ইনজামাম উল হকের মত অলস না হলেও, ভারতের এই সেট-আপে তিনি সবচেয়ে ফিট ক্রিকেটার নন। কোনো ভাবেই নন। ফিটনেস নিয়ে তাঁর মধ্যে কোনো রকম অতিরঞ্জন নেই। বড়া-পাও খাওয়া তিনি আদৌ বন্ধ করেননি।
তিনি ভারতের সেরা ক্রিকেটার কিংবা সেরা অধিনায়কও নন। পারফরম্যান্স বা ব্যাটারশিপের বিবেচনায় রোহিতের ওপরে শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলিরা থাকবেন অনায়াসে। আর অধিনায়কত্বকে তিনি কখনওই কপিল দেব, সৌরভ গাঙ্গুলি বা মহেন্দ্র সিং ধোনির মত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেননি।
তারপরও তিনি আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা গ্রেট। তিনি আলস্যে আর রহস্যে মোড়ানো এক অকল্পনীয় ব্যাটিং হিটম্যান। কোনো কল্পনারও সাধ্য নেই রোহিত শর্মার ব্যাটিংকে ব্যাখ্যা করার।
রোহিত শর্মার ব্যাটিং পাওয়ার হিটিংয়ের মোহনীয় বাঁশি সব সময় বাজবে না। তবে, যখন বাজবে তখন সেই আওয়াজে বিশ্বের অধিকাংশ সেরা বোলারের রাতের ঘুম, মনের শান্তি নষ্ট হবে। আর ভারতের দুরুদুরু বুকে প্রাণের সঞ্চার হবে।
চলতি বিশ্বকাপে রোহিত শুরু থেকে ঠিক পুরোপুরি ‘টাচ’-এ ছিলেন না। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মন্থর ও বিদঘুটে এক উইকেটে মারকুটে এক হাফ সেঞ্চুরি করেন। এরপর থেকে তিনি রানের মধ্যে ছিলেন না একদমই। বাংলাদেশের বিপক্ষে শুরুটা ভাল হলেও সেটা পূর্ণতা পায়নি। আউট হয়েছেন বাজে ভাবে।
এরকম পাওয়ার হিটারদের খামতিটাই এখানে। রোজ রোজ ফায়ার আপ কর সম্ভব না। তবে, যেদিন তিনি ফায়ার আপ করবেন, সেদিন সেই আগুন সহসাই নিভবেন না। যেমনটা হয়েছিল সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুপার এইটের ম্যাচে। এই বিশ্বকাপে রোজ রোজ অন্তত ৪১ বলে ৯২ রানের ইনিংস দেখা যায়নি।
সেই ধারাবাহিকতা থাকল সেমিফাইনালেও। এ প্রান্তে দাঁড়িয়ে প্রতিনিয়ত অপর প্রান্তে বিরাট কোহলিকে আউট হয়ে দেখাটা তাঁর জন্য নিয়ম হয়ে গিয়েছে। এবার শুধু কোহলি নয়, দ্রুত সাজঘরে ফিরে যান তিন নম্বরে নামা ঋষাভ পান্তও। সেখান থেকে শুরু হয় রোহিতের ভারতকে পুনরুদ্ধারের মিশন।
সেই মিশনে বলা যায় রোহিত শর্মা শতভাগ সফল। আউট হওয়ার আগে ৩৯ বলে করেন ৫৭ রান। পেয়ে যান টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ৩২ তম হাফ সেঞ্চুরি। ইনিংসে ছিল দু’টি ছক্কা ও ছয়টি চার। চতুর্থ উইকেট জুটিতে সুরিয়াকুমার যাদবের সাথে ৭৩ রানের জুটি গড়ে তিনি শক্তভাবে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন। সত্যিই, রোহিতের বড় ইনিংস গড়তে বড়া-পাও ছাড়ার প্রয়োজন হয়নি।
এই পথে রোহিত একাধিক রেকর্ডও নিজের নামে করে ফেলেছেন। ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। এখানেই শেষ নয়। ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে নক আউট রাউন্ডের সেরা ইনিংসও এখন রোহিতের দখলে।