পিছিয়ে পড়া প্রতিভা

দক্ষিণ রোডেশিয়া থেকে জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের স্বর্ণালী সময়ের সেরা তারকা তিনি কখনোই ছিলেন না। জিম্বাবুয়ের সেরা ব্যাটসম্যানের কথা বললেই প্রথমে মনে পড়ে ফ্লাওয়ার ভাইদের কথা, এরপর আসবে গাই হুইটাল, নিল জনসন, টাটেন্ডা টাইবুদের কথা।

রানসংখ্যায় তাদের চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকলেও সামর্থ্য আর টেম্পারমেন্টে বোধহয় খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু এনে দেওয়ার কাজটা তিনি করেছেন নিয়মিতই। টানা চার বছরের বেশি সময় ধরে ছিলেন জিম্বাবুয়ের ইতিহাসের সেরা সেই দলের অংশ। জিম্বাবুয়ের সাবেক এই ব্যাটসম্যানটি হলেন ডিওন ইব্রাহিম।

১৯৮০ সালে বুলাওয়েতে জন্মগ্রহণ করেন ডিওন ডিগবি ইব্রাহিম। ছোটবেলাতেই ক্রিকেটের প্রেমে পড়েন ইব্রাহিম। হারারের সিএফএক্স ক্রিকেট একাডেমিতে প্রাকটিস শুরু করেন সেই কিশোর বয়স থেকেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ খেলার সুবাদে ২০০১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে অভিষিক্ত হন ডিওন ইব্রাহিম। যদিও অভিষেকে আলো ছড়াতে পারেননি তিনি। একমাত্র ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রয়াত মানজারুল ইসলাম রানার ঘূর্ণিতে সাজঘরে ফিরেছিলেন দুই রান করেই।

যদিও প্রতিভাবান ইব্রাহিম নিজেকে চেনাতে খুব বেশি সময় নেননি। চারটি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে জানান দেন ফুরিয়ে যেতে আসেননি তিনি। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য আদর্শ ওপেনার ছিলেন তিনি। তার টেম্পারমেন্ট এবং উইকেটে টিকে থাকার ক্ষমতা ছিল প্রশ্নাতীত। তাঁর ব্যাটিং টেকনিক নিয়েও প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।

ফিল্ডার হিসেবেও তিনি ছিলেন দলের অন্যতম সেরা। টেস্ট ওপেনিংয়ে নামলেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে খেলতেন মিডল অর্ডারে। ২০০২ সালে দিল্লীতে ভারতের বিপক্ষে খেলেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৯৪ রানের ইনিংস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হার্মিসন-ফ্লিনটফদের সামলে টানা দুই ইনিংসে করেন ফিফটি। টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা না পেলেও ওডিয়াইতে সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষাটা দীর্ঘায়িত হয়নি। বুলাওয়েতে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেন ১২১ রানের অনিন্দ্য সুন্দর এক ইনিংস।

কিন্তু ইব্রাহিমের সুসময় বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। স্বৈরশাসক রবার্ট মুগাবের সাথে নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার-হেনরি ওলোঙ্গার কালো আর্মব্যান্ড পড়ে মাঠে নামা ইতিহাস হয়ে আছে ক্রিকেটে। ২০০৩ বিশ্বকাপের পর সিনিয়র ক্রিকেটাররা সরে দাঁড়ালে ডিওন ইব্রাহিম দলের সহকারি অধিনায়ক নিযুক্ত হন। কিন্তু ২০০৫ সালে বোর্ডের সাথে বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হলে ইব্রাহিম ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান।

ইংল্যান্ডের ঘরোয়া বিভিন্ন টুর্নামেন্টের নিয়মিত মুখ ছিলেন ডিওন ইব্রাহিম। দেদারসে রান করেছেন সেসব টুর্নামেন্টে। ফলে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের স্থানীয় জনগণের কাছে। ২০০৯ সালে পাড়ি জমান পৃথিবীর অপর প্রান্ত নিউজিল্যান্ডে। মাঝে একবার জিম্বাবুয়েতে ফিরে এসেছিলেন, মাতাবেল্যান্ড টাস্কার্সের হয়ে খেলতে।

২০০৫ সালে হারারেতে ভারতের বিপক্ষে টেস্টই হয়ে আছে তার ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে। ২৯ টেস্টে মাঠে নেমে দশটি অর্ধ-শতকে ১২২৫ রান সংগ্রহ করেছেন। অন্যদিকে, ৮২ একদিনের ম্যাচে সংগ্রহ ১৪৪৩ রান। সবেধন নীলমণি বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র সেঞ্চুরি। খেলা ছাড়ার পর বেছে নিয়েছেন ক্রিকেট কোচিং। নিউজিল্যান্ডের বয়সভিত্তিক প্রায় সব দলেই কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন প্রাদেশিক দল ওটাগোর হেড কোচ হিসেবে।

পরিসংখ্যান হয়তো বলবে ডিওন ইব্রাহিম ব্যাটসম্যান হিসেবে খুব একটা সুবিধের ছিলেন না। কিন্তু পরিসংখ্যান আপনাকে কখনোই জানাবে না তিনি কোন পরিস্থিতিতে জিম্বাবুয়ের হয়ে মাঠে নেমেছেন, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের অস্তমিত সূর্যকে প্রলম্বিত করতে। তিনি হয়তো অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার কিংবা নিল জনসনদের মানের ব্যাটসম্যান ছিলেন না। কিন্তু জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে একজন ডিওন ইব্রাহিমকে ছাড়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link