সাইফ হাসানের সমস্যা কোথায়!

আট টেস্ট ইনিংসে পাঁচটি সিঙ্গেল ফিগার, তিনটি শূন্য। সাইফ হাসানের সমস্যা কোথায়? একটু ভাবার চেষ্টা করলাম।

অনেকে বলছেন, বয়সভিত্তিক পর্যায়ের পারফরম্যান্সের কারণেই তাকে নেওয়া হয়েছে। আদতে তা নয়। হ্যাঁ, বয়সভিত্তিক পর্যায়ের ‘ইম্প্রেশন’-এর একটা ব্যাপার থাকতে পারে। তবে সেটাই কারণ নয়। তাঁকে টেস্ট দলে নেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন পর্যায়ে পারফরম্যান্স দেখে।

টেস্টে এখনও পর্যন্ত তাঁকে দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক, তাঁর টেকনিক বলতে কিছু নেই। স্কুল লেভেলেও আরও ভালো টেকনিক থাকে। পা যেন কেউ সুপার গ্লু দিয়ে আটকে রাখে মাটিতে। অফ স্টাম্প কোথায়, জানা নেই। আজকে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হলেন অফ স্টাম্পে, মানে বোলারের ক্রিজের ব্যবহার ও অ্যাঙ্গেল ধরতেই পারেননি।

কিন্তু ফার্স্ট ক্লাসে তার দুটি ডাবল সেঞ্চুরি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৭০ ইনিংসে ৭ সেঞ্চুরি। কিছুদিন আগে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন, যেখানে আয়ারল্যান্ড জাতীয় দলের বেশ কজন বোলার ছিল। জিম্বাবুয়ের এই দলের চেয়ে বোলিং খুব খারাপ ছিল না। ইমার্জিং দলে সেঞ্চুরি করেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, যে দলে হাসারাঙ্গা, কামিন্দু মেন্ডিসরা ছিলেন, ভালো কয়েকজন পেসার ছিলেন। ‘এ’ দলে রান করেছেন। টেকনিক এত বাজে হলে নিশ্চয়ই এসব করতে পারতেন না! যে কোনো পর্যায়ে এতটুকু রান করতেও একটা মিনিমাম লেভেলের টেকনিক লাগে।

কিন্তু টেস্টে তাকে কোনো লেভেলেরই মনে হচ্ছে না। তার মানে, কোথাও বড় গড়বড় হচ্ছে!

ব্যাপারটা শুধু আমার চোখের দেখার নয়, বা কয়েকজনের চোখের নয়, সবাই তাঁকে নিয়ে আশা করেছিল। নির্বাচক, সব লেভেলের কোচ, বর্তমান-সাবেক ক্রিকেটাররা, সংশ্লিষ্ট যারা, প্রায় সবাই। সবাই তো নিশ্চয়ই এতটা গর্দভ নয়। তাহলে তিনি সবাইকে গর্দভ বানিয়ে ছাড়ছেন কিভাবে? সেটিই বড় প্রশ্ন।

তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটেও শুরুতে নড়বড়ে থাকেন বেশির ভাগ সময়ই। তবে সেখানে তো ভালো ডেলিভারি কম পান, ভালো বোলিং আক্রমণ কম থাকে। শুরুতে সারভাইভ করে গেলে, সেটা তিনি পরে কাজে লাগাতে পারেন। কারণ শুরুতে টিকে গেলে, তার হাতে শট আছে। বাউন্ডারি নিয়মিত আদায় করতে পারেন, এমনকি বড় বড় ছক্কা সে মারতে পারেন। যদিও কখনোই তাকে খুব সেট মনে হয় না। কিন্তু লম্বা সময় কাটাতে পারেন ও রান করতে পারেন।

সমস্যা হলো, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইনিংসের শুরুর সময়টুকুই সারভাইভ করতে পারছেন না তিনি। পারলে বোঝা যেত, এখানেও লম্বা খেলতে পারেন কিনা বা বাউন্ডারি না পেয়ে অস্থির হয়ে আউট হন কিনা।

টেকনিক, ফুট ওয়ার্কে তার বড় উন্নতি দরকার, এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে আগে দরকার মনে হচ্ছে, মনের উন্নতি। বয়স ভিত্তিক পর্যায় থেকে তার টেম্পারমেন্টের কথাই বলা হয়েছে বেশি, আমরাও বলেছি, লিখেছি। কারণ তিনি উইকেটে পড়ে থাকতে পারতেন। এখন হয়ে গেছে উল্টো। তাঁর টেম্পারমেন্টের এত বাজে অবস্থা, এতটা নার্ভাস থাকে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে এত বেশি সংশয়, মাঠে নামলে হয়তো এই কারণে নরম্যাল কাজই ভুলে যাচ্ছেন। এছাড়া আর কোনো ব্যাখ্যা আপাতত পাচ্ছি না।

টেম্পারমেন্ট মানে কিন্তু শুধু লম্বা সময় টিকে থাকা নয়, টেম্পারমেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অ্যাডজাস্টমেন্ট। মানিয়ে নেওয়া। টেকনিক যতটা গুরুত্বপূর্ণ, একই সমান বা অনেক ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো অ্যাডজাস্টমেন্ট। সেই অ্যাডজাস্টমেন্ট করার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত মানসিকতা। সাইফের এখনও পর্যন্ত তা নেই, পরিষ্কার ফুটে উঠছে।

আমার মনে হয়, ‘এ’ দলে বা ওই পর্যায়ে আরও বেশি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলিয়ে তাকে আরও পরীক্ষা করা উচিত ছিল।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বাজে শুরুর ক্ষেত্রে মারভান আতাপাত্তুর কথা চলে আসে শুরুতেই। প্রথম ৬ ইনিংসে করেছিলেন ০,০,০, ১, ০, ০ – প্রথম ১৭ টেস্ট ইনিংসে ৩০ ছুঁতেও পারেননি। তার পর ছয়টা ডাবল সেঞ্চুরি ও কী কী করেছেন আমরা জানি। কেন রাদারফোর্ডের কথাও বলা যায়। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে তার ইনিংস ছিল ০, ০, ৪, ০, ২,১, ৫।

এখনই তেড়ে আসবেন না যে, তাদের সঙ্গে তুলনা করছি। সেই দুঃসাহস দেখাচ্ছি না। স্রেফ মনস্তত্ব বোঝার চেষ্টা করছি। তাদের ওই ইনিংসগুলি দেখিনি। ওই সময়ে কী বলা হয়েছে তাদেরকে নিয়ে, তাও জানি না। কিন্তু তাদেরকেও নিশ্চয়ই বাতিলে খাতায় ফেলা হয়েছে! তারা ফিরে এসেছেন। কিভাবে? সেই পথটাই বের করতে হবে সাইফকে ও দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যদের।

আবারও বলছি, অবশ্যই তাই টেকনিক, ফুটওয়ার্কে সমস্যা আছে অনেক। কিন্তু টেস্টে সে যতটা বাজে ব্যাট করছে, এতটা বাজে হলে স্কুল ক্রিকেটেও তার রান করার কথা নয়। আসলে কি হয়েছে, কোথায় সমস্যা? সেটা খুঁজতে হবে তাকেই। টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচিং স্টাফেরও দায়িত্ব বের করার।

স্রেফ নেটে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাট করলাম, ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে রান করলাম, সেটাই যথেষ্ট নয়। সমস্যার মূলে যেতে হবে।

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link