রেড ডেভিলদের নিজস্ব জিদান

জিদান ইকবাল, ফুটবলার কথাটা শুনলে মাথায় যে প্রশ্নটা সবার প্রথম আসে তা হল - সে কি জিনেদিন জিদানের কেউ? আর কেউ না হলেও ফুটবল কিংবদন্তির নামের সাথে যার নামের প্রথম ভাগের মিল আছে তাঁর সম্পর্কে অবচেতন মনে জেগে উঠে নানান রকমের প্রত্যাশা।

জিদান ইকবাল, ফুটবলার কথাটা শুনলে মাথায় যে প্রশ্নটা সবার প্রথমে আসে তা হল – সে কি জিনেদিন জিদানের কেউ? আর কেউ না হলেও ফুটবল কিংবদন্তির নামের সাথে যার নামের প্রথম ভাগের মিল আছে তাঁর সম্পর্কে অবচেতন মনে জেগে ওঠে নানা রকমের প্রত্যাশা। আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একাডেমির তারকা, মাঝ মাঠে খেলা এই ফুটবলার আকাশচুম্বী প্রত্যাশা সামাল দিয়ে যে নিজেকে মেলে ধরতে একটুও অপারগ না, তার দেখা মিলেছে ২০২২-২৩ প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি ম্যাচে।  

উনিশ বছর বয়সী এই তরুণ উদীয়মান ফুটবলার ইতোমধ্যে নতুন ম্যানেজার এরিক টেন হাগকে মুগ্ধ করেছেন। লিভারপুল এবং মেলবোর্ন ভিক্টরির বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে তাঁর খেলা দেখে রেড ডেভিল সমর্থকরা তাঁর ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। ভবিষ্যতেও যদি তিনি এভাবে খেলতে থাকেন তবে জিনেদিন জিদানের সাথে নামের মিলের জন্য নয় বরং জিদান ইকবাল নিজের ফুটবলীয় দক্ষতার জন্যই তাবৎ ফুটবল দুনিয়ায় পরিচিত হবেন।

স্থানীও দল সেল ইউনাইটেডে খেলার সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্কাউটদের নজরে আসেন ইকবাল। কিংবদন্তি ক্লিফ ট্রেনিং গ্রাউন্ড যেখানে রায়ান গিগস এবং ডেভিড ব্যাকহামের মত খেলোয়াড়দের পরিচর্যা করা হয়েছে তাঁকে সেখানে নেওয়া হয়।

মাত্র নয় বছর বয়সে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একাডেমিতে যোগদান করার পর থেকেই সকলের মনোযোগ কাড়তে থাকেন এই তরুণ ফুটবলার। নামের কারনে নয় বরং নিজের প্রতিভা দিয়েই সমর্থকদের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেন মূল দলে জায়গা পাওয়ার অনেক আগে থেকেই। গত ডিসেম্বরে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইয়াং বয়েজের বিপক্ষে খেলার শেষ অংশে বদলি হিসেবে নেমে মূল দলে অভিষেক হয় এই বিরল প্রতিভার। 

প্রতিনিয়ত তার খেলার অংশের ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, যা রেড ডেভিল সমর্থকদের তার ফুটবলীয় দক্ষতা এবং ক্লাবের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী করেছে। সর্বশেষ সমর্থকরা একাডেমির কোন ফুটবলারের ব্যাপারে এমন উন্মাদনা দেখিয়েছিল পল পগবার সময়। 

শুধু তাকে ক্লাবে ধরে রাখার জন্য নয় বরং ফুটবলীয় সক্ষমতার কারণে ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করার পর টেন হাগ জিদান ইকবাল এবং আরেক উদীয়মান ফুটবলার চার্লি স্যাভেজকে প্রাক মৌসুম প্রস্ততিমূলক সফরের দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। মেলবোর্ন ভিক্টরির বিপক্ষে ৪-১ জয় পাওয়া ম্যাচে জিদান ইকবালের ড্র্যাগ ব্যাক এবং টার্ন করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবানলের মত ছড়িয়ে পরে। 

