কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারের টেস্ট ৩৪ টা সেঞ্চুরি আছে। কিন্তু যখনই ওনাকে নিজের সেরা ইনিংস বাছতে বলা হয় তখনই উনি ওল্ড ট্রাফোর্ডে ১৯৭১ সালে করা নিজের ৫৭ রানের একটা ইনিংসের কথা বলেন। কারণ, হিসাবে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, ম্যাচে দলের পজিশন, পিচের ধরণ, বিপক্ষের বোলারদের নিরীখে নিজের ঐ হাফ সেঞ্চুরিটাকে অন্যান্য সেঞ্চুরি বা ডাবল সেঞ্চুরির মত বড় ইনিংসগুলোর চেয়েও এগিয়ে রাখেন।
গাভাস্কার যখন ঐ ইনিংস খেলেছিলেন তখন আমি শিশু। গতকাল ঋদ্ধিমান সাহার ওই দুধর্ষ ৬১ রানের ইনিংসটা আমাকে সুনীল গাভাস্কারের ওই ৫৭ রানের ইনিংসের মর্ম বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।
কানপুরে শারিরীক যন্ত্রনা, পারিপার্শ্বিক চাপ, ম্যাচের পরিস্থিতি সব সামলে যে পরিস্থিতিতে এই অসাধারণ ইনিংস খেললেন তাঁর প্রশংসা করার জন্যে কোনোও ভাষা নেই। যখন ঋদ্ধি ব্যাট করতে নেমেছিলেন তখন থেকে ওনার নট আউট থেকে প্যাভিলিয়নে ফেরা পর্যন্ত নিজের জায়গা থেকে নড়িনি। উৎকর্ষতার বিচারে ঋদ্ধির এই ইনিংসটা ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির হল অফ ফেমে স্থান পাওয়ার যোগ্য। সেটা হোক বা না হোক আপামর ক্রিকেটপ্রেমীদের মনিকোঠায় ঋদ্ধির এই লড়াকু ইনিংস সারা জীবন জ্বলজ্বল করে থেকে যাবে।
ইনিংসটা এখনো চোখে ভাসছে। এর হ্যাং ওভার চট করে যাওয়ার নয়।
এটা তো শুধু নিছক ক্রিকেট নামের একটা খেলার টেস্ট বলে একটা ফরম্যাটের কিছু রানের ইনিংস নয়, ঋদ্ধিমান সাহার করে যাওয়া গোটা ব্যাপারটা জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও একটা দৃষ্টান্ত। খুব মানসিক চাপে থাকা মানুষদের কাছে এই ইনিংসটা একটা মোটিভেশনের কাজ করবে। বিধ্বস্ত মানুষের কাউন্সেলিং হয়ে যাবে ঋদ্ধির এই গোটা ইনিংসের ব্যাটিংটা দেখলে।
কানপুরে গতকাল একটা বল ওনার ব্যাটের এজ ছুঁয়ে মাইক্রো সেকেন্ডেরও কম সময়ে কিউয়ী উইকেট কীপারের গোড়ালির ওপরে লাগে। তখন কমেন্ট্রিতে আকাশ চোপড়া বলেছিলেন যদি ব্যাটসম্যান আর কীপার দুটোই একই সাথে ঋদ্ধিমান সাহা হোতো একমাত্র তাহলেই একটা হাফ চান্স বলা যেতে পারতো। এই একটা মন্তব্যই ক্রিকেটার ঋদ্ধিমান সাহার ওজন বুঝিয়ে দেয়।
ঋদ্ধিমান সাহার কোনো বিকল্প নেই। উইকেটের পেছনে যে নেই, সেটা সবাই মানেন – এবার উইকেটের সামনেও নির্ভরযোগ্যতার প্রমাণ দিলেন আবার। ঋদ্ধিমান সাহার একটাই রিপ্লেসমেন্ট সেটা ঋদ্ধিমান সাহা নিজে। যতদিন ক্রিকেট থাকবে ততদিন ঋদ্ধিমান সাহারাও থেকে যাবে। ঋদ্ধিমান এগিয়ে চলুন আমাদের আরো সমৃদ্ধ করুন।