দরজায় কড়া নাড়ছে টোকিও অলিম্পিক গেমস ২০২০। আগামী ২৩ জুলাই জাপানের রাজধানী টোকিওতে শুরু হবে এবারের আসর। করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে পাক্তা এক বছর পিছিয়ে শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই আসর। বাংলাদেশেরও অংশগ্রহণও থাকছে।
যার মধ্যে রোমান সানা কোটা প্লেসের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করে টোকিও যাবার টিকিট কেটেছেন। বাকি যারা খেলবেন তাদের সবাইকে ওয়াইল্ড কার্ডের মাধ্যমে গেমসে অংশগ্রহনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যাদের আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বদান্যতায় খেলার সুযোগ হয়েছে তারা হলেন, সাতারু আরিফুল ইসলাম, জুনাইনা আহমেদ, শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকি ও আর্চার দিয়া সিদ্দিকী। ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ওয়াইল্ড কার্ড পেতে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেও পাননি। এসএ গেমসে টানা দুটি আসরে স্বর্ন জেতা সীমান্ত চরমভাবে হতাশ হয়েছেন।
- দুই বিশ্বকাপেই রোমান, দিয়ার প্রস্তুতি
সবার আগে টোকিও যায় রোমান সানা, দিয়া সিদ্দিকী ও আবদুল্লাহ হেল বাকি। সেখানে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন। মে মাসে সুইজারল্যান্ডের লুজানে বিশ্ব আর্চারী চ্যাম্পিয়নশিপে খেলে বাংলাদেশ। সেই দলে ছিলেন রোমা সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। এরপর কোরিয়াতে এশিয়ান আর্চারী চ্যাম্পিয়নশিপে এই দুজনের কেউই ছিলেন না। আবার ফ্রান্সের প্যারিসে বিশ্ব আর্চারী চ্যাম্পিয়নশীপে ষ্টেজ-৩ এ অংশ নেন দুজনেই। বিশ্ব আসরের আগে অলিম্পিক গেমসের জন্য বাছাই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন রোমান, দিয়া। রোমান সানা ২০১৯ সালে বিশ্ব আর্চারী চ্যাম্পিয়নশীপের সেমিফাইনালে উঠে টোকিও অলিম্পিকে খেলা নিশ্চিত করেন।
ব্রোঞ্চ জিতে দেশের ইতিহাসে প্রথম আচার হিসেবে অসামান্য এই অর্জন করেন রোমান। এরপর অনেককে নিয়ে আশা করা হলেও আর কেউ কোটা প্লেস পাননি। যেহেতু দুই মাসের মধ্যে দুটি বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক বাছাইয়ে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ, তাই সেখানেই অলিম্পিক গেমসের জন্য প্রস্তুতি অনেকটাই নেওয়া হয়েছে। অনুশীলনের পাশাপাশি ম্যাচ খেলার ঘাটতিও পূরণ হয়েছে।
অলিম্পিক গেমসে আর্চারদের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে আর্চারি ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক কাজি রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপল বলেন, ’বিশ্বকাপ আর্চারীতে খেলা রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকীর সবচেয়ে বড় প্রস্তুতিটা হয়েছে সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্সে। প্যারিস থেকে দেশে ফেরার পর করোনার টিকা দেওয়া পাশাপাশি টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাষ্টার ষ্টেডিয়ামে প্রস্তুতি নেবে অলিম্পিকের। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ খেলার কারণে প্রস্তুতিতে কোন প্রকার ঘাটতি থাকছেনা।’ রোমান, দিয়া দুজনেই প্রথমবার খেলছেন অলিম্পিকে।
- লন্ডনে জুনাইনা আর ফ্রান্সে আরিফুল
পরিবারের সাথে ইংল্যান্ডে থাকেন জুনাইনা আহমেদ। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত এই সাতারু ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে এবার টোকিও অলিম্পিকে খেলতে যাচ্ছেন। তবে আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে পারলে ভাল হতো। ১৭ বছর বয়সী এই সাতারু বিশেষ কোন অনুশীলন করতে পারছেন না। যে ক্লাবে অনুশীলন করে বড় হয়েছেন এখনো সেখানেই রয়েছে। করোনার কারণে অনুশীলনেও পড়েছে দীর্ঘ বিরতি।
সে কারণে ৫০ মিটারে জোর না দিয়ে ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটারের উপর বেশি জোর দিয়েছেন। অনুশীলনও করছেন দীর্ঘ সময় ধরে পানিতে থাকার। লন্ডনে নিয়মিত অনুশীলন করে জাতীয় সাঁতারে মাত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসে অনেকটাই নিস্প্রভ ছিলেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে যেখানে আটটি রেকর্ডসহ নয়টি স্বর্ণ জিতেছিলেন, সেখানে বাংলাদেশ গেমসে জিতেছেন মাত্র একটি স্বর্ণ। রেকডের্র কাছেই যেতে পারেননি জুনাইনা।
