বাড়ি ছাড়ার তাড়না

দলবদল ফুটবলেরই আরেক খেলা। এই খেলার মারপ্যাঁচে অপ্রত্যাশিত কত ঘটনাই ঘটে ফুটবল বিশ্বে। কোন ফুটবলার আসেন নতুন ঠিকানায়, কেউ আবার বিদায় বলেন পুরোনো-কে। আসা যাওয়ার এই মিছিল নিয়ে প্রতিবার ছড়ায় গুঞ্জন। ব্রেকিং নিউজ নিয়ে হইচই পড়ে যায় ভক্ত-সমর্থকদের মাঝে।

আবারও দলবদলের মৌসুম এসে গেছে। এবার মনোযোগের কেন্দ্রে আছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। বয়সটা ৩৭, তাতে কি এমন হয়েছে! ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের দলবদল নিয়ে মাতামাতির কোন শেষ নেই। গত মৌসুমের শুরুর দিকে ইতালিয়ান জায়েন্ট জুভেন্টাস ছেড়ে রোনালদো এসেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। কিন্তু একবছর যেতে না যেতেই আবারো পর্তুগিজ সুপারস্টারের দল ছাড়ার খবরে ছেয়ে গিয়েছে গণমাধ্যম। 

ইতোমধ্যে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো অফিশিয়ালি তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে। অথচ ব্যক্তিগত অর্জনের দিক থেকে শেষ মৌসুমটা একেবারে খারাপ যায় নি তাঁর। লিগে ৩০ ম্যাচ খেলে ১৮ গোল করে দলের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হয়েছিলেন। এছাড়া উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে ছয় গোল করে একাই দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন নক আউট পর্বে।

বেশ কয়েকবার জিতেছিলেন ক্লাবের মাস সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার, এছাড়া প্রিমিয়ার লিগের মাস সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছেন একবার। সেই সাথে মৌসুম শেষে রেড ডেভিলদের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছেন পর্তুগালের অধিনায়ক। তাছাড়া জায়গা পেয়েছেন প্রিমিয়ার লিগের বর্ষসেরা একাদশে। এতকিছুর পরেও দলীয় সাফল্য বলতে কিছুই জুটেনি এই তারকার ভাগ্যে। উল্টো পারফর্ম করার পরেও নানা অজুহাতে সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিল তাকে। 

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড পয়েন্ট টেবিলের ছয় নম্বরে থেকে শেষ করেছে লিগ। কোনমতে জায়গা পেয়েছে ইউরোপা লিগে। মূলত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্লাব ছাড়তে চাচ্ছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ক্যারিয়ারের প্রায় শেষদিকে এসে ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসরে খেলাটা চালিয়ে যেতে চান তিনি, এমন চাওয়া স্বাভাবিকও বটে। বর্তমানে রেড ডেভিলদের পুনর্নির্মাণের সময় চলছে, ৩৭ বছরের রোনালদো নিজের শেষ সময়ে এমন ক্লাবে থাকবেনই বা কেন। 

অবশ্য কিছুদিন আগেও রোনালদো ক্লাবে থাকার ব্যাপারেই ইতিবাচক ছিলেন। আশা করেছিলেন, নতুন কোচের পাশাপাশি নতুন খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হয়তো পরের মৌসুমে ‘টাইটেল রেস’-এ যোগ দিবে৷ কিন্তু ট্রান্সফার উইন্ডো প্রায় অর্ধেক শেষ হওয়ার পরেও ‘বিগ সাইনিং’ তো দূরে থাকা, মাঝারি মানের কোন খেলোয়াড়ও কিনতে পারেনি ক্লাব ম্যানেজম্যান্ট।

ক্লাব এবং ভক্তদের প্রতি রোনালদোর ভালবাসা এবং সম্মান রয়েছে। তবু নিজের বর্নাঢ্য এক ক্যারিয়ারের শেষসময়ে এসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগ হাত ছাড়া করতে চান না তিনি। এছাড়া মেজর ট্রফির জন্য লড়াই করবে এমন পরিবেশও দিতে ব্যর্থ হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই নতুন পরিচয় খুঁজতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো। 

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছে প্রকাশের পর থেকেই মোটামুটি নতুন ঠিকানা হিসেবে বেশ কয়েকটি ক্লাবের নাম সামনে এসেছে। এদের মধ্যে বায়ার্ন মিউনিখ, চেলসির মত বড় দল যেমন আছে তেমনি ন্যাপোলি, রোমার মত মাঝারি মানের দলও আছে। তবে এখন পর্যন্ত চেলসিই সবচেয়ে এগিয়ে আছে রোনালদোকে দলে ভেড়ানোর দৌড়ে।

ক্লাবটির নতুন মালিক টড বোহলি নিজের প্রথম সুযোগেই ক্লাবে দুই-একটি বড়মাপের খেলোয়াড় আনতে ইচ্ছুক। এই আমেরিকান পরবর্তী মৌসুমে দলের কোচ টমাস টুখেলকে পরিপূর্ণ একটি স্কোয়াড গড়ে দিতে চান। এছাড়া রোমেলু লুকাকু চেলসি ছেড়েছেন। আবার টিমো ওয়ার্নার এবং হাকিম জিয়েখকে বিক্রি করবে চেলসি। আর তাই, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে চেলসির জার্সিতে দেখতে বেশ আগ্রহী ক্লাবটির পরিচালকরা। এমতাবস্থায় রোনালদোর এজেন্ট হোর্হে মেন্ডেসের সঙ্গে সম্ভাব্য ট্রান্সফার নিয়ে আলোচনা করেছেব টড বোহলি।

এছাড়া ব্লুজদের কোচ টমাস টুখেল তো রোনালদোর অনেক বড় ভক্তই বটে। গত মৌসুমে রেড ডেভিলের বিপক্ষে খেলার সময় রোনালদোর ভুয়সী প্রশংসা করতে দেখা গিয়েছে এই জার্মানকে। আর তাই তাকে নিজের শিষ্য হিসেবে পেলে খুশিই হবেন এই ট্যাকটিশিয়ান।

অবশ্য এখনো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে নিজেদের শিবিরে রাখতে আগ্রহী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। রোনালদোর ব্যাপারে ‘নট ফর সেল’ ট্যাগও লাগিয়ে দিয়েছে তারা। বর্তমান কোচ এরিক টেন হ্যাগ এই স্ট্রাইকারকে কেন্দ্র করেই তাঁর পরবর্তী মৌসুমের পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। এছাড়া নতুন কোন স্ট্রাইকারকে সাইন করানোর সম্ভাবনা নেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। আর তাই পর্তুগিজ সেনসেশনকে আরো অন্তত একটি মৌসুম লাল জার্সিতে রাখতে শেষ চেষ্টা করবে দলটি।

ট্রান্সফার উইন্ডোতে ভাল ভাল খেলোয়াড়দের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করার পর পরবর্তী মৌসুমের প্লেয়িং প্ল্যান দিয়ে রোনালদোকে সন্তুষ্ট করতে পারলে হয়তো পুরোনো ক্লাবেই থাকবেন ক্রিশ্চিয়ানো। আর যাইহোক, আজকের ক্রিশ্চিয়ানো হয়ে উঠার পিছনে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের অবদান তো অস্বীকার করা যায় না।

মাঠের খেলায় রোনালদো যেমন যেকোনো মুহূর্তে খেলার ফলাফল বদলে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন তেমনি ট্রান্সফার উইন্ডোতেও যেকোনো সময় রোনালদোর ভাগ্যে নতুন কিছু ঘটতে পারে। আপাতত গুঞ্জনের ভিড়ে কাটুক সময়। খুব শীঘ্রই হয়তো রোনালদোকে দেখা যাবে নতুন কোন জার্সিতে, কিংবা রেড ডেভিলদের পুরোনো ঋন শোধের জন্য আরো একটি মৌসুমে হয়তো ক্লাবটিকে সেবা দিতে রাজি হবেন এই কিংবদন্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link