২৯ বছরের অপেক্ষার অবসান। অবশেষে ঘরের মাঠে আইসিসির কোন ইভেন্ট আয়োজনের সুযোগ পেয়েছিল পাকিস্তান, কিন্তু স্বাগতিক দর্শকেরা সমর্থন দিবে কাকে? নিজেদের দলই তো বাদ পড়ে গেলো দুই ম্যাচ খেলেই, স্রেফ দুই ম্যাচেই ২৯ বছরের অপেক্ষা ধুলোয় মিশিয়ে গেল। এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপে ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখল তাঁরা।
আর এর পিছনে লুকিয়ে আছে অবিশ্বাস্য এক উপন্যাস – ২৬ জন নির্বাচক, চার জন অধিনায়ক, আটজন কোচ এবং ভুলে ভরা একটা সিস্টেম মিলে যে উপন্যাস সাজিয়েছে। প্রতীকী আলাপ বাদ দিয়ে পরিসংখ্যানে ফিরি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দলটিতে স্থিতি বলতে আদৌ কি কিছু ছিল?
গত তিন বছরে সবমিলিয়ে ২৬ জন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি পেয়েছিলেন দল নির্বাচনের দায়িত্ব, দেশি-বিদেশী মিলিয়ে আটজন বসেছেন কোচের আসনে; আবার চারজনের বাহুতে যোগ হয়েছে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড, সেখানেও আবার আছে জটিলতা। এমন উথালপাতাল ঢেউ বুকে নিয়ে চলতে থাকা নদী কি আর সাগরের দেখা পায়?
উত্তরসূরীদের পারফরম্যান্স নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ওয়াসিম আকরাম বলেছিলেন যে, পাকিস্তানের আসলে শক্তির জায়গা বলতে কিছু নেই। সত্যিই তাই, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একবার ফাইনাল আর একবার সেমিফাইনাল খেলা ছাড়া তাঁদের অর্জন কি? ওয়ানডে বিশ্বকাপ কিংবা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে তাঁরা কিছুই করতে পারেনি।
অথচ এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে আত্মবিশ্বাস ফুলেফেঁপে উঠেছিল বাবর আজমদের, অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ হারিয়ে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। কিন্তু কিসের কি, মূল মঞ্চে এসে ঠিকই সব এলোমেলো হয়ে গেলো।
ঐতিহাসিকভাবে পেস নির্ভর হলেও পাকিস্তানের স্কোয়াডে সবসময়ই একাধিক বিশ্বসেরা ব্যাটার থাকতেন। অথচ এখন তাঁদের সেরা ব্যাটার বাবর, যিনি কি না ফ্যাভারিট ফোরের চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে। বাকিরা কেউ তো প্রতিপক্ষকে এতটুকু চিন্তিতও করতে পারেননি।
আকিভ জাভেদ যখন নভেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন জানিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আপাতত তাঁর প্রধান লক্ষ্য। সেজন্য সবার আগে দলে স্থিতিশীলতা চান তিনি। কিন্তু তা আর হলো কই, ম্যানেজম্যান্টে একগাদা পরিবর্তন এসেছিলো, আবার নতুন যারা এসেছেন তাঁরাও টুর্নামেন্ট শুরুর আগ পর্যন্ত স্কোয়াড চূড়ান্ত করতে পারেননি। শেষমেশ গোঁজামিলে ভরা একটা স্কোয়াড সাজিয়েছেন।
সায়িম আইয়ুবের চোটের ব্যাপারটা ভিন্ন, কিন্তু ২০২৩ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম করা আবদুল্লাহ শফিককে কেবল একটা সিরিজে খারাপ করায় বাদ দেয়া ভাল সিদ্ধান্ত ছিল না। এছাড়া একবছরের বেশি সময় জাতীয় দলের বাইরে থাকা ফাহিম আশরাফকে ফেরানো হয়েছে, উপমহাদেশীয় কন্ডিশনে খেলা হওয়া সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞ স্পিনার নেয়া হয়েছে স্রেফ একজন।
তবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল বোলিং; কত শতবার দুর্দান্ত এক স্পেলে ম্যাচের গতিপথ বদলে দিয়েছিলেন পাক তারকা। অথচ এবার শাহীন শাহ, হারিস রউফ কিংবা নাসিম শাহ কেউই সেটার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারেননি। এমনকি ভারত বা নিউজিল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মত পারফরম্যান্সও পাওয়া যায়নি তাঁদের থেকে।
পাকিস্তানে আসলে বদলেছে কি? প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বুক চিতিয়ে লড়বার মত চরিত্র হারিয়ে গিয়েছে; চাপে থেকেও আক্রমণাত্বক হয়ে উঠার সাহস হারিয়ে গিয়েছে। আনপ্রেডিক্টেবল থেকে বড্ড সাদামাটা – ১৯৯২ এর বিশ্বকাপজয়ীদের অধঃপতন এখন স্বচ্ছ জলের মত স্পষ্ট।