জুনাইনার প্রস্তুতি সম্পর্কে বাবা জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নিতে এখন সময় ব্যয় করছেন। দীর্ঘদিন পুলে না নামার কারণে প্রস্তুতিও নিতে পারছে না। এখন নিয়মিতই অনুশীলন করছে।’ এদিকে ফ্রান্সের অলিম্পিকের বৃত্তি নিয়ে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে করোনায় কিছুটা সমস্যা হলেও এখন পুরোদমে অনুশীলন করছে আরিফুল।
- জার্মানিতে নয় দেশেই প্রস্তুত হয়েছেন বাকি
রোমান সানা, দিয়া সিদ্দিকীর সাথে একই ফ্লাইটে টোকিও গেছেন শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকি। গেমস ভিলেজের শুটিং রেঞ্জে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন। তবে অনেক ইচ্ছা ছিল জার্মানীতে অল্প কয়েকদিনের জণ্য হলেও নিজেকে ঝালাই করে নেওয়ার। কিন্তু ভিসা জটিলতায় সেটাও সম্ভব হয়নি। ভিসা পেলে জার্মানির ডর্টমুন্ডে ট্যেনার হেইঞ্জ রেইকেমেয়ারের এমইসি শুটিং রেঞ্জে উচ্চতর প্রশিক্ষণে যাওয়ার জন্য ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল তাঁর।
কিন্তু, ভিসা জটিলতায় সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি কমনওয়েলথ গেমসে দুইবার রৌপ্যপদক জয়ী এই শুটারের। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে আর ভিসাই পাননি। জার্মান দূতাবাস থেকে বিষয়টি ভেবে দেখবে বলা হলেও পরে আর ভিসা পাননি। গুলশানের শুটিং রেঞ্জেই নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। বাকি নিয়মিতভাবেই মানসিক সমস্যায় ভোগেন। সর্বোচ্চ সাফল্যের খুব কাছে গিয়েও মনসংযোগ ধরে রাখতে পারেন না। এই সমস্যা একাধিক আসরে হয়েছে গাজীপুর জেলার এই শুটারের। সে কারণে অলিম্পিক গেমসের আগে প্রস্তুতির জন্য জার্মানি পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল বাকিকে। এর আগে ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে প্রথম খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন বাকি।
পাঁচ বছর আগে অনুষ্ঠিত এই আসরে ৬০ জনের মধ্যে ২৫তম হয়েছিলেন তিনি। এবার ফাইনালে খেলার লক্ষ্যেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন বাকি। এর আগে ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসের আগে হেইঞ্জের কাছে কিছু সময়ের জন্য অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছিলেন। রিও অলিম্পিকে বাকি ৬২১.২ স্কোর করেছিলেন। বর্তমানে অনুশীলনে গড় স্কোর ৬২৫। এই স্কোরটাকে আরও বাড়িয়ে নিতে চান তিনি। সেই লক্ষ্যেই জার্মানিতে অনুশীলন করবেন। পাশাপাশি শেষ আটে খেলাও লক্ষ্য রয়েছে তাঁর।
- নিজের মতোই প্রস্তুতি নিয়েছেন জহির রায়হান
সবার শেষে টোকিও যাবেন তিনি। অলিম্পিকে জহির রায়হানের মনোনয়ন নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা হয়েছিল। অ্যাথলেট বাছাই কমিটি যখন সংবাদ মাধ্যমে তাকে বাছাই না করার কথা বলেন তখন আর বুঝতে বাকি নেই ট্র্যাকের বাইরে কি হয়েছে। সে কারণেই দেশের দ্রুততম মানব মোহাম্মদ ইসমাইল লিখিত আবেদন করেছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) বরাবর।
এরপরই জহিরের টাইমিংসহ বর্তমান পারফরম্যান্সের একটা ডাটা অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের কাছে চাওয়া হয়। এদিকে দ্রুততম মানবী হিসেবে শিরিন আক্তার ক্ষুব্ধ ছিলেন। পরে আলাদা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করা হয় জহিরের জন্য। অনেকটা অস্বস্থি নিয়েই অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন ২০০ ও ৪০০ মিটারের এই প্রতিযোগী। অসুস্থ থাকায় বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস খেলতে পারেননি বলেই বেশি করে সমালোচনা হয়েছে। সবমিলিয়ে অনেকটা প্রতিকুল অবস্থায় থেকে অলিম্পিকের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন জহির। দেশের জন্য স্বরণীয় কিছু করাই এখন লক্ষ্য তাঁর।