আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় ঘনিয়ে আসছে। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এই বিশ্বকাপকে সামনে রেখে চলছে বাছাইপর্ব। আর বাছাইপর্বের ম্যাচে এক অনন্য কীর্তি গড়েছেন অজি বংশদ্ভূত কানাডার ওপেনার ম্যাথিউ স্পার্স।
ফিলিপাইনের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্পার্সের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটের জয় পেয়েছে কানাডা। আর ফিলিপাইনের বিপক্ষে ওই ম্যাচেই অভিষিক্ত হন অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া ম্যাথিউ স্পার্স।
অভিষেক ম্যাচেই খেলেন ৬৬ বলে ১০৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। আর এই ইনিংসের মধ্যে দিয়েই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেকে চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন স্পার্স।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেকে সেঞ্চুরি পাওয়া চার ক্রিকেটারের দু’জনই কানাডার! সেঞ্চুরি পাওয়া এই চারজনই আইসিসির সহযোগী দেশের হয়ে খেলছেন। স্পার্সের আগে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছিলেন মাত্র তিনজন।
২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট কানাডার রবীন্দ্রপল সিং ক্যামেন আইল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই খেলেন ১০১ রানের ইনিংস। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ব্যাটার হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিনি। এর মাত্র একদিন বাদেই, মানে ২০ আগস্ট বতসোয়ানার বিপক্ষে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেন নামিবিয়ার জিন-পিয়েরে কোয়েৎজে।
একই বছর ১৪ অক্টোবর বুলগেরিয়ার বিপক্ষে সার্বিয়ার টপ অর্ডার ব্যাটার লেসলি ডানবার অভিষেকেই খেলেন ১০৪ রানের হার না মানা ইনিংস। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেকে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরির পাশাপাশি প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে টি-টোয়েন্টি অভিষেকে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ডটি নিজের নামে করেন ডানবার।
এরপর চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের বিপক্ষে অভিষেকেই ব্যাট হাতে ঝড় তুলে ১০৮ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলেন ম্যাথিউ স্পার্স। এই ইনিংসের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেকে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ডটি এখন তাঁরই দখলে!
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে স্পার্সের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১ উইকেটে ২১৬ রান সংগ্রহ করে কানাডা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৯৮ রানেই গুড়িয়ে যায় ফিলিপাইনের ইনিংস। ১১৮ রানের দুর্দান্ত জয় পায় কানাডা। ৬৬ বলে তিন ছক্কা ও ১৪ চারে ১০৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন স্পার্স।
আরেকটি অবাক করা তথ্য হলো কানাডার স্কোয়াডের ১৪ জনের মধ্যে ৮ জনই অস্ট্রেলিয়ান! অজি বংশদ্ভূত এই ৮ ক্রিকেটারের একজন হলেন স্পার্স। অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে খেলেছেন এই তরুণ ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন বয়সভিত্তিক দলেও।
তিনি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) ক্রিকেট কাঠামোরই অংশ ছিলেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি আসর বিগ ব্যাশে পার্থ স্কোরচার্স দলে থাকলেও খেলার সুযোগ মিলেনি। সব মিলিয়ে, অস্ট্রেলিয়ায় লাইমলাইটে আসাটা যে বেশ শক্ত – সেটা সময় থাকতেই বুঝতে পেরেছিলেন।
তাই, আন্তর্চাতিক ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন বাবা-মা’র কানাডার নাগরিকত্ব থাকার সুবাধে কানাডা ক্রিকেটের ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে কানাডায় পাড়ি জমান স্পার্স! এবার তাঁর হাতেই কানাডার বিশ্বকাপ স্বপ্ন, যে বিশ্বকাপটা আবার হবে অস্ট্রেলিয়াতেই!
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে হয়তো নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যতটা দেখতে পেয়েছিলেন স্পার্স। কানাডা জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগটাও হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। অবশ্য এই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিলো না তাও প্রমাণ করেন নিজের অভিষেক ম্যাচেই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেকে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়া স্পার্স কানাডার জার্সি গায়ে নিজেকে কতটা উপরে নিয়ে যাবে সেটিই দেখার বিষয়!