ভারতীয় পেস বিপ্লব/বিবর্তন

উমহাদেশীয় কন্ডিশন। স্পিনিং ট্র্যাক বানাও, এক গাদা স্পিনার লেলিয়ে দাও, সাফল্য পাও – এই ফর্মুলাটা খোঁদ ভারতই উপমহাদেশের দলগুলোকে শিখিয়ে দিয়েছিল। এই করতে গিয়েই ভারতে স্পিন চতুষ্টয়ের জন্ম হয়েছিল। পরবর্তীতে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের জমানায় এসে পুরোদস্তর স্পিন নির্ভর দলই হয়ে উঠেছিল ভারত।

তবে, এটা ঠিক যে – পেসার তৈরিতে ভারত বেশ কয়েক দশক ধরেই শীর্ষে৷ আশির দশকে কপিল দেবের সময় থেকে শুরু করে পরবর্তীতে কপিল দেবের পর জাভাগাল শ্রীনাথরা, পরবর্তীতে ইরফান পাঠান, জহির খান, আশিষ নেহরা এবং বর্তমানে মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, উমেশ যাদবরা। আর বর্তমান সময়ে এসে ভারতের ডাগ আউটে স্রেফ বসেই থাকেন এক গাদা শীর্ষ মানের পেসার।

একসময় ভারতের তরুন ক্রিকেটারদের যদি প্রশ্ন করা হতো তারা কাদের মতো হতে চান তাহলে বেশিরভাগেরই উত্তর আসতো শচিন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলি কিংবা মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে সাবেক ভারতীয় পেসার লক্ষ্মীপতি বালাজি মনে করেন বর্তমানে তরুণ ক্রিকেটাররা মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রেত বুমরাহ কিংবা জহির খান হতে চায়।

লক্ষ্মীপতি বালাজি – যিনি তার সময়ে ইনস্যুইং এবং আউটস্যুইং দুইটাই করতে পারদর্শী ছিলেন। সেই বালাজি মনে করেন এখন সময় পাল্টেছে। তরুন ক্রিকেটাররা এখন পেসারদেরকেও আইডল হিসেবে নিচ্ছে।

এক সাক্ষাৎকারে বালাজি বলেন, ‘আগে ১০ জনের ৯ জন তরুন ক্রিকেটারই বিরাট কোহলি, শচীন (টেন্ডুলকার) কিংবা মহেন্দ্র সিং ধোনি হতে চাইতো কিন্তু এখন তারা জাসপ্রেত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, জহির খান হতে চায়। বুমরাহর গতি, শামির বোলিং স্কিল আর ইশান্ত শর্মার অভিজ্ঞতা পেস এট্যাকে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।’

বালাজির মতে মোহাম্মদ শামি এবং জাসপ্রেত বুমরাহ বর্তমানে ভারতীয় পেস আক্রমণের সবচেয়ে স্কিলফুল পেসার। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের পেসারদের মধ্যে শামি ও বুমরাহ সবচেয়ে দক্ষ। আমরা এদের মধ্যে একজনকে এক ম্যাচ করে খেলাতে পারি। ইশান্ত শর্মাকেও এভাবে রোটেট করে খেলানো যায়। এছাড়া আরো পেসার আছে যেমন ভুবি, শার্দুল ঠাকুর, মোহাম্মদ সিরাজ।’

এছাড়া বালাজির মতে খেলোয়াড়দের সতেজ থাকাটা জরুরি। এবং এভাবে প্রতিভাবান খেলোয়াড়েরা উঠে আসবে এবং পারফরম্যান্স দেখাবে। এছাড়া একজন ভালো বাঁ-হাতি পেসারের অভাব পূরণে থাঙ্গারাসু নটরাজনকেও তিনি বেশ সম্ভাবনাময়ী হিসেবেই দেখছেন।

তিনি বলেনম ‘নটরাজন বর্তমানে বেশ ভালো অবস্থানে আছে, ইতোমধ্যে সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছে। একজন বাঁ-হাতি পেসারের অভাব সে পূরণ করেছে। যুগে যুগে পেসারদের যে বিবর্তন এটা তারই ফল এবং যার জন্য ভারত প্রতি ম্যাচেই টানা ২০ উইকেট নিতে পারছে।’

ভারতীয় ফার্স্ট বোলারদের এই বিবর্তনকে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বালাজি বলেন বর্তমান বোলাররা তাদের প্রতিভা দেখাতে আরো সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান ভারতীয় পেস আক্রমণ এক যুগের বেশি সময় ধরেই আছে। ৮০ এর দশকে যার রোল মডেল ছিলেন কপিল দেব এবং পরবর্তীতে আমরা মনোজ প্রভাকর এবং জাভাগাল শ্রীনাথকে পেয়েছি। এই মানুষগুলাই মূলত ৮০ ও ৯০ দশকে পেসারদের জন্য একটা ধারা সেট করে দিয়েছে। গত পাঁচ-ছয়৷ বছরে কয়জন পেসারের অভিষেক হয়েছে শুধু সংখ্যাটা দেখেন। এই সংখ্যা বেশ কয়েকজনের।’

সত্যিই তাই, ভারতে এখন এক গাদা পেসার। পাইপলাইন বেশ সমৃদ্ধ। সেরা একাদশে অনেক সেরা পেসারদেরও এখন জায়গাটা নিশ্চিত নয়। স্কোয়াডের বাইরেও এমন অনেক পেসার আছেন যারা সামর্থ্য রাখেন জাতীয় দলে খেলার।

বালাজি বলেন, ‘তাদের সব ফরম্যাটেই অনেক সুযোগ আছে৷ যদি আপনি নিজেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কিংবা আইপিএলে প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আপনি নির্বাচকদের দৃষ্টিগোচর হবেন না। ৮০ ও ৯০ এর দশকে অনেকেই বাদ পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভালো যেই ব্যাপারটা সেটা হলো খেলোয়াড়দের রোটেশন পদ্ধতিতে খেলানো। তাহলে প্রতিভার মূল্যায়ন হবে এবং সবার প্রতি সুযোগ ও সুবিচার হবে।’

ভারত এখন দেশের মাটিতেও হরহামেশাই একাদশে এক গাদা পেসার খেলায়। উইকেট সবগুলো আর আগের মত স্পিন সহায়ক নেই। এর ফলে দেশের বাইরে পেসারদের পারফরম করাটা সহজ হয়। ভারতীয় পেসাররা নিয়মিতই তাই সাফল্য পান অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে। কখনো অস্ট্রেলিয়ার গ্যাবায়, কখনো বা ইংল্যান্ডের লর্ডসে শোভা পায় ভারতীয় পেসারদের পতাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link