মৌসুমের চারভাগের তিনভাগের ইতি ঘটেছে ইতোমধ্যে।
সিরি ‘এ’, ইংলিশ লিগের দৌঁড়ে অন্যান্য দলদের সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় করা শুরু করে দিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি আর ইন্টার মিলান। লা লিগা, ফ্রেঞ্চ লিগ আর বুন্দেসলিগায় এখনও লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। ‘কেহ কাহরে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’ অবস্থা। এর মধ্যে মৌসুমের সেরা গোলদাতার তালিকাতেও চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। গত মৌসুমে বড় বড় নামকে ফাকি দিয়ে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জিতে নিয়েছিলেন নাপোলির স্ট্রাইকার চিরো ইমোবিলে। এবার অবশ্য লিস্টে বড় বড় নামই রয়েছে।
এই তালিকা মূলত পয়েন্ট ভিত্তিতে গড়া হয়। যে যত বড় লিগে খেলে, তার গোলের মূল্য তত বেশী। ইউরোপের টপ ফাইভ লিগ (ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি) খেলোয়াড়রা গোলপ্রতি পায় দুই পয়েন্ট। বাকি সব লিগের খেলোয়াড়েরা পায় ১.৫ পয়েন্ট করে। ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুটের ক্ষেত্রে শুধু লিগের গোলই কাউন্ট করা হয়।
- ক্যাসপার জানকার: ২৭ গোল (৪০.৫ পয়েন্ট)
নামটা অপরিচিত লাগছে? লাগাটাই স্বাভাবিক। নরওয়ের এই ২৭ বছর বয়সী স্ট্রাইকার এই মৌসুমেই গোলে ফুলে ফেপে উঠেছেন। নরওয়েজিয়ান লিগের দল এফকে বোদোর জার্সিতে করেছেন ২৭ গোল। তাও মাত্র ২৫ ম্যাচে। তালিকার দ্বিতীয় প্লেয়ার তিনি, যার গোল/ম্যাচ রেশিও ১ এর বেশি। জিতিয়েছেন লিগ শিরোপা। আর তাতেই তার জায়গা হয়ে গিয়েছে এই তালিকায়। ইতোমধ্যে মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁর গোল বাড়ার সম্ভাবনাও আর নেই।
- পল ওনাচু: ২৭ গোল (৪০.৫ পয়েন্ট)
তালিকার এই নামটাও অপরিচিত। ২৬ বছর বয়সী বেলজিয়ান সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড খেলেন জেঙ্কের হয়ে। এই মৌসুমে ৩২ ম্যাচে ২৭ গোল করলেও আগেরজনের মতন লিগ জেতাতে পারেননি তিনি। বরং তার দল আছে তৃতীয়তে। যদিও হাতে আরও একটি ম্যাচ আছে বৈকি, কিন্তু সে ম্যাচে শুদু নিজের গোলসংখ্যাই বাড়াতে পারবেন তিনি, আর বেশি কিছু হওয়ার সুযোগ নেই।
- রোমেলু লুকাকু: (২১ গোল, ৪২ পয়েন্ট)
রোমেলু লুকাকুকে নিয়ে যতকিছুই লেখা হোক কম হয়ে যাবে। ইন্টারের জার্সিতে ভেঙ্গেছেন রোনালদো লিমার রেকর্ড। এরপর আর বলার কিছু থাকে? ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে বাজে মৌসুম কাটিয়ে কন্তের ভরসায় ইতালি পারি দিয়েছিলেন লুকাকু। আর সেটাই শাপেবর হয়েছে তাঁর জন্য। নেরাজ্জুরিদের জার্সিতে ২৯ ম্যাচে করেছেন ২১ গোল। ১০ বছর পর লিগ শিরোপা জেতার হাতছৌয়া দূরত্বে দাঁড়িয়ে ইন্টার। সব মিলিয়ে ‘ফুরিয়ে যাওয়া লুকাকু’ আবার ঘুরে দাড়িয়েছেন নিজের পায়ে, নিজের সেরাটা দিয়ে। বাকি ৮ ম্যাচে কত গোল করতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়।
- কিলিয়ান এমবাপ্পে: (২১ গোল, ৪২ পয়েন্ট)
