অবশ্যই এটা একটা রহস্য। যে ব্যাটসম্যান নিজেদের ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় জাতীয় দলের ম্যানেজমেন্টের কাছেই একাদশে সুযোগ পান না, তিনি কী করে জাতীয় দলের একাদশে নিয়মিত হয়ে ওঠেন? যে ব্যাটসম্যান বিপিএলে সুযোগ পেলেও আট-নয় নম্বরে ব্যাট করেন, তিনি কী করে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ইনিংস শুরু করেন?
নাঈমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভ্রান্তি হলো তার গড় ও স্ট্রাইক রেট।
এমনিতে ২৪.৮৭ গড় এবং ১০৪.৫৯ স্ট্রাইক রেট একজন টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানের জন্য বলার মত কিছু নয়। এটা কোনো আর্ন্তজাতিক দলে ঢোকার যোগ্যতা হতে পারে না। তারপরও বাংলাদেশের যেহেতু নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা, এই পরিসংখ্যানকেও চলনসই বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এখানেও একটা ভ্রান্তি আছে।
নাঈমের এই গড় ও স্ট্রাইক রেটের মূলে কাজ করেছে ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শুরুতে ৪৮ বলে ৮১ রানের একটা ইনিংস। আপনি যদি নাঈমের ৩৩ ম্যাচের ক্যারিয়ার থেকে এই ইনিংসটা বাদ দেন, তাহলে তাঁর গড় নেমে আসবে ২২-এর ঘরে। আর স্ট্রাইক রেট নেমে আসবে এক শ এর নিচে।
এরপরও নিশ্চয়ই নাঈমকে দলে চান না?
আসলে পরিসংখ্যান দিয়ে নাঈমের নেগেটিভ ইম্প্যাক্টটা ঠিক বুঝিয়ে শেষ করা যাবে না। নাঈম ব্যাট করতে যান পাওয়ার প্লেতে। তিনি শুরুতেই এতোটা নেতিবাচক এপ্রোচে ব্যাট করেন যে, বড় দলীয় ইনিংস খেলার সম্ভাবনা ওখানেই শেষ হয়ে যায়। প্রথম ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে প্রায়শ তিনি একা নষ্ট করে আসেন।
কিন্তু এই এপ্রোচ আমাদের ম্যানেজমেন্ট দেখে না। তারা দেখে খুড়িয়ে খুড়িয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা মাঝারি কিছু ইনিংস।
অবশ্য ম্যানেজমেন্টও তো রহস্যে ঘেরা।
এই ম্যানেজমেন্টের অধীনেই নাঈম বিপিএলে মিনিস্টার ঢাকা দলে খেলেছেন। ঠিক নিয়মিত খেলেননি; দলে ছিলেন। এই অধিনায়ক রিয়াদ সেই দলেরও অধিনায়ক ছিলেন, ওয়ানডে অধিনায়ক তামিমও ছিলেন সেই দলে। নির্বাচক হাবিবুল বাশারও ছিলেন ঢাকা দলের সাথে। কিন্তু রিয়াদ-তামিমরা তখন নাঈমকে যোগ্য বলে মনে করেননি।
নাঈম প্রায়শ একাদশে জায়গাই পাননি। যা দু চারটে ম্যাচ পেয়েছেন, তাতে আবার তাকে ৮-৯ নম্বরেও ব্যাট করতে হয়েছে। মানে, রিয়াদের সেই ম্যানেজমেন্ট কিন্তু নাঈমকে তখন ওপেনিং করার যোগ্য মনে করেননি। তারা নাঈমকে বিপিএলেই যোগ্য মনে করেননি। অথচ সেই রিয়াদ আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে এসে নাঈমকে যোগ্য বলে মনে করছেন!
কী বিষ্ময়কর ব্যাপার। তাহলে কী বিপিএলের মানটা আর্ন্তজাতিকের চেয়ে ভালো হয়ে গেলো? নাকি আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে যোগ্যতা না থাকলেও চলে বলে একই ম্যানেজমেন্ট মনে করেন।
নাঈম সুযোগ পাচ্ছেন, রান করতে পারছেন না, দলকে বিপদে ফেলছেন। এতে নাঈমের চেয়ে অনেক বেশি দোষ তাকে নিয়ে যারা এই ছেলেখেলা করছেন, তাদের। বাংলাদেশের তো ক্ষতি যা হওয়ার হচ্ছেই। পাশাপাশি তরুণ একজন খেলোয়াড়ের মনোবল শেষ করে দিচ্ছেন এই ম্যানেজমেন্ট।
কবে এই নাঈম রহস্যের সমাধান হবে? আমাদের জানা নেই। আপনাদের জানা আছে? কিংবা টিম ম্যানেজমেন্ট কি জানে? তাও জানা নেই। এ এক অতিমানবীয় রহস্য!