ছক্কা হাঁকালে যেকোনো ব্যাটসম্যানের ঠোঁটের কোনেই এক চিলতে হাসি ফুটতে বাধ্য। আর সেই বলটা যদি চলে যায় গ্যালারির বাইরে তাহলে তো কথাই নেই। কেভিন ও ব্রায়েনেরও ফুটেছিল সেদিন। কিন্তু, সেটা ম্লান হতে সময় লাগেনি। কারণ, সেই ছক্কার পর বলটা সোজা গিয়ে পড়েছিল তাঁর গাড়ির জানালায়। বাকিটা আর আর নিশ্চয়ই বলে দিতে হয় না!
ভেঙে চৌচির হওয়ার জানালা সমেত গাড়িটা নিয়ে কেভিন গেলেন গাড়ির দোকানে। সেখান থেকে ফিরলেন আবার হাসিমুখে। কারণ, টয়োটা কোম্পানি তাঁর গাড়ির কাজ সারাতে কোনো অর্থই নেয়নি। দিনভর টুইটারে এই ছক্কা কাণ্ড নিয়ে যে পরিমান মার্কেটিং হয়েছে – তাতে টয়োটার সেদিনের বিনিয়োগ তো একেবারেই নস্যি।
কেভিন ও’ ব্রায়েনের যেকোনো কিছুই বরারবই এমন বিরাট। ক্রিকেটের ছোট্ট দেশ আয়ারল্যান্ডের তিনি বিরাট এক নাম। কারো কারো চোখে দেশটির ইতিহাসেরই সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। বড় আসরে বড় বড় সব ইনিংস খেলার ক্ষেত্রেও তাঁর জুড়ি নেই।
তাঁর জন্মও হয়েছিল আয়ারল্যান্ড ক্রীড়াঙ্গনের এক বিরাট পরিবারে। বাবা ব্রেন্ডেন আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দলের হয়ে ৫২ টি ম্যাচ খেলেছেন। তাঁর বড় ভাই নিয়াল ও আইরিশদের হয়ে খেলেন। বোন কিয়ারাও খেলেছেন আয়ারল্যান্ড নারী হকি দলের হয়ে। তবে পরবর্তীকালে এই পরিবারের সবচেয়ে বড় নাম হয়ে উঠেন এই ছোট ছেলেটি। যিনি হয়ে উঠবেন আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী।
আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় জয়গুলোর নায়ক এই কেভিন ও’ব্রায়েন। আইরিশ ক্রিকেটের অনেক ইতিহাস তৈরি হয়েছে কেভিনের ব্যাটে। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর সেঞ্চুরির পর আইরিশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় বনে যান এই ক্রিকেটার। ৫০ বলে করা তাঁর সেই সেঞ্চুরি কোনো বিশ্বকাপ ম্যাচের দ্রুততম সেঞ্চুরি। সেই সেঞ্চুরিতে ভর করে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় আইরিশরা। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষেও তাঁর ঝরো ইনিংসে ভর করে ড্র করে আইরিশরা। সেই ম্যাচে ব্র্যায়েন ৪৭ বলে করেন ৮৪ রান।
এছাড়া আয়ারল্যান্ডের হয়ে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির মালিকও এই ব্যাটসম্যান। পাকিস্তানের বিপক্ষেই ক্যারিয়ারের ও দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেন ব্র্যায়েন। ডাবলিনে সেই ম্যাচে ২১৭ বলে খেলেন ১১৮ রানের এই মহাকাব্যিক ইনিংস। ছোট দলের বড় তারকা বলতে যা বোঝায় – তিনি ঠিক তাই!
আয়ারল্যান্ডের হয়ে ২০০৬ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তাঁর। এরপর থেকে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি কিংবা টেস্ট, সব রকম ফরম্যাটেই আয়ারল্যান্ডের নিয়মিত মুখ ও’ব্রায়েন। আর সবচেয়ে বড় কথা, সব ফরম্যােটেই তিনি আইরিশদের ইতিহাসের সেরাদের কাতারে।
সবমিলিয়ে কেভিন ও’ব্রায়েন আইরিশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। আইরিশরা যত বার তাঁদের ক্রিকেটের সোনালী অতীত হাতরে বেড়াবে ততবার স্বজোরে উচ্চারিত হবে ব্র্যায়েনের নাম। তিনি উচ্চারিত হবেন ১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড বধের গল্পে, তাঁকে মনে রাখা হবে ডাবলিনে কোনো আইরিশ ব্যাটসম্যানের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিতে, তিনি থাকবেন পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই বিধ্বংসী ইনিংসে। যুগ যুগ পরেও যতদিন আইরিশ ক্রিকেটের গল্প শোনা যাবে, ততবার তিনি ফিরে আসবেন পূর্নিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে।