সেই বেলা ১২টায় শুরু ম্যাচ। শেষ হতে হতে রাত আটটা। লম্বা একটা যাত্রা। এটা নাকি আবার সীমিত ওভারের ক্রিকেট। ফুটবল বিশ্বকাপের এই ভরা মৌসুমে এতটা সময় একটা খেলার পেছনে ব্যয় করা কো অর্থহীন।
কিন্তু, ওই যে কথায় আছে না – ক্রিকেট হল গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। সেই খেলায় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রংবদলাল অসংখ্যবার। আর সেই রং বদলের ম্যাচের শেষ অংকের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। হ্যাঁ, সত্যিই মিরপুরে মিরাকল গড়েছেন মিরাজ। এই ম্যাচ দেখে বলতেই হচ্ছে, এসে গেছেন নতুন দিনের ফিনিশার!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ। ফলে, বাংলাদেশ দলে যথারীতি আবার সিনিয়রদের প্রাধান্য। মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফিরে এসেছেন। তাই, ব্যাটিং অর্ডারে আবারও ওলট পালট।
সাকিব আল হাসান নামলেন চারে। এরপর পাঁচ আর ছয়ে যথাক্রমে মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ফলে যেটা হল, আফিফ হোসেন ধ্রুবর মত সলিড ব্যাটারকে নামতে হল সাত নম্বরে। আর মেহেদী হাসান মিরাজ নামলেন আট নম্বরে।
লক্ষ্যটা মাত্র ১৮৭ রানের। সেখানে প্রতিপক্ষ আর কন্ডিশন যাই হোক না কেন, জয়টা খুবই অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু, দলটা যে বাংলাদেশ – বড্ড আনপ্রেডিক্টেবল। সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিততে এই দলটার বিকল্প পাওয়া তো খুব কঠিন।
অবশ্য, বাংলাদেশ দল জয়ের পথেই ছিল। রান তাড়া করতে নেমে প্রথম বলে নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারালেও জয়টা কঠিন মনে হচ্ছিল না কখনওই। চার উইকেট হারিয়ে যখন ১২৮ রান করে বাংলাদেশ তখনও হাতে আছে ১৫-এর বেশি ওভার। ফলে রান রেট সেখানে সমস্যা ছিল না।
কিন্তু, তখনই পরপর দুই বলে সাজ ঘরে ফিরে যান দুই সিনিয়র – রিয়াদ ও মুশফিক। তখন আফিফ নেমেও খুব বড় কিছু করতে পারেননি। ১২ বলে করেন ছয় রান। আফিফ আউট হয়ে যাওয়ার পরই বাংলাদেশ দলের সমর্থকরা হাল ছেড়ে দিয়েছিল।
দুই টেল এন্ডার এবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদ ফিরে যান রানের খাতা খোলার আগেই। শেষ পাঁচটা উইকেট গেল মাত্র আট রানে। তখনও জয়ের থেকে ৫১ রান দূরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দল। সেখান থেকে ভারত কত দ্রুত ম্যাচটা শেষ করতে পারবে সেটাই ছিল দেখার ব্যাপার।
তবে, মিরাজের পরিকল্পনা ছিল অন্যরকম। তিনি খোলস ছেড়ে তখন বেড়িয়ে গেছেন। যেন এক লাগামহীন তলোয়ার। না, এখন তিনি কেবল আর টিকে থাকার চেষ্টা করবেন না। তাঁর কোনো কিছুই হারানোর ভয় নেই। তাঁর কাছে তখন ‘অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’।
ব্যাস, সেই একটা সুরেই গাঁথা হল বাংলাদেশের ইনিংসের বাকিটা সময়। ৩৯ বল, ৩৮ রান, চারটি চার ও দুটি ছক্কা – এই ছোট্ট একটা ইনিংস খেলা হয়ে গেল ইতিহাসের পাতায়। আর সেই ইতিহাসের নায়ক মিরাজ। যোগ্য সঙ্গ দিয়ে গেছেন শেষ ব্যাটার মুস্তাফিজুর রহমান। ১০ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় রোজ রোজ আসে না। তার ওপর আবার দেশের মাটিতে, এভাবে এক উইকেট নিয়ে বিপুল বিক্রমে লড়াই করে পাওয়া বীরত্বের স্বীকৃতি। এই জয়টা তাই অবশ্যই বিশেষ কিছু। মিরাজও তাই এই ম্যাচের স্পেশাল ওয়ান।
বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের ফিনিশিং নক এটাই কি না – সে নিয়ে এখন আলোচনা হতে পারে। অথচ, তিনি নামেন আট নম্বরে। ভাবা দরকার টিম ম্যানেজমেন্টের, ভাবলে হয়তো জয়টা আরও সহজেই আসত।