কলম্বোর মধ্যরাতে জয়োল্লাস হবে কোন শিবিরে? এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে শেষ বল পর্যন্ত। কে বলে, ওয়ানডে ক্রিকেট মৃতপ্রায়! ওয়ানডে ক্রিকেটের রোমাঞ্চ এখনও শিহরণ জাগায় অজস্র ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে।
লঙ্কানদের সহজ জয়ের পথচলা তখন হঠাতই কাঠিন্যে রূপ নিয়েছে। ৬ বলে ৮ রানের সমীকরণ থেকে ২ বলে ৬! নখ কামড়ানো মুহূর্তের শুরু। চূড়ান্ত নাটকীয়তার প্রারম্ভিকাও তখনই। তবে অভিষিক্ত জামান খানকে হতাশায় ভাসিয়ে ৪ বের করে নেন চারিথ আসালাঙ্কা। পাকিস্তানের কাছ থেকে ম্যাচটা যেন হাত ফসকে বেরিয়ে যায় ঐ চারেই।
যদিও ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমাকে মাথায় এনে দৃশ্যপট বদলানোর লক্ষ্যে বুকভরা বল নিয়ে নব উদ্যমে বোলিং প্রান্তে ছুটে গিয়েছিলেন জামান খান। কিন্তু দৃশ্যপট আর বদল হয়নি। বরং সহজ ম্যাচ জয়ের পথে যারা এগিয়েছিল সেই লঙ্কানরাই শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসে।
তবে লঙ্কা-ভারত এ লড়াই জমিয়েছে আরেকটি কারণে। বাংলাদেশ আগেই বাদ পড়ে যাওয়ায় আর ভারত ফাইনাল নিশ্চিত করায় মূলত এ ম্যাচটিই হয়ে উঠেছিল অলিখিত সেমিফাইনাল। আর সেই ‘সেমি’ হেরে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে আগের ম্যাচ হারের প্রতিশোধের মঞ্চটাই পেল না পাকিস্তান।
তবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বলে তো একটা ব্যাপার আছে। আগেরবার পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। এবার আবারো সেই পাকিস্তানবধেরই পুনরাবৃত্তি হলো। তবে সেটা ফাইনাল যাত্রার অন্তিম বাঁধা হিসেবে। এখন এশিয়া কাপ ধরে রাখতে দাসুন শানাকাদের প্রয়োজন আর একটি মাত্র জয়।
১৭ সেপ্টেম্বরে কলম্বোর ফাইনালের আগে এখন একটিই প্রশ্ন– ভারতের ৮ম নাকি শ্রীলঙ্কার ৭ম? এশিয়া কাপ শিরোপা জয়ের দিক দিয়ে এই দুটি দেশই যে সবার উপরে। মহাদেশীয় আসরটা যে তাই সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হতে যাচ্ছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে শ্রীলঙ্কা দলটা বরাবরই বিস্ময়ে ভাসায়। গতবারের এশিয়া কাপে তাঁরা শুরুটা করেছিল আফগানদের বিপক্ষে হার দিয়ে। ভঙ্গুর দলটা নিয়ে তাই ক্রিকেট বিশ্লেষকদেরও প্রত্যাশা পৌঁছে গিয়েছিল তলানিতে। তবে সবাইকে তাক লাগিয়ে সেবার দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কানরা। টানা ৫ ম্যাচ জিতে এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তোলে তারা।
এবারের কথাই ধরা যাক। এশিয়া কাপের আগে দলের সেরা অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে গেলেন দল থেকে। শুধু হাসারাঙ্গা না, চোটের কারণে তিন পেসার দিলশান মাদুশঙ্কা, দুষ্মন্ত চামিরা ও লাহিরু কুমারাকেও হারায় লঙ্কানরা। অথচ সেই দলটিই কিনা এখন ফাইনালে! শ্রীলঙ্কার এ ছুটে চলা এখন আর শুধু বিস্ময়ই জোগায় না, প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সমীহ আদায় করে নিতে বাধ্য করে।
এশিয়া কাপের ইতিহাসে এ নিয়ে ১১ তম বারের মতো ফাইনালে উঠলো শ্রীলঙ্কা। ১৬ টা আসরের মধ্যে ১১ টা! এ সংখ্যাটা যেন আরো এক বিস্ময়। অর্থাৎ প্রায় ৪ দশকের মহাদেশীয় আসরটাতে যেন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলটার সাথে ফাইনাল মিশে আছে।
যদিও সর্বোচ্চ শিরোপার মালিক আবার ভারত। এবার অবশ্য সুযোগ থাকছে সেটিকে ছুঁয়ে ফেলার। লঙ্কানরা পারবে তো? প্রশ্নের উত্তরটা কলম্বোই দিবে। হয়তো সে মধ্যরাতটা হবে হতাশার নয়তো উল্লাসের। তবে ঘরের মাঠে ফাইনালের টিকিট পাওয়াটাই বা কম কীসে! লঙ্কানরা আপাতত সেই জয়োল্লাসে ভেসে যেতে পারে।