অবজ্ঞা, অগ্রাহ্য, অনীহা, অব্যবস্থাপনায় ঠাসা ভারত

বিনা বাক্য ব্যয়ে অপেক্ষাকৃত খর্বশক্তির দলগুলোকে অগ্রাহ্য করবার, তাচ্ছিল্য করবার এর থেকে দারুণ উদাহরণ নিশ্চয়ই সৃষ্টি করার উপায় নেই।

বৃষ্টি যেন ভারতের ক্রিকেট অবকাঠামোর মুখোশ খুলে দিল। পরপর দু’টো ঘটনা একেবারে চোখের সামনে দেখিয়ে দিচ্ছে ভারত যতটা গর্জে ততটা বর্ষে না। কানপুর টেস্টের তৃতীয় দিনের কোন প্রকার বৃষ্টিপাত হয়নি। দিনের অর্ধেক সময় সকলে থেকেছে অপেক্ষায়। অবশেষে এক প্রকার বাধ্য হয়ে আম্পায়াররা তৃতীয় দিনের খেলাও হবে না বলে জানিয়ে দিল।

একটি টেস্ট ভেন্যু ন্যূনতম যেসব সুবিধা থাকা প্রয়োজন, তা যেন বেমালুম ভুলে গেছে বিসিসিআই। তাদের দূরদর্শিতার অভাব, পরিকল্পনার অভাব কিংবা অনীহা- এসব কিছু প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে।

কানপুরের ড্রেনেজ সিস্টেম মোটেও ভাল নয়। দ্বিতীয় দিন রীতিমত চাদরে ঢাকা ছিল গোটা স্টেডিয়ামে। তৃতীয় দিনে আকাশ মেঘলা ছিল, তবে হয়নি বৃষ্টি। তবুও প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টা সময় পেলেও, মাঠকর্মীরা খেলার উপযুক্ত করতে পারেনি মাঠকে।

ঠিক এর আগেই আফগানিস্তানকে নয়ডার স্টেডিয়াম দিয়েছিল ভারত। সে স্টেডিয়ামে পাঁচদিন কোন খেলাই হয়নি। আফগানিস্তান বেশ হতাশ হয়েছিল এমন ঘটনায়। ঠিক এরপরই নিজেদের অব্যবস্থাপনার ফাঁদে পড়েছে খোদ ভারত। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যাওয়ার রাস্তাটাও যেন নিজেরাই সংকীর্ণ করছে।

কানপুরের স্টেডিয়ামের জন্য, লখনৌয়ের একানা স্টেডিয়াম থেকে আনা হয়েছিল সুপার সপার। যা দিয়ে দ্রুত আউটফিল্ডের পানি শুকিয়ে ফেলা সম্ভব। সে যন্ত্র ব্যবহার করেও কানপুরের স্টেডিয়ামের আউটফিল্ডকে শুষ্ক করা যায়নি।

প্রথমদিনের খেলাও হয়নি ঠিকঠাকভাবে। এমন এক স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করা সত্যিকার অর্থেই হতাশাজনক। বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ডের অন্তর্গত একটা স্টেডিয়ামের এমন দশা প্রশ্ন তোলার জন্য যথেষ্ট। ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের ভেতরটা যে ফাঁপা, সেটিও যেন সামনে নিয়ে আসে।

আবহাওয়ার উপর কারও হাত নেই। সে কথা ঠিক। শ্রীলঙ্কায় তুলনামূলক বৃষ্টি হয় বেশি। আর্থিকভাবে লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই-এর ধারেকাছেও নেই। তবুও বৃষ্টির পরই শ্রীলঙ্কার মাঠ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুকিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়। মাঠগুলোর ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়ে বেশ তৎপর দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।

বিসিসিআই-এর এমন ত্রুটিপূর্ণ ভেন্যু নির্বাচন করা দর্শকদেরও বেশ হতাশ করেছে। কেননা রবিবার, ছুটির দিন। কানপুরের স্টেডিয়ামে দর্শক আনাগোনাও ছিল বেশি। দর্শকরা অধীর আগ্রহে খেলা দেখবেন বলে ছিলেন অপেক্ষমান। তবে তাদেরকে ফিরে যেতে হয়েছে। এটাও রীতিমত দর্শকদের সাথে প্রতারণার সামিল।

আপনি পৃথিবীর অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ড হয়ে, অবকাঠামোগত উন্নয়নে মনোযোগ দেবেন না। যদিও প্রাদেশিক সংস্থা গুলোর কাছে থাকে মাঠের দায়িত্ব, তবুও একটা টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের আগে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রাখা উচিত। সেখানেই ব্যর্থ হয়েছে বিসিসিআই। তাছাড়া বিনা বাক্য ব্যয়ে অপেক্ষাকৃত খর্বশক্তির দলগুলোকে অগ্রাহ্য করবার, তাচ্ছিল্য করবার এর থেকে দারুণ উদাহরণ নিশ্চয়ই সৃষ্টি করার উপায় নেই।

এখানে যতটা না অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা কিংবা অব্যবস্থাপনা রয়েছে, তার থেকেও বেশি রয়েছে দাম্ভিকতা। এই ধারা থেকে কবে নাগাদ বিসিসিআই বেড়িয়ে আসবে, তা বলা মুশকিল। তারা ক্রিকেটকে ক্রিকেটের মত করেই সম্মান করবে, বৈষম্যহীন আচরণ করবে- তেমনটাই কেবল প্রত্যাশা।

তবে কানপুরে খেলা না হওয়ার ঘটনার পর, আইসিসির উচিত পুনঃরায় স্টেডিয়ামগুলোর সক্ষমতার পরীক্ষা করা। ভারত বলেই কেবল তাদেরকে ছাড় না দেওয়া। টেস্ট ক্রিকেটে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার এমন সব ঘটনার জন্য অবশ্যই আইসিসির কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। তাতে করে অনীহা কিংবা অগ্রাহ্য করবার মাত্রা কমবে।

Share via
Copy link