দ্য ‘বেস্ট ভার্সন’ অব ক্যাপ্টেন্সি

১৯৮৮ সালে ভারতের বিরুদ্ধে লাহোর টেস্টে বল হাতে মাত্র ১২ ওভারে ৫ উইকেট নিলেন ইমরান। সেদিন আব্বাস, ওয়াসিম, আকরামেরা পাশেই ছিলেন। কিন্তু ম্যাচটা একা খেললেন ইমরান। ইনিংস শেষে বললেন, ‘আই বোল হোয়েন ইট ম্যাটার্স!’ এমন নেতা আর কয়জন ছিলেন উপমহাদেশে?

নিশুতি রাতে একা ফিরে আসা শহরের রাস্তাগুলোও যেন ইমরান খানের মতো—নির্জন, অথচ দৃপ্ত। গায়ে ক্লান্তির ভার, তবুও মনে পড়ে যান সেই মানুষটা, যিনি ক্লান্তি মানেন না, যিনি পরিশ্রমে বিশ্বাস করেন, অথচ ছুটে চলার পেছনে তার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ থাকে না। থাকে একটা দায়, এক গভীর বোধ, এক অনিবার্য তাড়না।

ইমরান খান—কেবল নাম নয়, উপমহাদেশের সবচেয়ে ‘কমপ্লেক্স’ চরিত্র। কখনো ক্রিকেট মাঠে, কখনও রমনীমোহন উদ্দাম পার্টিতে, কখনও রাজনৈতিক মঞ্চে, কখনও একা হাসপাতালের বারান্দায়, কখনও রাষ্ট্রযন্ত্রের শীর্ষে, কখনও বা জেলখানায় — তাঁর উপস্থিতি সবসময় চুপচাপ নয়, তবুও প্রবল। তিনি পোস্টারবয়, তিনি বিপ্লবী, তিনি ক্যারিসম্যাটিক নেতা, আবার কখনো নি:সঙ্গ পথিক। যেন নিরন্তর খুঁজে চলেছেন নিজের ‘শ্রেষ্ঠ ভার্সন’টাকে।

অধিনায়ক ইমরানের একটি বিখ্যাত কথা, ‘আমি হারতে শিখিনি। আমি যা ঠিক মনে করি, সেটাই করি। কারণ আমার কাঁধ শক্ত, আমি চাপ নিতে পারি।’ ১৯৯২ সালের সেই সন্ধ্যায় যখন ইনজামামকে মাঠে নামান, তখন তিনি ভাবেননি কে কী বলবে। তিনি জানতেন, তাঁর সিদ্ধান্তেই জিতবে বা হারবে পাকিস্তান। আজও, এত বছর পর, সেই ‘অথরিটি’ শব্দটা উচ্চারণ করলে প্রথম মনে পড়ে ইমরান খানকেই।

বাকি সবাই যখন আরামখানা বেছে নিয়েছে, ইমরান তখনও মাঠে। কেউ হয়তো মেকআপ চেয়ারে বসে ক্যামেরার সামনে ঝলক দিচ্ছে, আর ইমরান হাঁটছেন পরিবর্তনের নেশায়। এটাই তাঁর পার্থক্য। এটাই ‘লিডারশিপ’—যার অর্থ শুধুই শিরোপা জেতা নয়, নিজের সমস্তটা উজাড় করে দেওয়া।

ইমরান জানেন, তার জীবন পোস্টারে বন্দি হওয়ার জন্য নয়। তিনি জানেন, বিশ্বকাপ জেতাও জীবনের সবচেয়ে বড় জয় নয়। তাই তিনি রাজনীতিতে আসেন, একেবারে তৃণমূলে। মাথার ওপর স্যুটেড-বুটেড মানুষের ছায়া ছাড়িয়ে গ্রামের কাঁচা রাস্তায়, লাহোরের অলিগলিতে হাঁটেন—মাঝে মাঝে একেবারে একা।

তার এত অস্থিরতা, এত পরিশ্রম—এসব কিসের জন্য? খ্যাতি? ক্ষমতা? উত্তরটা তিনি নিজেই দিয়েছেন বহুবার—না। এগুলো তাঁর উদ্দেশ্য নয়, শুধুই উপকরণ। তাঁর মূল লক্ষ্য—নিজেকে সম্পূর্ণ করে তোলা, নিজের ভেতরে লুকানো সেই শ্রেষ্ঠ ইমরানকে বের করে আনা।

একবার বলেছিলেন, ‘আমি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চেষ্টা করব নিজের বেস্ট ভার্সনটা হয়ে ওঠার। পৃথিবী যদি সব দিয়ে দেয়, তাও আমি থামব না। কারণ আমার যুদ্ধ আমার নিজের সঙ্গে।’

১৯৮৮ সালে ভারতের বিরুদ্ধে লাহোর টেস্টে বল হাতে মাত্র ১২ ওভারে ৫ উইকেট নিলেন ইমরান। সেদিন আব্বাস, ওয়াসিম, আকরামেরা পাশেই ছিলেন। কিন্তু ম্যাচটা একা খেললেন ইমরান। ইনিংস শেষে বললেন, ‘আই বোল হোয়েন ইট ম্যাটার্স!’ এমন নেতা আর কয়জন ছিলেন উপমহাদেশে?

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link