‘অধৈর্য্য সম্ভাবনা’ ঋষাভ পান্ত

প্রতিপক্ষের দূর্গে একাই আক্রমণ সামলেছিলেন একজন খেলোয়াড়। খানিকটা ছোট গঢ়নের বা-হাতি একজন ব্যাটার গতিদানবদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থেকে দলকে ঐতিহাসিক জয় অবধি এনে দিয়েছিলেন। সেই ব্যাটার ছিলেন ভারতীয় উইকেট কিপার ব্যাটার ঋষাভ পান্ত।

কি এক দৃঢ়তাই না তিনি দেখিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার গ্যাবায়। মিশেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও জস হ্যাজেলউডের মতো বাঘাবাঘা বোলারদের সামলেছিলেন তিনি। ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর প্রশংসার জোয়ারেও ভেসেছিলেন ঋষাভ।

কিন্তু ঠিক উল্টো এক চিত্রের প্রদর্শন করলেন সেই ঋষাভ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে। যেখানে অযথা একটি শট খেলতে গিয়ে নিজের মূল্যবান উইকেটটি খুইয়ে আসেন ঋষাভ। ইনিংসের ৩৮.৩ ওভারের সময় প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদার বল ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে খেলতে চান ঋষাভ।

কিন্তু অমন অপ্রয়োজনীয় শটের মাশুল তাঁকে দিতে হয়েছে। ব্যাটের খোঁচা লেগে বলের ঠিকানা হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান উইকেট রক্ষকের দস্তানায়। ব্যাস! তাতেই এক সময় বন্দনায় ভেসে যাওয়া ঋষাভের নিন্দায় ফেটে যায় ভারতীয় ক্রিকেট মহল থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়াও।

কোচ রাহুল দ্রাবিড় অবশ্য খুব বেশি এখনই কড়া কোন পদক্ষেপে যেতে নারাজ। তবে তিনি বলেছেন যে ঋষাভের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। তাঁকে তাঁর রোলটা ঠিকঠাক বুঝিয়ে দেওয়া খুবই জরুরি। রাহুল বলেন, ‘আমরা সবাই কম বেশি জানি ঋষাভের আলাদা একটা খেলার ধরণ রয়েছে।

সে তাঁর সেই ব্যাটিং ধরণে সাফল্যও পেয়েছে। তবে আমাদের তাঁর সাথে একটু আলোচনা করতে হবে, তাঁকে আমরা কেউ বলবো না যে তাঁর আগ্রাসীভাবে লাগাম টানতে হবে। কিন্তু তাঁকে এটা বোঝাতে হবে যে তাঁর একটু সময় নিয়ে ক্রিজে থিতু হওয়া উচিৎ।’

ঋষাভ তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করতে বেশ সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাছাড়া তাঁর সেই আগ্রাসী ব্যাটিং বহুবার তাঁকে এবং ভারত দলকে সাফল্য এনে দিয়েছে। সুতরাং তাঁর সেই ব্যাটিং ধরণে পরিবর্তন আনার পক্ষেও নন অধিকাংশ ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ।

তবে, তাঁর একটু রয়ে সয়ে খেলার বিষয়ে বেশ গুরুত্ব দিয়ে ভারতের সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার দ্বীপ দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘ঐতিহাসিক গ্যাবা টেস্ট জয়ে ঋষাভের ইনিংসটার কথা মনে আছে? প্রথম ৫০ বল সে টিকে থাকার প্রস্তুতি নিয়েই নেমেছিলো। সে নিজেকে সময় দিয়ে থিতু হয়েছে বাইশ গজে এর পর সে তাঁর স্বাভাবিক খেলার ধরণের ফিরে শট খেলতে শুরু করে। সেই বিষয়টার দেখাই মিলছে না ঋষাভের মাঝে।’

তবে ঋষাভ নিজেকে স্বস্তিদায়ক এক পরিস্থিতিতে আবিস্কার করতেই পারেন। কেননা তিনি তাঁর উইকেট কিপিং দক্ষতার বেশ উন্নতি হয়েছে বিগত কয়েক বছরে। তাঁর অভিষেক ম্যাচে বেশ কয়েকটা বাড়তি রানের কারণ হয়েছিলেন ঋষাভ।

২০১৮ সালে ওভাল টেস্টে প্রায় ৪০টি রান বেড়িয়েছে তাঁর দস্তানার ফাঁক গলে। কিন্তু সেখান থেকে বেশ একটা সড়ে এসেছে নিজের কিপিংটা বেশ শানিত করেছেন তিনি।

ঋষাভের এই কিপিং উন্নতির প্রশংসা করে দ্বীপ দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘পান্ত যে তাঁর কিপিং নিয়ে বেশ খানিকটা কাজ করেছে তা খুব সহজেই বোঝা যায়। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো জায়গায় বল বেশ খানিকটা মুভমেন্ট করে। কিপারদের তাই খানিকটা দেরীতে মুভ করতে হয়। ঋষাভ সেই জায়গাটায় উন্নতি করেছে, পাশাপাশি সে ছোটছোট পরিবর্তনও এনেছে।’

ঋষাভ পান্ত দারুন সম্ভাবনাময়ী একজন খেলোয়াড়। তাঁর ধৈর্য্যশীল ব্যাটিং ভারত দলকে নানান রকমের বিরুপ পরিস্থিতিতে উদ্ধার পাওয়ার পাশপাশি একটা ভাল ফলাফলের দিকে অগ্রসর হতে পারবে ধারাবাহিকভাবে। সমগ্র ভারতের ক্রিকেট ভক্তদের প্রত্যাশা বোধ করি সেটুকুই। তাছাড়া রাহুল দ্রাবিড়ের মতো অভিজ্ঞ কোচ আশার প্রদীপ নিভতে অন্তত দেবে না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link