সহস্র প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে জোহানেসবার্গে কামব্যাক করা হাফ সেঞ্চুরির সৌরভ গাঙ্গুলি। লর্ডসের বারান্দায় জার্সি ওড়ানো সৌরভ গাঙ্গুলি। চোখে চোখ রেখে লড়াই করবার কি দুর্বার মানসিকতা! লড়াকু সৈনিক সৌরভ তো একদিনে হয়ে ওঠেননি। শুরুটা তবে কোথায়?
রক্তমাখা উইকেটে দাঁড়িয়ে ছোকড়া গাঙ্গুলি অকুতোভয় হওয়ার রসদ জরো করেছেন। সকল প্রতিকূলতা আর খাদের কিনারা থেকে ক্যারিয়ারকে নতুন মোড় দেওয়া সম্ভবত সেদিনই শিখেছিলেন। সেই দিনটি তৈরি করে দিয়েছিল অবিসংবাদিত এক সেনানির ইস্পাত কঠিন মেরুদণ্ড। সবুজ গালিচার দাদা হয়ে ওঠার শুরু সেদিন থেকেই।
সৌরভ তখন ছোকড়া। কেবলই ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ হয়েছে তাঁর। পাকিস্তান অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে যুব টেস্ট সিরিজে ১-১ সমতা। ওয়াংখেড়েতে গড়াল সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ। পাকিস্তানের নাঈম খান ও আতাহার লায়িক ওই বয়সেই তুলছিলেন গতির ঝড়।
প্রথম ইনিংসে ৩৪৮ রান নিয়ে জয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছিল পাকিস্তানের যুবারা। জয়ের পায়তারা করতে শুরু করে মঈন খানের দল। কিন্তু সেই জয়ের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। তবে তারও আগে ওয়াংখেড়ের বাইশ গজ দেখেছিল তাজা রক্ত।
পাকিস্তানের বোলারদের তোপের মুখে মাত্র ২২ রানে নেই ভারতের দুই উইকেট। ক্রিজে হাজির তখন ভারতের অধিনায়ক যতীন পরাঞ্জাপে। হুট করে গুড লেন্থ থেকে লায়িকের একটা বল লাফিয়ে উঠে আঘাত করল যতীনের মুখে। মুহুর্তে ধূসর মাটিতে লেপ্টে গেল তাজা লাল রঙ। সবাই ধরাধরি করে যতীনকে নিয়ে গেল মাঠের বাইরে।
শূন্য উইকেটে তখনও মহারাজা না হওয়া সৌরভ গাঙ্গুলির আগমন। পায়ের নিচে রক্তের দাগ তখনও শুকায়নি। একটা ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে দাঁড়িয়ে ১৮ পেরুনো একটা ছেলে। চারিদিকে ভয়ের গুমোট আবহাওয়া। পেছন থেকে মঈন খান বলছেন, ‘কাম অন লায়িক, ওর উইকেটও নিয়ে নাও। এই ভীতুকেও মারো’। গলা তখন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ার কথা। অন্তর জুড়ে ছোটাছুটি করবে তখন অজানা এক আতংক।
কিন্তু না, সতীর্থ সেনানির পতিত রক্তের উপর দাঁড়িয়ে সৌরভ সেদিন লড়াই করলেন। এক অনবদ্য শতক হাঁকিয়ে মাঠ ছাড়লেন। ম্যাচ বাঁচালেন দৃঢ় মানসিকতার জোরে। আহত সতীর্থের প্রতিশোধ নিলেন ব্যাট হাতে। সেদিনটি রঞ্জি ট্রফিতে জায়গা করে দিল। বছর দুই বাদে ভারত দলেও নিজেকে খুঁজে পেলেন।
নব্বইয়ে সেই শীত তৈরি করে দিয়েছিল অটুট এক বরফ খণ্ড। ঠিক অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে থাকা বরফ খণ্ডের মত। যার বাইরেটা দেখতে সাদামাটা কিন্তু আসল দৃঢ়তা লুকিয়ে থাকে স্বচ্ছে নীল এক সমুদ্দুরে। সেই দৃঢ়চেতা সৌরভই গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে করেছিল সুরভিত।