মার্ক ওয়াহকেও কি স্লেজিং করে বাকরুদ্ধ করা সম্ভব? কথার লড়াইয়ে তাঁর চেয়ে ঝাঁঝাল কেই বা হতে পারে। স্লেজিংকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। স্লেজিংয়ের ক্ষেত্রে দুই জমজ ভাই মার্ক ওয়াহ ও স্টিভ ওয়াহ যেন অজিদের থেকেও একটু বেশিই অজি। বিশ্বের বহু নামিদামি খেলোয়াড়রা মাঠে তটস্থ থাকতেন তাদের ভয়ে। অথচ বর্ষীয়ান তারকা মার্ক ওয়াহকেই কথার লড়াইয়ে নীরব দর্শক বানিয়ে দিয়েছিলেন এক অভিষিক্ত ইংলিশ পেসার।
সময়টা ২০০১ সাল, দ্য লন্ডন ওভালে চলছে অ্যাশেজের পঞ্চম টেস্ট। ক্যারিয়ারের একদম শেষ প্রহরে দাঁড়িয়ে তখন কিংবদন্তি মার্ক ওয়াহ। অপরদিকে, ইংল্যান্ডের হয়ে সবে সেই ম্যাচ দিয়েই ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে পা রেখেছিলেন জেমস ওরমন্ড। এই মঞ্চেই প্রদশিত হল এক বিরল নাটকীয়তা।
মার্ক ওয়াহ ব্যাট হাতে যেমন ক্ষুরধার ছিলেন, তেমনি কথার লড়াইয়েও ছিলেন সুচতুর। ক্যারিয়ারের শেষ অ্যাশেজ টেস্ট খেলতে নেমে বেশ সাবলীল ভাবেই ব্যাট করছিলেন তিনি। বড় সংগ্রহ গড়ার পথে হঠাৎ তাঁর রসবোধের শখ জেগেছিল হয়তবা। নবাগত ওরমন্ডকে স্লেজিং করে মানসিক চাপে রাখতে চাইলেন তিনি। ওরমন্ডকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘তুমি এখানে কি করো? ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার মতো যোগ্যতা তো তোমার নেই।’
কথাটি যেন তীরের মতো আঘাত করল ওরমন্ডকে। তবে মুখে হাসি আর মনে দৃঢ়তা দিয়ে উপস্থিত বুদ্ধির শতভাগ ব্যবহার করলেন তিনি। প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, ‘হয়তবা নেই, কিন্তু অন্তত আমি আমার পরিবারের সেরা খেলোয়াড়।’
কাকতালীয়ভাবে, ঐ মুহূর্তে ক্রিজের অপর প্রান্তে ব্যাটিংয়ে ছিলেন স্টিভ ওয়াহ। মার্কের জমজ বড় ভাই, আরেক মহীরুহ। খ্যাতি এবং অর্জনে যিনি বেশ খানিকটা এগিয়ে। কাল্পনিক সুপারহিরোদেরও তো দুর্বলতা থাকে। মার্ক ওয়াহও তো দিনশেষে রক্তে-মাংসে গড়া মানুষই। ৩৬ বছর বয়সী মার্ক আর তাই জবাবের ভাষা পেলেন না। জবাবটা যে বেশ তীক্ষ্ণ জখমই করেছিল তার পাথুরে হৃদয়ে।
পিচের এক প্রান্তে যেখানে ছিল অভিজ্ঞতার ঔদ্ধত্য, তেমনি অন্য প্রান্তে ফুটে উঠেছিল নবীনতার সাহস। সেই সাহসেই স্লেজিং শিল্পের অন্যতম বিখ্যাত শিল্পী মার্ককেই মুদ্রার ওপর পিঠ দেখিয়েছিলেন ওরমন্ড। ক্যারিয়ারে মাত্র দু’টি টেস্টই খেলেছিলেন ওরমন্ড, শুধু এই কথার লড়াই দিয়েই জায়গা করে নিয়েছেন ক্রিকেট ইতিহাসে।