। ফাঁরাকটা খুব একটা বড় না। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দুইজনের পরিস্থিতির মাঝে রয়েছে এক সাগর সমান দূরত্ব।
সতীর্থ বিরাট যখন পাখা মেলে উড়েছেন ক্রিকেটের আকাশে। ঠিক তখন তারুয়ার শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছেন। তবে তাঁর ব্যাটে রান ছিল। তিনি রান করতে জানতেন। প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে তাঁর দু’টো ত্রিশতকও রয়েছে। তবে আফসোস তারুয়ারের সেই অনবদ্য পারফর্মেন্সগুলো কেন যেন থেকে যায় আড়ালে। এর জন্য তারুয়ার দায়ি করেছেন সময়কে। তাঁর সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তার যে ছিল না।
‘আমি দু’টো ত্রিশতক করেছি। একটা পাঞ্জাবের হয়ে, আরেকটা মিজোরামের হয়ে। তবে যেহেতু সে সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না তাই আমার সেই ইনিংসগুলো নিয়ে চর্চা হয়নি। আমার সেই পরিসংখ্যান আড়ালে চলে যায়।’ সে কথা অবশ্য ঠিক। তবে তিনি সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া করেছেন। যে বছর যুব বিশ্বকাপ জিতে এলেন সে বছরই বর্তমান সময়ের আলোচিত ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)।
প্রথম মৌসুমের শিরোপা জয়ী দল রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলেছিলেন। পরের বছর গিয়েছিলেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবে। নিজের ভেতরে থাকা প্রতিভাটা তিনি ঠিক মেলে ধরতে পারেননি। আশার প্রতিফলন হয়নি বিন্দুমাত্র। তবুও হয়ত নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন তিনি। আর অন্যদিকে বিরাট ছাড়িয়েছেন উচ্চতা। নিজেকে স্থান দিয়েছেন ক্রিকেট কিংবদন্তিদের কাতারে।
সতীর্থ বিরাটকে নিয়ে যেখানে ঈর্ষা হওয়ার কথা সেখানে তারুয়ার করেছেন প্রশংসা। ‘নিজের খেলার ধরণকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সম্পূর্ণ কৃতীত্ব বিরাটের। আমি আশা করি সে রানের ফুলঝুলি ফোঁটাবে, তাঁর শতকের অপেক্ষার অবসান ঘটাবে দ্রুতই।’- তারুয়ার বলেন।
বিরাট পারলেও তিনি কেন পারলেন না? এমন প্রশ্নের আনাগোনা হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। বিরাটের উন্নতির জন্যে যেমন বিরাট কৃতীত্ব পান। ঠিক তাঁর উল্টো চিত্রে নিজের অবনতি বা হারিয়ে যাওয়ার জন্যে দায়ি তারুয়ার নিজেই। তিনি এটা বিশ্বাস করেন যে ক্রিকেট সময়ের সাথে খুব দ্রুতই পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন যুব বিশ্বকাপ খেলেছি তখন আমরা ডট বল খেলতাম। তবে সেই চিত্র এখন বদলে গেছে। এখন তিনটি ডট বলও ম্যানেজমেন্টের মনে আপনার জন্যে সন্দেহ তৈরি করবে।’
তারুয়ার জানেন যে ক্রিকেট বদলে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘সে সময়ে ক্রিকেটে এত দ্রুততা ছিল না। ৩০০ এর বেশি সংগ্রহও সচারচর দেখা যেত না। এমনকি ২৩০ একটি ভাল সংগ্রহ বলেই বিবেচিত হতো।’ অর্থাৎ ক্রিকেট যে তাঁর ঘোল পালটেছে সে বিষয়টা খুব ভাল করেই জানেন ও বোঝেন তারুয়ার। কিন্তু নিজেকে ঠিক সেভাবে ক্রিকেটের সাথে মানিয়ে নিতে পারেননি। অথচ বিবর্তনের ফলেই আজকের মানুষ।
আর মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতাই আজকের এই বিশাল পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু বিশাল আকৃতির ডায়নোসরের স্থান রুপকথায় কিংবা জাদুঘরে। সেদিক থেকে তারুয়ার নিশ্চয়ই নিজেকে দায়ী করতে পারেন। কিংবা তিনি দায়ী করতে পারেন সময়কে। হয়ত ভুল সময়ে তিনি এসেছেন এই ধরায়। তবে ভুলজন্ম বলে কি আদৌ কিছু হয়?