একজন বুদ্ধিমান খেলোওয়াড় যে বল নিজের পায়ে রাখতে পারে, যার প্রতিপক্ষকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে এবং খেলার সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এই গুণাবলীর কারণেই জিদান ইকবাল টেন হাগের নজরে আসেন।

জিদান ইকবাল বল পায়ে রেখে বিচক্ষণতার সাথে সিধান্ত নেন অযথা ড্রিবলিং করে প্রতিপক্ষের কাছে বল হারান না। এটাই টেন হাগ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলার পদ্ধতি হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তাই ইকবাল তার জন্য এত মূল্যবান। এই মাঝ মাঠের খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের রক্ষণকে বোকা বানিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করে তার দলকে এনে দেন গোল। রেড ডেভিলদের যুব দলের হয়ে তিনি বেশ কিছু গোল করেছেন যেখানে তার গতি এবং ড্রিবলিং এর কাছে পাত্তা পায়নি প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা। 

ইকবালের নির্ভীকতা সিনিয়র দলের খেলোয়াড়দেরকে মুগ্ধ করেছে। নিজের কাছে আত্মবিশ্বাসের সাথে বল রেখে সতীর্থদের জন্য জায়গা তৈরি করে দিতে পারেন যা দলকে চাপ মুক্ত রাখে এবং খেলাকে গতিশীল করে। বয়সভিত্তিক দলে অনেকেই এমন ভাবে খেলতে পারলেও মূল দলে এসে অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলেন কিন্তু সাহসী ইকবাল এক্ষেত্রে অবিচল। সর্বোচ্চ পর্যায়ে এসেও তিনি নিজের খেলাটা খেলতে জানেন।

লিভারপুলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমে নিজের সেরাটাই দিয়েছেন। বার বার অল রেড খেলোয়াড়দের দ্বারা বেষ্টিত হয়েছিলেন কিন্তু তবুও বল হারাননি। প্রতিপক্ষকে নিজের দিকে টেনে এনে সতীর্থদের জন্য ফাঁকা জায়গা তৈরি করেছেন। 

পাকিস্তানি বাবা এবং ইরাকী মায়ের সন্তান ইকবাল, ২০২১ সালের এপ্রিলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে প্রথম পেশাদার চুক্তি করেন। এই বছরের জুন মাসে তাকে আবার দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে আবদ্ধ করে রেড ডেভিলরা যা নিশ্চিত করছে ২০২৫ সাল অবধি তিনি ওল্ড ট্রাফোর্ডে থাকবেন এবং তা আরও ১২ মাস বাড়ানোর জন্য ধারা রাখা হয়েছে।

ব্রিটিশ এশিয়ান এবং ইংল্যান্ডের বড় ছয় দলের একটির খেলোয়াড় – এই বিরল ঘটনা তার বিপণনযোগ্যতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্ব বিখ্যাত ক্রীড়া পোশাক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পুমা তাঁর সাথে চুক্তি করেছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও ইরাক – তিন দেশের যে কোনটির হয়ে খেলার উপযোগী ছিলেন। কিন্তু মায়ের দেশ ইরাকের প্রতিনিধিত্ব করার সিধান্ত নেন ইকবাল।

ইকবাল টেন হাগের জন্য যে জিদান একজন আদর্শ একজন খেলোয়াড় তাতে সন্দেহ নেই। তবে ৫৫ নম্বর জার্সিধারী এই ফুটবলারের মূল একাদশে জায়গা পাওয়াাটা বেশ দুস্কর। আপাতত ধারে অন্য কোন দলে খেলতে যাওয়াটাই তার উন্নয়নের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে টেন হাগ তাঁর উপর যেমন মজেছেন, তাতে বলা যায় না মূল দলের অংশ হিসেবে তাকে তিনি চাইলে রেখেও দিতে পারেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...