ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ( আইপিএল) শেষ তিন ম্যাচ ধরে জয়ের দেখা পাচ্ছে না কলকাতা নাইট রাইডার্স। বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের এই দল মূলত ভুগছে ব্যাটিং অর্ডারে। আসরে ইতোমধ্যে সাত ম্যাচ খেলে ফেললেও এখনো একটি শক্ত ব্যাটিং লাইন আপ দাড় করাতে পারেনি দলটি। ফলে প্রায় ম্যাচেই ভেঙে পড়ছে তাঁদের মিডল অর্ডার। এই টুর্নামেন্টে অন্য দল গুলো যেখানে হরহামেশাই দুইশ রান করছে সেখানে সম্মানজন স্কোর করতেই হিমশিম খাচ্ছে কলকাতা।
সবমিলিয়ে এখন অবধি আইপিএলে শাহরুখ খানের দলের চিত্র খুবই হতাশাজনক। সাত ম্যাচ খেলে মাত্র দুইটিতে জয়ের দেখা পেয়েছে দলটি। নেট রান রেটের কারণে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে থাকলেও যেকোনো সময়ই ৭-৮ এ নেমে আসতে পারে তাঁরা। যদিও সাইনরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষের জয় দিয়েই টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল দলটি। কিন্তু তারপর থেকেই ব্যাটিং লাইন আপের দুর্বলতা ভেসে উঠে দলটির।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের টপ অর্ডার বেশ শক্তিশালী। নিতিশ রানা, শুভমান গিল কিংবা রাহুল ত্রিপাঠিরা মোটামুটি প্রতি ম্যাচেই ভালো শুরু এনে দিচ্ছেন। তবে এরপরই হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলে দলটি। আসলে ৪-৫ নম্বরে অ্যাংকর রোল প্লে করার মত ব্যাটসম্যানই খুঁজে পাচ্ছেনা দলটি। যদিও এই কাজটি করার কথা ছিল কলকাতার অধিনায়ক ইয়োন মরগ্যানের। তবে এখন পর্যন্ত সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি অধিনায়ক।
এক্ষেত্রে কলকাতার টিম ম্যানেজম্যান্টের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রথম তিন ম্যাচে যখন একাদশে সাকিব ছিলেন তখন তাঁকে খেলানো হয়েছে ৬-৭ নম্বর পজিশনে। অথচ সাকিব কী কখনোই ফিনিশার ছিলেন? বরং চার নম্বরে কলকাতার অ্যাংকর রোল টা প্লে করতে পারতেন তিনি। তবে হাস্যরসের চূড়ান্ত ঘটলো চতুর্থ ম্যাচ থেকে। সুনীল নারাইন একাদশে আসার পর থেকে তাঁকে খেলানো হচ্ছে চার নম্বর পজিশনে।
নারাইন কী আদৌ ব্যাটসম্যান? কিংবা অলরাউন্ডার? তিনি হয়তো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ পিঞ্চ হিটার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারেন। কলকাতার হয়েই তিনি আগের আসর গুলোতে এই কাজ করেছেন। ওপেনিং এ এসে দ্রুত ২০-২৫ রান করে দিয়েছেন। যেখানে আইপিএলে নারাইনের ক্যারিয়ার গড় ১৫.৮২ সেখানে তাঁর ব্যাটিং অবদান কী এর চেয়ে বেশি কিছু হতে পারে?
তবে কলকাতা পিঞ্চ হিটার নারাইনকে বানিয়ে দিল পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং অর্ডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে চারে খেলানো হচ্ছে তাঁকে। পিঞ্চ হিটাররা দুই-এক ম্যাচে এই ওপরের দিকে নেমে সাফল্য পেতে পারেন, কিন্তু সেটা স্থায়ী সমাধান হতে পারে না।
চার নম্বরের এই পজিশনে এখন অবধি যেই চার ম্যাচে খেলেছে সেখানে রান করেছেন যথাক্রমে ৪,৬,০ এবং ০। ফলে ভালো শুরুর পরেও সুনীল নারাইনকে চারে খেলানোর সিদ্ধান্তের কারণে প্রতি ম্যাচে ভুগতে হচ্ছে দলটিকে। ওদিকে সাপে বর হয়ে এসেছে অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যানের অফ ফর্ম।
ফলে ধ্বসে পড়া ব্যাটিং লাইন আপকে আবার খাঁদের কিনারা থেকে তুলে আনতে হয় ফিনিশার দিনেশ কার্তিক ও এন্ড্রু রাসেলকে। ফলে আর বড় সংগ্রহ হয়ে উঠেনা কলকাতার। ফলে এই ধুকতে থাকা মিডল অর্ডার নিয়ে কলকাতাও ধুকছে টুর্নামেন্টে। এখন প্লে অফ নিশ্চিত করাও তাঁদের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। তবে পরবর্তী ম্যাচ গুলোতে কলকাতার সমাধান কী হতে পারে সেটা নিয়ে একটু ভাবা যাক।
মিডল অর্ডারে নারাইনের জায়গায় সাকিবকে নিয়ে আসতে পারে দলটি। অ্যাংকর রোল প্লে করার জন্য এখন কলকাতা দলে তার চেয়ে অভিজ্ঞ কেউ নেই। আর বল হাতে নারিন যা করেন সাকিব নিশ্চই তাঁর চেয়ে কম কিছু করেননা। নিতিশ, রাহুলদের দুর্দান্ত শুরুর পর সাকিব মিডল অর্ডারের হাল ধরলে ভালো ভীতই গড়া সম্ভব। শেষে দীনেশ কার্তিক, আন্দ্রে রাসেলদের ঝড়ো ব্যাটিং এ ভর করে বড় সংগ্রহে পৌছাতে পারে দলটি।
অবশ্য যেই টিম ম্যানেজম্যান্ট সাকিবকে ফিনিশার বানিয়ে দিচ্ছে, নারাইনকে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান বানিয়ে দিচ্ছে তাঁদের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলটাও দু:সাহসিক হয়ে যায়!