নতুন দিনের বিজ্ঞাপন

বাতাসে নানারকম কথা ভাসে, তাতে আফিফদের কী আসে যায়। জিম্বাবুয়ের সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেই ওরা অবশ্য উত্তর দিয়েছিল। তবে তখন বলা হয়েছিল প্রতিপক্ষ দুর্বল। এবার অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পরেও কথা হয়েছে বেশ। দ্বিতীয় সারির দলের সাথে খেলা হচ্ছে, এমন মন্থর পিচে খেলে কি লাভ এমন আরো অনেক প্রশ্ন আছে। তবে এর জবাব যেমন আছে, পাল্টা প্রশ্নও তো কিছু আছে।

প্রথমত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা অনেক বেশি উদ্যমের, শরীরি ভাষার। প্রতিটি বলে প্রতিপক্ষকে জানান দেয়া আমরা লড়তে এসেছি। মিশেল স্টার্ককে এমন একটা কাভার ড্রাইভ মারার জন্য মনে সাহস থাকা প্রয়োজন। ফিটনেসও এখানে ভীষণ রকম জরুরি। শামিম, শরিফুলরা লম্বা বাউন্ডারি দৌড়ে এসে ক্যাচটা নিতে পারেন। আফিফ, সোহানরা ডাবলস বের করে ফিল্ডারদের চাপে ফেলতে পারেন। এইখানে মাথা উঁচু করে, বুক ফুলিয়ে লড়াই করাটাও জরুরি।

আফিফ, শামিম, সোহান, মেহেদী, শরিফুলদের মধ্যে যেই সাহস দেখা যায় সেটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ আগে কখনো দেখাতে পারেনি। ফলে যারা পারছে তাঁদের উপর ভরসা রাখুন। হ্যাঁ, এই ছোট ছেলে গুলো কখনো কখনো হয়তো সাহস দেখিয়েও হারবে। তবে তখনো ওদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

টি-টোয়েন্টিতে তো কখনোই আমরা কোন হাতি-ঘোড়া ছিলাম না। যখন তখন যে কেউ এসে হারিয়ে দিয়ে গিয়েছে। আপনি যেটাকে পূর্নশক্তির দল বলছেন সেই দলের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক নিদহাস ট্রফির ফাইনাল খেলা ছাড়া সাফল্য কী? সেই পূর্ণশক্তির দল নিয়ে আমরা ঘরের মাঠে হংকংয়ের কাছে হেরেছি। আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছি ভারতের মাটিতে, যে কন্ডিশনটাও আমাদের জন্য অপরিচিত নয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোন বড় দলকে শেষ কবে হারিয়েছি মনে করা যায় না।

ফলে আফিফরা কয়েকটা ম্যাচটা হারলেই ক্ষতি কী? আমার কাছে ওরাই পূর্ণশক্তির দল। ওরাই মূল খেলোয়াড়। ওরা অন্তত সাহসটা দেখায়, স্টার্কের বলকে চোখ রাঙানি দেয়। শরিফুলের বাউন্সারকে অজি ব্যাটাররা সমীহ করে। মুস্তাফিজের স্লোয়ারে পরাস্ত হয়। মাহেদীর ঘূর্নি ওরা পড়তে পারেনা। মোদ্দাকথা ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে দাপুটে দলটা, যাদের নাম শুনলে অনেক ক্রিকেটারের বুক কাপন ধরে তাঁদের বিরুদ্ধেও এই ছেলে গুলা চোখ গরম করে।

আমি বলছিনা এই দলটা একেবারে নিখুঁত। বিশেষ করে এই তরুণদের আমরা যেভাবে ব্যবহার করছি সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। আফিফকে আমরা সবসময়ই টপ অর্ডারে খেলতে দেখেছি। অথচ তাঁকে আমরা ব্যবহার করছি ছয়-সাতে। আমরা বুঝতে পারিনা, ফিনিশার আর স্লগার এক নন। দ্রুত রান করতে পারলেই তিনি স্লগার না। শামীম পাটোয়ারি স্লগার, আফিফ বিজি ক্রিকেটার।

