নয়া রত্নের হুংকার

বয়স মাত্র ২২ বছর। সময় গড়াবে, অভিজ্ঞতা সঞ্চার করবেন, আরো নিখুঁত হবেন, একের পর এক মাস্টার ক্লাস ইনিংস উপহার দিবেন শফিক। বলা যায় পাকিস্তান ক্রিকেট আরেকটা তারকার সন্ধান পেয়েছে।

আবদুল্লাহ শফিক, পাকিস্তান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। অথচ, ক্যারিয়ারের মাত্র ষষ্ঠ টেস্ট খেলছেন। সামান্যতম এই সময়ে নিজের জাত চেনাচ্ছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসে তিনি একমাত্র ব্যাটার যার প্রথম শ্রেণি ও টি-টোয়েন্টি অভিষেকে সেঞ্চুরি রয়েছে।

মাত্র তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেই অভিষেক হয়েছিল জাতীয় দলে। এর আগেই তো নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। কয়েদ-ই-আজম ট্রফিতে ২০১৯-২০ মৌসুমে ৬৮.১২ গড়ে তুলেছিলেন ৫৪৫ রান। সামান্যতম অভিজ্ঞতার পরও যে তাঁর অভিষেক হয়ে যাওয়াটা ফ্লুক নয় – সেটা প্রমাণ করে চলেছেন প্রতিনিয়তই।

জাতীয় দলে অভিষেক হওয়ার পর ৬ ম্যাচের ১১ ইনিংসে বেশ ধারাবাহিকই বলতে পারেন। অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০২১ সালে চট্টগ্রাম টেস্ট। সে ম্যাচে ৫২ ও ৭৩ রানের ইনিংসে দিয়েছিলেন আগমনী বার্তা।

এরপর ২৫, ৪৪, ১৩৬*, ১৩, ৯৬, ৮১, ২৭, ১৩… এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ১৬০ রান, গল টেস্টে। সাথে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। নিশ্চয়ই তিনি পাকিস্তান ক্রিকেটের নেক্সট বিগ থিঙ হওয়ার সামর্থ্য রাখেন।

১১ ইনিংসে একবারো সিঙ্গেল ডিজিটে আউট হননি। সর্বনিম্ন স্কোর ১৩! চতুর্থ ইনিংসে শফিক যেন এই সময়ের সেরা ব্যাটারদের একজন। ধৈর্য্য, সহ্য সবই আছে। ম্যাচের কন্ডিশন বুঝে ব্যাট করা ক্ষমতাও ধারণ করেন। চতুর্থ ইংনিংসে তিনি করেছেন যথাক্রমে – ৭৩, ৯৬, ২৭ ও ১৬০*।

গল টেস্টে পাকিস্তান দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করেছে। দুই দলের প্রথম ইনিংসেই যেনো ম্যাচটার ফলাফল নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল। স্পিনারদের দাপুটে বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে ছিল অনেকটাই। কিন্তু প্রথম ইনিংসে লিড নিতে না পারলেও বাবর আজমের ব্যাট রান ব্যবধান কমিয়েছে অনেকটাই। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসেও লঙ্কান ব্যাটাররা আরো দায়িত্বশীল হয়ে ব্যাট করেছেন। প্রথম ইনিংসে ২১৮ রান তুলতে সাতবার হামাগুড়ি দেওয়া পাকিস্তানে ৩৪১ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় তারা।

শেষ পর্যন্ত জয়টা পাকিস্তানেরই হলো। বলতে পারেন আবদুল্লাহ শফিকের ধৈর্য্যের কাছেই হেরেছে শ্রীলঙ্কা। তাদের করা ৭৬৪ ডেলিভারির ৪০৮ টাই মোকাবেলা করেছে শফিক। আর দলের প্রয়োজনের ৩৪১ রানের ১৬০ রানই এসেছে তার ব্যাট থেকে।

বল মোকাবেলার হিসেবে শফিকের ৪০৮ বলের ইনিংস টেস্ট ইতিহাসের (চতুর্থ ইনিংসে) পঞ্চম দীর্ঘতম। আর মাত্র পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে তিনি ৪০০ বল খেলেছেন। এই তালিকায় যারা আছেন তাঁরা সবাই অবিসংবাদিত কিংবদন্তি।

  • ৪৯২ বল – মাইক আথারটন (ইংল্যান্ড)
  • ৪৬২ বল – হাবার্ট সাটক্লিফ (ইংল্যান্ড)
  • ৪৪৩ বল – সুনীল গাভাস্কার (ভারত)
  • ৪২৫ বল – বাবর আজম (পাকিস্তান)
  • ৪০৮ বল – আবদুল্লাহ শফিক (পাকিস্তান)

ক্যারিয়ারের ছয় টেস্ট পর সর্বোচ্চ রানেও আছেন আব্দুল্লাহ শফিক।

  • ৯১২ রান – সুনীল গাভাস্কার (১২ ইনিংস)
  • ৮৬২ রান – স্যার ডন ব্রাডম্যান (১২ ইনিংস)
  • ৭৩০ রান – জর্জ হেডলি (১২ ইনিংস)
  • ৭২০ রান – আবদুল্লাহ শফিক (১১ ইনিংস)

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তানের করাচি টেস্টের কথা অবশ্যই মনে আছে আপনাদের? প্রথম ইনিংসে ১৪৮ রানে অলআউট হওয়ার পর পাকিস্তান কিভাবে ৫০৮ রানের অকল্পনীয় লক্ষ্যে ছুটে চলেছিল?

প্রথম ইনিংসের চেয়ে শেষ ইনিংসে প্রায় তিন গুণ বেশি রান তুলেছিল পাকিস্তান। বাবর আজমের ১৯৬ রানের ইনিংসের আগে এই শফিক খেলেছিলেন ৯৬ রানের ইনিংস। বল মোকাবেলা করেছিলেন ৩০৬টি! সেটি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের মাত্র পঞ্চম টেস্ট ইনিংস।

বয়স মাত্র ২২ বছর। সময় গড়াবে, অভিজ্ঞতা সঞ্চার করবেন, আরো নিখুঁত হবেন, একের পর এক মাস্টার ক্লাস ইনিংস উপহার দিবেন শফিক। বলা যায় পাকিস্তান ক্রিকেট আরেকটা তারকার সন্ধান পেয়েছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...