টি-টোয়েন্টিতে কাঙ্খিত বিপ্লব

সেই গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পরেই শোনা যাচ্ছিল এই ফরম্যাটে একটা বিরাট পরিবর্তন আসতে চলেছে। তবে দেখতে দেখতে আরেকটা বিশ্বকাপ চলে এলেও তেমন কিছুই হয়নি। এখনো সেই মোটামুটি একই দল, একই পারফরম্যান্স। তবে এবার জোর গুঞ্জন, জিম্বাবুয়ে সফরেই পাল্টে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি দলের দৃশ্য।

এ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেই বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে একটা বিপ্লব আনতে চায়। আর সেই বিপ্লবের অংশ হিসেবেই এবার দলের অধিকাংশ সিনিয়রদের ছেঁটে ফেলা হচ্ছে টি-টোয়েন্টি দল থেকে। সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসান সোহানের হাতে দায়িত্ব দিয়ে সাজানো হচ্ছে তরুণ একটা টি-টোয়েন্টি দল।

বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র জানাচ্ছে, বিপ্লবের মঞ্চ হিসেবে জিম্বাবুয়ে সিরিজকেই বেছে নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টি দলের সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা হলো অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যাটসম্যান হিসেবে আরও আগেই সেই রিয়াদকে দেখা যায় না। শেষ ১০ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ২২ রানের ইনিংস। এছাড়া এই ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচও ভীষণ প্রশ্নবিদ্ধ।

ফলে এমন একজনকে আর টি-টোয়েন্টি দলে বহন করতে চাইছেনা বাংলাদেশ। ফলে প্রথমেই অধিনায়কত্ব হারানোর কথা এই রিয়াদের। খুব সম্ভবত জিম্বাবুয়ে সিরিজেই তা হতে যাচ্ছে। বিশ্বকাপের আগেই এই ফরম্যাটেও সাকিবের হাতে অধিনায়কত্ব তুলে দিতে চায় বাংলাদেশ। তবে জিম্বাবুয়ে সিরিজে তিনি ছুটিতে থাকবেন বলে এই সিরিজে নতুন অধিনায়কও দেখা যেতে পারে।

অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। এছাড়া টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও তাঁকে নিয়ে আছে বড় পরিকল্পনা। সেজন্যই এই ফরম্যাটে সাকিবের ডেপুটি হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে নুরুল হাসান সোহানকে। ফলে এবারের এশিয়া কাপ কিংবা বিশ্বকাপের মত আসর গুলোতে বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক হিসেবে থাকবেন নুরুল হাসান সোহান।

ওদিকে জিম্বাবুয়ে সিরিজে আরো বড় দায়িত্বও পড়তে পারে সোহানের কাঁধে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে যদি অধিনায়ক থেকে সরানো হয় তাহলে এই সিরিজে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবে কে এমন প্রশ্ন আসবে। কেননা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাকিবের খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে এই সিরিজে সহ-অধিনায়ক হিসেবে বিবেচিত সোহানকেই অধিনায়ক হিসেবে দেখা যেতে পারে।

নুরুল হাসান সোহান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব বেশি অভিজ্ঞ নন। তবে সম্প্রতি তাঁর ব্যাটিং এর উন্নতি স্পষ্ট। এছাড়া কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে সোহানকে টি-টোয়েন্টি দলে ব্যবহার করতে চায় টিম ম্যানেজম্যান্ট। সেজন্যই সোহানকে দেয়া হচ্ছে এমন বড় দায়িত্ব। শুধু অধিনায়কত্ব নয়, দলেও আসছে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন।

প্রথমত এতদিন পর্যন্ত তামিমের খেলা না খেলা নিয়ে একটা আলোচনা থাকতই। তবে তিনি অবসর ঘোষণা করায় সেই আলোচনার একটা ইতি হল। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অধিনায়কত্ব হারানোর পর হয়তো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আর খুব বেশি বিবেচিত হবেন না। গত দুই তিন বছরে ব্যাট হাতে তাঁর পারফর্মেন্সের কারণেই এমন সিদ্ধান্তে আসতে চায় টিম ম্যানেজম্যান্ট।

ওদিকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মুশফিকুর রহিমও খুব বেশি নিয়মিত খেলছেন না। এছাড়া তাঁর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচও এই ফরম্যাটে খুব একটা সুখকর না। সেজন্য এই ফরম্যাটে মুশফিককেও আর বিবেচনা না করা হতে পারে। হয়তো জিম্বাবুয়ে সিরিজেও তাঁকে ছাড়াই সাজানো হবে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার।

সেক্ষেত্রে হয়তো আফিফ হোসেন কিংবা ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বিদের সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের উপরের দিকে খেলতে দেখা যাবে। ফলে মুনিম, লিটন, আফিফ, রাব্বি, সোহানদের নিয়ে একটা ইয়াং ব্যাটিং লাইন আপ গড়ে উঠতে চলেছে।

এছাড়া বোলিং বিভাগে অবশ্য খুব বেশি পরিবর্তনের সুযোগ নেই। পেস ডিপার্টমেন্টে তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম বেশ ভালো করছেন। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমানও আছে। ওদিকে স্পিন বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দিবেন সাকিব আল হাসান। সাথে নাসুম আহমেদ ও শেখ মেহেদী তো আছেনই।

সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একটা কাঙ্খিত বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। তবে এই আলোচনা গুলো এখনো টিম ম্যানেজম্যান্ট কিংবা বিসিবির টেবিলেই ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই একসাথে বাংলাদেশ মাঠে এতগুলো পরিবর্তন আনতে পারবে কিনা সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link