রিঙ্কুর ছক্কা হাঁকানোর রহস্য

এবারের আইপিএল দিয়েই শূন্য থেকে শিখরে উত্থান হয়েছে রিংকু সিংয়ের। প্রায় প্রতি ম্যাচেই কলকাতার ভঙ্গুর ব্যাটিং লাইন আপকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন এই তারকা। তবে রিংকু হয়তো চেষ্টাটা একাই চালিয়েছেন, তবে গোটা মৌসুমজুড়ে তাঁকে ভরসা দিয়ে গেছেন কলকাতার অধিনায়ক নিতীশ রানা। 

এবারের মৌসুমেও শেষ চারের আগেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে কলকাতা। দুর্বল টপ অর্ডার, রাসেল-নারাইনদের অফ ফর্ম কিংবা অনভিজ্ঞ পেস বোলিং লাইন আপ গোটা মৌসুম জুড়েই ভুগিয়েছে দলটিকে। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে কলকাতাকে পুরোটা সময়জুড়ে টুর্নামেন্টে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে গেছেন রানা এবং রিঙ্কু।

ব্যক্তিগতভাবে এই দুই তারকাই ভালো একটা মৌসুম কাটিয়েছেন। দুজনের প্রায় দেড়শো ছুঁইছুঁই স্ট্রাইকরেটে চারশোর বেশি রান করেছেন। গোটা টুর্নামেন্টে কলকাতার ১১৮ টি ছক্কার মাঝে ৪৫টিই এসেছে এই দুজনের ব্যাট থেকে। ব্যাটিং অর্ডারে নিচের দিকে নামলেও ধারাবাহিকভাবে মারকুটে ব্যাটিং করে গেছেন রিঙ্কু। 

বিশেষ করে গুজরাটের বিপক্ষে তাঁর ইনিংসকে তো ভাবা হয় আইপিএল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস হিসেবে। ইয়াশ দয়ালের শেষ ওভারে টানা পাঁচ ছক্কায় দলকে এনে দিয়েছিলেন অবিশ্বাস্য এক জয়।

এছাড়া লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষেও শেষ ওভারে ২১ তাড়া করতে নেমে প্রায় জিতিয়েই ফিরছিলেন। কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে সহায়তা না পাওয়ায় থামতে হয় এক রান দূরে থাকতেই।

অন্যদিকে, মৌসুমের শুরুতে খানিকটা অফফর্মে থাকলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে উজ্জ্বল হয়েছে রানার পারফরম্যান্স। টপ অর্ডারে একাকী সৈনিকের ন্যায় প্রতি ম্যাচেই দলকে বিপদ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন এই তারকা। 

কেবল ব্যাটিং জুটি হিসেবে নয়, মাঠের বাইরেও এই দুজনের রসায়নটা দারুণ। রিংকুর সেই ঐতিহাসিক পাঁচ ছক্কার পর মাঠে রানার উল্লাস চোখ এড়ায়নি কারোরই।

রানা বলেন, ‘আমি রিংকুকে সব সময়েই বলেছি নিজের উপর ভরসা রাখতে। কারণ এই বয়সেই সে যা কিছু অর্জন করেছে, সেসব অনেকের কাছে কেবলই স্বপ্ন।’

রানার এই কথাতেই স্পষ্ট কেবল বন্ধু নয়, বরং সিনিয়র হিসেবেও রিংকুর প্রতি তাঁর দারুণ খেয়াল। তিনি বলেন, ‘সে যখন ব্যাট করছিল, গোটা স্টেডিয়াম রিংকু রিংকু চিৎকার করছিল। আমি ইডেন গার্ডেন্সে অনেক দিন ধরে খেলছি, সব সময় রাসেল রাসেল চিৎকার শুনেই অভ্যস্ত ছিলাম। রিংকু তাঁর পারফরম্যান্স দিয়েই দর্শকদের সম্মান আর ভালোবাসা আদায় করে নিয়েছে।’

মজার ব্যাপার হলো, গুজরাটের বিপক্ষে সেই ম্যাচটাতে রানার ব্যাট নিয়েই খেলতে নেমেছিলেন রিঙ্কুু। রানা বলেন, ‘পুরো সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে আমি ওই ব্যাটটা দিয়ে খেলেছি। এই মৌসুমের শুরুতে নতুন ব্যাট নেবার পর রিংকু আমার কাছে পুরনো ব্যাটটা চেয়েছিল। প্রথমে দিতে রাজি না হলেও স্টেডিয়ামের আসার পর মনে হয়েছিল ব্যাটটা রিঙ্কুর গ্রিপের জন্য ভালো হবে। এখন থেকে ওই ব্যাটটা রিঙ্কুরই।’

এবারের মৌসুম দিয়েই গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছেন রিঙ্কু সিং। কে জানে হয়তো আইপিএল শেষেই জাতীয় দলে ডাক পাবেন এই তরুণ।

তবে রিঙ্কু জানেন মৌসুমের শুরু থেকেই রানার ভরসার হাত কাঁধে না থাকলে তিনি এতদূর আসতে পারতেন না। আরো একটা বাজে মৌসুম কাটানোর পর কলকাতার প্রাপ্তি বোধহয় রানা-রিঙ্কু জুটির বন্ধুত্বই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link