ম্যাচের পরিস্থিতি যেমনই হোক আফিফ মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেন। নিজে চাপ না নিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেন। আফিফের পেশী শক্তি নেই, তবে তাঁর ক্রিকেটীয় ব্রেইন আছে। তিনি মাঠের চারপয়াশ ব্যবহার করে সিংগেলস, ডাবলস বের করেন। বাজে বল পেলে বাউন্ডারি মারে। তবে সবসময় রানের চাকা সচল রাখেন। বোলারকে চেপে বসতে দেন না, প্রতিপক্ষকে তাঁদের প্ল্যান চেঞ্জ করতে বাধ্য করেন। ফলে এমন একজন ব্যাটসম্যানকে বেশি বল খেলার সুযোগ দিতে হবে। আফিফকে অন্তত চারে খেলানো উচিৎ।

ওদিকে এই দুই ম্যাচে রিয়াদের অধিনায়কত্ব নিয়ে খুব বেশি সমালোচনা করার জায়গা নেই। কিছু জায়গায় প্রশংসাও করতে হয়। তবে তাঁর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তিনি ৫০-৬০ রান করলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর ব্যাটিং এপ্রোচ আর ইমপ্যাক্ট ফেলছে না। এই ফরম্যাটে ইমপ্যাক্টটাই সবচেয়ে জরুরি। সেটা ১৫ রান করেও ফেলা যায় কিংবা একটা ক্যাচ ধরেও করা যায়। ফলে আমাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে অধিনায়কের দোহাই দিয়ে রিয়াদকে আদৌ এই ব্যাটিং অর্ডারে এফোর্ট করা যায় কিনা। এছাড়া সাকিব যদি অধিনায়কত্ব করতে না চান তাহলে আফিফদের এখন থেকেই প্রস্তুত করুণ।

ওদিকে আজকে সোহান অফ সাইডে দারুণ কয়েকটা শট খেলেছে। তাঁকে নিয়ে আমার সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল এক পাশে এত দুর্বলতা নিয়ে তিনি বড় দলের বিপক্ষে রান করতে পারবেন না। কিন্তু তিনি যে অফ সাইডে প্রচুর কাজ করেছেন তাঁর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তবে আরো উন্নতির জায়গা আছে অবশ্যই।

সেগুলো হলে ছয়-সাতে শামিম-সোহান বেশ ভালো কম্বিনেশন। তবে এই ফরম্যাটে সোহানের ইমপ্যাক্ট ভিন্ন জায়গায়। উইকেটের পিছনে তিনি দেশের সেরা সেটা সবাই জানে। তবে সেখানে দাঁড়িয়ে সোহানের কথাবার্তা, ফিল্ডারদের অনুপ্রাণিত করা ও সর্বপরি ব্যাটসম্যানকে আনসেটেল করার কাজটায় তিনি দারুণ। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এই ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর জিনিস গুলোও আপনাকে পার্থক্য গড়ে দিবে।

এই দুই ম্যাচে বড় সমস্যা দেখা গিয়েছে ওপেনিংএ। সৌম্য দারুণ ফর্মে থাকলেও এই দুই ম্যাচে প্রচন্ড সেকি মনে হয়েছে। ওদিকে নাঈম শেখ অফসাইডে কতটা দুর্বল সেটা অজি বোলাররা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তবুও মনে করি এই দুইজনকে আরেকটু দেখা প্রয়োজন। তবুও না পারলে লিটন আছেন। এছাড়া দ্রুত পারভেজ ইমনকে দলে ডাকা প্রয়োজন। ওপেনার হিসেবে তিনি বড় সম্পদ হতে পারেন। তবে আপনি তামিম-ইমরুল কিংবা এনামুলে ফিরে যেতে চাইলে সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।

এছাড়া বোলিংয়ে বৈচিত্র আনতে আরেকজন ডানহাতি পেসার খুঁজে বের করা দরকার। যিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করতে পারবেন। লেগ স্পিনার বিপ্লবকেও সুযোগ দিয়ে দেখা যেতে পারে। তিনিও যেন লিখনের মত হারিয়ে না যান সেদিকে নজর রাখা প্রয়োজন।

সবমিলিয়ে এই বিশ্বকাপে এমনিতেও আমাদের বড় কিছু করার আশা নেই। ফলে এখন থেকে তরুণদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে ওদের গড়ে তুলুন। আগামী বছর আরেকটা বিশ্বকাপ আছে। তারপরের বছরও ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আছে। আপনি সেগুলো নিয়ে এখনই ভাবতে শুরু করবেন নিশ্চয়ই। অথবা বিশ্বকাপের মাসখানেক আগে একটা সিরিজ আয়োজন করেও দায়িত্ব সাড়তে পারেন।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link