সৌম্য ও মেহেদী, ক্রিকেট মস্তিষ্কের জন্য হাহাকার

বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশের সফলতম কোচ সালাউদ্দিন দেশের ক্রিকেটারদের কমনসেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন তাঁরা নাকি মুখস্থ ক্রিকেট খেলে, ক্রিকেট নিয়ে ভাবেও না ঠিকমতো।

এমন সমালোচনা ভুল প্রমাণ করা তো দূরে থাক, বারবার সেটার যৌক্তিকতাই যেন দেখিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্রিকেটার। জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেকবারই ক্রিকেটারদের গেমসেন্সের অভাব ফুটে উঠে।

সর্বশেষ ইমার্জিং এশিয়া কাপে ভারত এ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ এ দলের লজ্জাজনক পরাজয়ে আবারো আলোচনা শুরু হয়েছে মনস্তত্ত্ব নিয়ে। বিশেষ করে দুই অভিজ্ঞ সৌম্য সরকার এবং শেখ মেহেদি হাসান যেমন শিশুসুলভ মানসিকতা দেখিয়েছেন তাতে বাকরূদ্ধ হয়ে গিয়েছে ভক্ত-সমর্থকেরা।

এই মুহুর্তে সৌম্য সরকারের বয়স ৩০ এর কাছেই। পারফরম্যান্সেও নেই সম্ভাবনার ছাপ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো দূরে থাক, ঘরোয়া অঙ্গনেও সৌম্যের ব্যাটে রান নেই। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান বাধ্য হয়েছে তাঁকে একাদশের বাইরে রাখতে। তাই তো পারফরম্যান্স কিংবা বয়স, কোনভাবেই এই বামহাতি ব্যাটারকে ঠিক উদীয়মান বলা যায় না।

তবু বিশ্বকাপ দলে জায়গা দিতে সৌম্য সরকারকে সুযোগ দেয়া হয়েছে ইমার্জিং এশিয়া কাপে। মজার ব্যাপার যে, ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোন ফরম্যাটের বিশ্বকাপেই সৌম্যকে বাদ দেয়ন বাংলাদেশ। অথচ, কেবল ২০১৫ সাল ছাড়া বাকি সময় তিনি ছিলেন চরম অধারাবাহিক। এবারও হয়তো অফ ফর্মে থাকা সত্ত্বেও স্ট্যান্ড বাই হিসেবে ভারতের বিমান ধরবেন এই ব্যাটার।

২৮ বছর বয়সী আরেক অভিজ্ঞ শেখ মেহেদী হাসানও ছিলেন ইমার্জিং এশিয়া কাপের দলে। কিন্তু ভারত এ দলের বিপক্ষে মাহমুদুল হাসান জয় যখন চেষ্টা করছিলেন ধ্বস ঠেকানোর তখন তাঁকে সঙ্গ দেয়ার পরিবর্তে অপ্রয়োজনীয় বড় শট খেলতে যান শেখ মেহেদী হাসান।

একবার বেঁচে গেলেও পরে ঠিকই ধরা পড়েন ফিল্ডারের হাতে। অথচ সেসময় রয়ে সয়ে খেললে ম্যাচের ফিরতে পারতো টিম বাংলাদেশ। সাদামাটা বোলিং, দুর্বল ব্যাটিং টেকনিকের পাশাপাশি শেখ মেহেদির আরেকটি বড় দুর্বলতা তাঁর নেতিবাচক মানসিকতা।

এই ডানহাতির মতে, বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা পোলার্ড, রাসেলের মতো হিটার না, তাই ছয় হাঁকানো সহজ নয়। অথচ তৌহিদ হৃদয়, লিটন দাসদের সাম্প্রতিক ম্যাচগুলো দেখিয়েছে বড় শট খেলার জন্য ক্যারিবীয় শারীরিক গঠনের প্রয়োজন হয় না; বরং প্রয়োজন ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কের, যার অভাব আছে প্রায় সব বাংলাদেশী ক্রিকেটারেরই।

ক্রিকেট যতটা ব্যাট-বলের খেলা, তার সমান বা তার চেয়ে বেশি মাথার খেলা। মাঠে নেয়া একটা স্মার্ট সিদ্ধান্তেই বদলে যেতে পারে ফলাফল; স্রেফ বুদ্ধির জোরেই কত বড় বড় দলকে নাকানিচুবানি খাওয়ানো যায় – কিন্তু সেসব বোধহয় বাস্তবতা নয় বরং সিনেমার গল্প মনে হয় বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link