২০২৬ বিশ্বকাপের কাউন্টডাউন শুরু হওয়ার ঠিক আগেই আবারও চোটে থেমে গেল নেইমারের পথচলা। ব্রাজিলিয়ান লিগে সান্তোসের তিনটি ম্যাচ বাকি থাকলেও সেগুলো আর মাঠ থেকে দেখা হবে না তাঁর। হাঁটুর মেনিস্কাসে নতুন চোট পাওয়ার অর্থ হল নেইমারের মৌসুম এখানেই শেষ।
সান্তোসে ফেরা ছিল নেইমারের জন্য এক ধরনের পুনর্জন্ম—নিজেকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা, সেই ক্লাবে ফিরে যাওয়া যেখানে তার গল্প শুরু হয়েছিল। কিন্তু আবেগ আর স্বপ্নের সেই প্রত্যাবর্তন বাস্তবতার ধাক্কায় বারবার থমকে যাচ্ছে। ইন্টারন্যাসিওনালের বিপক্ষে ম্যাচের ঠিক আগে পুরোনো ব্যথাই তাকে বাধ্য করে সরে দাঁড়াতে, আর সেই পরিচিত হতাশা আবারও আঘাত হানে।
৩৩ বছর বয়সী এই তারকা ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছিলেন। ২৫ ম্যাচে ৭ গোল ও ৩ অ্যাসিস্ট, পারফরম্যান্সে ছিল কাটাছেঁড়া থাকলেও এনেছিল আশার আলো। কিন্তু, তার চেয়েও বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় তার শরীরই — একটার পর একটা বিরতি, বারবার মাঠের বাইরে যাওয়া, এবং প্রত্যাবর্তনের জন্য অনন্ত লড়াই — এটাই যেন নেইমারের নিয়তি।

ম্যাচ শেষে কোচ হুয়ান পাবলো ভজভোদা জানান, নেইমার আগে থেকেই হাঁটুর ব্যথায় ভুগছিলেন, আর সপ্তাহের অনুশীলনে সেই ব্যথা আরও বেড়ে যায়। দল তাকে স্পোর্টের বিপক্ষে পাওয়ার আশা করেছিল, কিন্তু কোচও জানেন, নেইমারের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় নিজের শরীর সম্পর্কে নিজেই সবচেয়ে ভালো বোঝেন। হাতে যা সময়, সেখান থেকে নেইমারকে ফেরানো সম্ভব নয়।
চোট নতুন করে নেইমারের চুক্তিতেও জটিলতা বাড়িয়েছে। রেলিগেশনের চাপে ক্লাবের মনোবল তো ভেঙেছেই, তাঁর ওপর নেইমারকে ঘিরে আছে শঙ্কা। বছরের শেষে তার সঙ্গে ক্লাবের সম্পর্ক শেষ হওয়ার কথা, আর এখনো কোনো পক্ষই আলোচনায় বসেনি। ক্লাব প্রেসিডেন্ট জানালেন, তারা নবায়নে আগ্রহী, কিন্তু সবকিছু নির্ভর করছে নেইমারের শারীরিক প্রস্তুতির ওপর। কারণ তাঁর সামনে সবচেয়ে বড় লক্ষ্য—২০২৬ বিশ্বকাপ।
জাতীয় দলের কোচ কার্লো আনচেলত্তিও তাঁকে ‘লং লিস্টে’ রেখেছেন, কিন্তু শর্ত সোজাসাপ্টা—প্রতিনিয়ত খেলতে হবে, ফিট থাকতে হবে, আর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। শুধু প্রতিভা দিয়ে আধুনিক ফুটবলে জায়গা ধরে রাখা যায় না, আর সেটাই এখন নেইমারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সবার মনে তাই একটাই প্রশ্ন ঘুরছে—নেইমার কি বিশ্বকাপে খেলতে পারবে? উত্তরটা এখন তাঁর প্রতিভা বা তারকা খ্যাতিতে সীমাবদ্ধ নেই, সেটা লুকিয়ে আছে তার হাঁটুর ভেতরেই। আর সেই অনিশ্চয়তার শব্দই আজ ভেসে বেড়াচ্ছে ব্রাজিলের আকাশে। আকাশকুসুম কোনো পরিবর্তন না হলে নেইমারকে ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে নামবে ব্রাজিল।










