মোহাম্মদ সিরাজ যেটা করেন, সেটা আদৌ স্লেজিং নয়। ক্রিকেটে আগ্রাসন কিংবা স্লেজিং আর অভদ্র আচরণের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। লম্বা সময় ধরে বিরাট কোহলি স্লেজিং করেছেন, আগ্রাসন দেখিয়েছেন – কিন্তু, সেটা কখনওই অভদ্রতার মাত্রা ছাড়ায়নি। কিংবা শুরুটা ছাড়ালেও পরিণত বয়সে এসে কোহলি একটা মধ্যবর্তী লাইন খুঁজে পেয়েছেন।
আগ্রাসনই কোহলির চালিকাশক্তি। সেন্ড অফ-সহ অন্যান্য সব বিচিত্র সেলিব্রেশন তো ক্রিকেটেরই সৌন্দর্য্য বাড়িয়েছে। কিন্তু, সিরাজের মধ্যে বাড়াবাড়ি আছে। দেখে মনে হতে পারে তিনি অ্যাটেনশন সিকার, স্রেফ আলোচনায় থাকতে কাজগুলো করেন।
সিরাজের আচরণগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্যতা নেই একদম। স্লেজিংও তো একরকম যোগাযোগ। কিন্তু, সেই যোগাযোগটা ঠিক মত দাঁড়াচ্ছে না। ফলে একটা মিথ্যার মায়াজাল সৃষ্টি হচ্ছে। এটা এক ধরণের আচরণগত সংকট, যা নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার, যেটা শুধরানো দরকার।
যশস্বী জয়সওয়াল আর মিশেল স্টার্ক যেটা করছেন আজকাল, সেটা কথার লড়াই। কিংবা ঋষাভ পান্ত উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে যা বলেন বা করেন – সেগুলোকে বিনোদনের খাতায় রাখা যায়।
কিন্তু, সিরাজ কি করছেন? তিনি ব্যাটারের দিকে বল ছুড়ে মারছেন, কোনো রকম উত্তক্ত হওয়া ছাড়াই বাজে কথা বলছেন, মেজাজ হারাচ্ছেন। পুরো বিষয়টার মধ্যে একটা নোংরামি আছে, যেটাকে ঠিক স্লেজিংয়ের সৌন্দর্য্য বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
এই বিষয়টা তাঁর বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও খাটে। নিজের আবেগের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রন নেই। ফলে, বল হাতেও তাঁর ওপর সব সময় ভরসা রাখা যায় না। যেটা জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি বা টি-টোয়েন্টির ক্ষেত্রে আর্শদীপ সিংয়ের ওপর রাখা যায়।
উপমহাদেশের মানুষ মাত্রই এই আবেগের কমপ্লেক্সে ভুগে থাকে। এর পেছনে আর্থো-সামাজিক, অর্থনৈতিক অনেক কারণই আছে। কিন্তু, ক্রিকেট মাঠ তো এই কমপ্লেক্স দেখানোর জায়গা নয়।
এখানে বিরাট কোহলির নিজেরও একটা ভূমিকা আছে। বিরাট কোহলি সব সময়ই সিরাজকে স্বাধীনতা দিয়েছেন, বিশেষ করে আইপিএলে। যার জন্য সিরাজের মধ্যে অতি-জাতীয়তাবাদ কাজ করে।
ক্রিকেট অবশ্যই জাতীয়তাবাদী খেলা, সেভাবেই খেলতে হবে। কিন্তু সেটাও ওই স্লেজিং আর অভদ্রতার মাঝের চিকন লাইনটা মাথায় রেখে – এই লাইনটা কেউ যদি ধরতে না পারে তাহলে তাঁর সাহায্যের দরকার আছে।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু এই বিষয়টা ধরতে পেরেই হয়তো সিরাজকে ছেড়ে দিয়েছে। যাকে বারবার অভদ্রতার লাইসেন্স দিতে হয়, তাঁর সাথে সংসার বেশিদূর না গড়ানোই ভাল। ভরত অরুণ থাকলে সিরাজ হয়তো জাতীয় দলেও জায়গাটা খোয়াতেন।
আচরণগত সংকটেই বিনোদ কাম্বলি কখনও শচীনের কাছে যেতে পারেননি। অথচ, অনেকেই বলেন বিনোদের প্রতিভা শচীনের চেয়ে বেশি ছিল। সেই পরিণতিই কি বরণ করবেন মোহাম্মদ সিরাজ? নাকি, গুজরাট টাইটান্সে আশীষ নেহরার হাতে পড়ে নিজেকে শুধরে নেবেন?