সূচনা হয়েছে শুভ। তবে পথটা ছিল বড্ড কঠিন। শেষ ওভারের নাটকীয়তায় মিলেছে বহু প্রতিক্ষিত জয়। হার্দিক পান্ডিয়া কেড়েছেন সবার নজর। ব্যাটে-বলে সমানতালে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। তাইতো হারানো গিয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানকে দশ মাস পর। তবে এই জয়ে স্বস্তিটা ঠিক মিলছে না। দলের বাকি ব্যাটারদের ব্যাটটা যে ঠিক জ্বলে ওঠেনি। শঙ্কা সেখানেই।
দলটা যখন ভারত তখন যে কোন টুর্নামেন্টে বাড়তি একটা আকর্ষণ সৃষ্টি হবে তাদের ঘিরে। আর এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চের একচ্ছত্র আধিপত্য তো ভারতের দখলেই। তাই আলাদা একটা দৃষ্টি রয়েছে টিম ইন্ডিয়ার উপর। এবারও তাঁরা এশিয়া কাপে হাজির হয়েছে ফেভারিটের তকমা গায়ে জুড়েই। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বদৌলতে দলে থাকা সবাই পারফর্ম করা খেলোয়াড়।
তবে বড় মঞ্চে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সবাই হয়ত ঠিকঠাক পারফর্ম করতে পারেনা । জাতীয় দলের একটা আলাদা চাপ তো নিশ্চয়ই থাকে। ভারতের ব্যাটারদের মধ্যেও সে চাপ ছিল স্পষ্ট। তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়টা নিশ্চয়ই বাড়তি একটা স্বস্তি জোগাবে। তবে ব্যাটারদের যে ফিরতে হবে নিজেদের বিধ্বংসী ফর্মে। কেবল তবেই তো জেতা যাবে আরও একটি শিরোপা।
ভারতীয় ব্যাটারদের সেই বিধ্বংসী রুপটা বের করে আনার একটা সুযোগ এসেই গেল। এশিয়া কাপের এবারের প্রথম রাউন্ড হচ্ছে গ্রুপ করে। এ গ্রুপে ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গী হংকং। ক্রিকেটের ইতিহাসের অদ্ভুত এক বৈচিত্র্য। শক্তি মত্তায় যোজন যোজন দূরে থাকা একটা দলকে সামলাতে হবে ক্রিকেট ইতিহাসের বাঘা দুই দলকে। আর ভারতের ব্যাটাররা নিশ্চয়ই এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইবে।
এশিয়া কাপের কোয়ালিফায়ারে হংকং সবগুলো ম্যাচ জিতেই এসেছে মূল পর্বে। তবু ব্যবধানটা এক আসমান! অন্তত ভারতের মত অভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন আপকে চাপে ফেলার মত বোলিং আক্রমণটা নেই হংকংয়ের। সেটা নিশ্চয়ই ভাল করে জানা ভারতীয় ব্যাটারদের। তবে তথ্য জেনেই সীমাবদ্ধ থেকে গেলে হবে না। বরং নিজেদের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে হবে।
আবরণ ছেড়ে বাইরে চলে আসার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন টপ অর্ডার ব্যাটার লোকেশ রাহুলের। আইপিএলে একটা ভাল মৌসুম কাটালেও নীল জার্সিতে এই বছরে প্রথমবার নেমেছিলেন মাঠে। লম্বা বিরতি কাটিয়ে নীল জার্সিতে ফেরাটায় কোন প্রকার তৃপ্তি ছিল না। চলে যেতে হয়েছে একেবারে শূন্যহাতে। হংকংয়ের বিরুদ্ধে ফেরার তাগিদটা সম্ভবত তারই বেশি। তবে আরও একজন রয়েছে নিজেকে ফিরে পাওয়ার মিশনে।
তিনি আর কেউ নন বিরাট কোহলি। রান পাচ্ছেন। তবে সেটা বিরাট সুলভ না। নয়ন জুড়ায় না, মনে প্রশান্তি আসে না। আর নিজের খারাপ সময়টায় একটু আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার মোক্ষম সুযোগ হতে পারে হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ। কোন রকম অঘটন না ঘটলে ভারতের পরবর্তী রাউন্ডে খেলাটা নিশ্চিত। তাইতো হংকংয়ের মত খর্ব শক্তি দলের বিপক্ষে মন খুলে মারকাটারি ব্যাটিং টাই করতে চাইবেন বিরাট কোহলি।
যদিও দলের অধিনায়ক আভাস দিয়েছেন পরিবর্তনের। দলে হয়ত বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। বেঞ্চে থাকা খেলোয়াড়রা ঠিক কেমন পারফর্ম করবে সেটা দেখে নেওয়ার একটা সুযোগ থাকছে রোহিতের সামনে। তাছাড়া বেঞ্চের খেলোয়াড়দের একটু ‘প্লেয়িং টাইম’ দেওয়ার একটা সুযোগ নিশ্চয়ই থাকে। অন্যদিকে রবীন্দ্র জাদেজা হয়ত পেতে পারেন বিশ্রাম। কেননা তিনি এই মুহূর্তে ভারতের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। তাঁর শক্তি বাঁচিয়ে রাখা বেশ প্রয়োজন।
তবে একটা ভয় মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা মুশকিল। যেহেতু হংকংয়ের সাথে খুব বেশি ম্যাচ খেলা হয় না ভারতের, তাছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তারা নিয়মিত নয়, সেহেতু তাদের শক্তিমত্তা নিয়ে সঠিক ধারণা নেই। আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে ভারতের জন্য। তবে অভিজ্ঞতার বলে হয়ত উৎরে যাবে ভারত। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে সেটা বলে দেওয়াই যায়।