সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবল কোচ!

সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? এই বিতর্কের চূড়ান্ত সমাধানে এখনো পৌঁছাতে পারেনি ফুটবল বিশ্ব। সেরার প্রশ্ন আসতেই যেন, দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ফুটবল দুনিয়া।  কেউ পেলেকে সেরার আসনে বসেন, তো কেউ ম্যারাডোনাকে ঐশ্বরিক মর্যাদায় বসান। বিংশ শতাব্দীর এই দুই সেরার লড়াইয়ের ঠিক পরেই শতাব্দীতেই আবার আরেক দ্বৈরথ, মেসি-রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্বের দ্বৈরথ। গত প্রায় এক যুগ ধরে চলে আসা এ লড়াইয়ের রেশটা এখনও একেবারে কমে যায়নি।

সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের এমন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যেমন কখনোই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যায় নি, ঠিক একই ভাবে সর্বকালের সেরা কোচদের তালিকাটাও বাছাই করা বেশ কঠিন। তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্সের কল্যাণে সম্প্রতি সর্বকালের সেরা দশ কোচের তালিকা প্রকাশ করেছে জনপ্রিয় ক্রীড়া গণমাধ্যম স্পোর্টাল। সে তালিকায় এক নম্বরে জায়গা পেয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন।

দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে এক টানা রেড ডেভিলদের ডাগ আউট সামলেছেন ফার্গুসন। যা ফুটবল ইতিহাসে এক প্রকার বিরল ঘটনাই বলা চলে। আর দীর্ঘ এ সময়কালে ইউনাইটেডকে রীতিমত সাফল্যের সাগরে ভাসিয়েছেন তিনি। ১৩ বার ইংলিশ লিগ শিরোপার পাশাপাশি ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে দুইবার চ্যাম্পিয়নস লিগও ম্যানইউ জিতেছেন তাঁর অধীনে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দৃষ্টিতে স্যার ফার্গুসনের পর দ্বিতীয় সেরা কোচ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে পেপ গার্দিওলাকে। বর্তমানে ম্যানচেস্টার সিটিকে সামলানো এ কোচ তাঁর সিংহভাগ সাফল্য পেয়েছিলেন বার্সেলোনাতে কোচ থাকাকালীন। বার্সাকে প্রথম ট্রেবল জেতানোর কারিগর ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর অধীনে ৪ বছর মোট ১৪ টা শিরোপা জিতে ঐ সময়ের ইউরোপের এক প্রকার অপ্রতিরোধ্য দলই হয়ে উঠেছিল বার্সেলোনা।

বার্সেলোনার পর গার্দিওলা জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখকেও বেশ কিছু সাফল্য এনে দেন। এরপর বায়ার্ন ছেড়ে ইংলিশ ক্লাব ম্যানসিটিতে যোগ দেন এ স্প্যানিশ কোচ। আর ইংলিশ লিগে এসেও গার্দিওলা যথারীতি তাঁর পুরনো সাফল্য ধরে রেখেছেন। ম্যানসিটিকে নিয়ে এই মুহূর্তে রয়েছেন ইপিএলের হ্যাটট্রিক শিরোপার দ্বারপ্রান্তে। চলতি মৌসুমে আর্সেনালকে শেষ পর্যন্ত টপকাতে পারলে সেই অনন্য কীর্তির অংশীদার হবেন গার্দিওলা।

গার্দিওলার পরে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান কোচ কার্লো আনচেলত্তি। গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা রিয়াল মাদ্রিদে ফিরেছিল তার অধীনেই। ইউরোপ সেরার এ লড়াইয়ে আনচেলত্তির শ্রেষ্ঠত্বের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। তিনিই ইতিহাসের একমাত্র কোচ যার অধীনে দুটি ক্লাব দু’বার করে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়েছে। এছাড়া ইতিহাসের প্রথম কোচ হিসেবে নিজ দলকে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে নিয়ে গেছেন তিনি।

কার্লো আনচেলত্তির মতো ইউরোপিয়ান ফুটবলে আরেক সর্বজয়ী কোচের নাম হোসে মরিনহো। ফুটবল দুনিয়ায় যার পরিচিতি স্পেশাল ওয়ান হিসেবে। এই মুহূর্তে এ এস রোমার কোচের দায়িত্বে আছেন। তবে যেখানেই গিয়েছেন, সাফল্যমণ্ডিত একটা অধ্যায়ের রচনা করেছেন।

মোনাকোকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় তাঁর ছোঁয়ায় ইউরোপ সেরার মুকুট পেয়েছিল ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানও। এ ছাড়া ইংলিশ ক্লাব চেলসিকে জিতিয়েছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা। পর্তুগিজ এ কোচ তাই আছেন সর্বকালের সেরা কোচের তালিকাতেও। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দৃষ্টিতে, তাঁর অবস্থান চারে।

এই তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছেন ইউক্রেনের সাবেক কোচ ভালেরি লভানোভস্কি । ১৯৭৫ সালে ডায়নামো কিয়েভকে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান কাপের শিরোপা জিতিয়েছিলেন তিনি। আর সেই শিরোপাই তাঁকে কিংবদন্তীদের কাতারে নিয়ে গিয়েছিল।

সর্বকালের সেরা ১০ কোচের তালিকায় আছেন একজন আর্জেন্টাইনও। যার খেলোয়াড়ি জীবন লাতিন আমেরিকার সাথে যুক্ত থাকলেও কোচিং ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সময় কাটিয়েছেন ইউরোপের একটি ক্লাবে। তিনি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কোচ দিয়েগো সিমিওনে। যার ছোঁয়ায় একটা মধ্যম সারির ক্লাব থেকে শীর্ষ পর্যায়ের ক্লাবের পরিণত হয়েছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। স্প্যানিশ লিগে বার্সা, রিয়ালের আধিপত্যেও এ কোচের অধীনে দুইবার লা লিগা শিরোপা জিতেছিল এটিএম। এ ছাড়া স্প্যানিশ এ ক্লাবে দুইবার উয়েফা ইউরোপিয়ান কাপের শিরোপাও জেতান সিমিওনে।

ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানকে ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ে তুলে আনার অন্যতম কারিগর ছিলেন অ্যারিগো সাচ্চি। কোচ হিসেবে এই দলের দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম মৌসুমেই জেতান লিগ শিরোপা। এরপর টানা দুই মৌসুমে জেতান ইউরোপিয়ান কাপ শিরোপা।এসি মিলানের এমন সোনালি অধ্যায়ের নেপথ্যের নায়ক অ্যারিগো সাচ্চিকে তাই ৭ম সেরা কোচ হিসেবে বেছে নিয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।

এ তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছেন লিভারপুলের বর্তমান কোচ ইয়োর্গান ক্লপ। তিনি যখন লিভারপুলের দায়িত্ব নেন তখন ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর মধ্যে মোটেই সেরার কাতারে রাখা হতো না লিভারপুলকে। কিন্তু এই লিভারপুলকেই তিনি একসময় ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব এনে দেন। এ ছাড়া লিভারপুলের প্রায় তিন দশকের ইপিএল শিরোপ খরা কাটে তা সৌজন্যেই।

এই তালিকায় নয় নম্বরে জায়গা পাওয়া আর্নস্ত হ্যাপেল নিশ্চিতভাবেই সর্বকালের সেরা কোচদের একজন। নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া—এই ৪টি ভিন্ন দেশেরই লিগ শিরোপা জিতেছেন তিনি। কোচিং ক্যারিয়ারে দুবার জিতেছেন ইউরোপিয়ান কাপও।

দীর্ঘ ৩২টি বছর কোচিং করানো রিনাস মিচেলস রয়েছেন এই তালিকায় ১০ নম্বরে। অনেকে অবশ্য তাঁকে কোচিংয়ের শিক্ষক বলেই স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। এমন স্বীকৃতিতে তাঁর নাম জড়াবেই বা না কেন? তিনিই যে ফুটবল খেলার দর্শনটা বদলে দিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন ‘টোটাল ফুটবল।’ আর সেই টোটাল ফুটবলের ধারা প্রবাহেই ফুটবল হয়ে উঠেছিল আরো আকর্ষণীয়।

ডাচ ক্লাব আয়াক্স বিশ্বসেরা ক্লাব হয়ে উঠেছিল এই রিনাস মিচেলসের হাত ধরেই। ৪টি লিগ শিরোপার পাশাপাশি আয়াক্সকে ইউরোপিয়ান কাপও (বর্তমানে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জেতান তিনি। এ ছাড়া তাঁর হাত ধরেই ১৯৮৮ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল নেদারল্যান্ডস। আর ১৯৭৪ বিশ্বকাপ দিয়ে প্রথম যে বার নেদারল্যান্ডস বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে উঠলো, সেবারের কোচ ছিলেন এই রিনাস মিচেলস। তবে দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, সেবার তাঁকে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link