ইঞ্জুরি আর কোভিডের কারণে গত মৌসুমে নিজের ফর্ম হারিয়ে ফেলেছিলেন এমনাপ্পে। তাতেই যেন গেল গেল রব উঠেছিল চারিদিকে। কিন্তু মৌসুম ঘুরতে না ঘুরতেই নিজের সেরাটা নিয়ে ফেরত এসেছেন এই ফ্রেঞ্চ তারকা। এই মৌসুমেও চোটের কারণে বেশ কয়েক ম্যাচ মিস করলেও সদর্পে ফিরেছেন। ২৭ ম্যাচে ২১ গোল নিয়ে তিনিও আছেন যৌথভাবে তালিকার চতুর্থতে।
- আর্লিং হাল্যান্ড: (২১ গোল, ৪২ পয়েন্ট)
গত মৌসুমের মাঝপথে নরওয়ে থেকে তাকে উড়িয়ে এনেছিল বুরুশিয়া ডোর্টমুন্ড। কথা একটাই, জেনারেশনাল ট্যালেন্ট এই গোলস্কোরারকে হারছাড়া করতে চায়নি তারা। ফলাফলও দিয়েছেন তিনি দুই হাত ভরে। মৌসুমের শুরু থেকেই তার গোলবন্যা চলছেই। নরওয়ে থেকে বুন্দেসলিগায় এসে মানিয়ে নিতে বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি তার। বরং এই মৌসুমে ২৩ ম্যাচে ২১ গোল করে এমবাপ্পে, লুকাকুর সাথে তিনিও আছেন যৌথভাবে চার নম্বরে।
- লিওনেল মেসি: (২৩ গোল, ৪৬ পয়েন্ট)
সেরা গোলদাতার তালিকা হবে আর লিওনেল মেসি থাকবেন না, এমনটা কী কখনও হতে পারে? তবে এবারও হয়নি। ছয়বারের গোল্ডেন বুট উইনার আর্জেন্টাইন এবার আছেন তালিকাত তৃতীয়তে। যদিও এই মৌসুমে পুরোপুরি প্লে মেকিংয়ে থিতু হয়েছেন মেসি। তাতে কী? জায়গা বদলেছে, ট্রেনিং তো জমা দেননি। ঠিকই এখনও বার্সার গোলস্কোরার তালিকার শীর্ষে মেসি। ২৮ ম্যাচে ২৩ গোল করে যৌথভাবে তৃতীয় তিনি।
- আন্দ্রে সিলভা: (২৩ গোল, ৪৬ পয়েন্ট)
তালিকার এই নামটা বেশ অবাক করার মতৈ। কয়েক মৌসুম আগে তাকে বড় আশা করে পত্ত্যুগাল থেকে কিনে এনেছিল এসি মিলান। পর্তুগালও ভেবেছিল রোনালদোর পর স্ট্রাইক ফোর্সে ভরসা করবার মতন হউতো কাউকে পাওয়া গেল। কিন্তু যারপনাই হতাশ করেছেন সিলভা। এমনকি লা লিগাতে সেভিয়ার জার্সিতেও বলার মতন কোনো পারফরম্যান্স ছিল না। কিন্তু ইউরো সামনে আসতে না আসতেই খোলস ছেড়ে বেরিয়েছেন সিলভা। ফ্রাংকফ্রুটের জার্সিতে ২৬ ম্যাচে করেছেন ২৩ গোল। ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকাত তৃতীয়তে তিনি।
- ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো: (২৫ গোল ৫০ পয়েন্ট)
এ বছরের তালিকায় মেসির থেকে এগিয়ে আছেন রোনালদো। দুজনে দুই লিগে চলে গেলেও তাদের মধ্যকার লড়াইটা থামেনি। জুভেন্টাসের জার্সিতে ২৭ ম্যাচে করেছেন ২৫ গোল। যদিও এ নিয়ে রোনালদোর হতাশার শেষ নেই। জুভেন্টাস মতন ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলা দল থেকে ২৫ গোল পাওয়াও চাট্টিখানি কথা নয়। লিগের শেষ ৮ ম্যাচ থেকে বেশ ভালোই সুযোগ আছে ক্যারিয়ারের পঞ্চম গোল্ডেন বুট অর্জন করার।
- রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি: (৩৫ গোল ৭০ পয়েন্ট)
মৌসুমের অন্য কোনো সময় হলে রবার্ট লেওয়ান্ডস্কিকে গোল্ডেন বুট তুলেই দেওয়া যেত। গত দশকের সেরা তিন স্ট্রাইকারের একজন হয়েও কখনও গোল্ডেন বুট ছোঁয়া হয়নি তাঁর। গত মৌসুমে ব্যালন ডি’অর বাতিল না হলে অবশ্য সেখানেও ভাগ বসানোর সুযোগ থাকতো তার। কিন্তু এবারে বাঁধ সেধেছে তার ইঞ্জুরি। চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়াটারের আগের চোটে বেশ ভুগতে হয়েছে তাকে। চোট থেকে ফিরে রেইসে ব্যাক করা সহজ হবে না তার জন্য। কিন্তু অ্যাডভান্টেজ হিসেবে আছে ১০ গোলের ব্যবধান। এই ব্যবধান কমাতে না পারলে মৌসুমের বাকিটা না খেলেই ক্যারিয়ারের প্রথম গোল্ডেন বুট উঁচিয়ে ধরার সৌভাগ্য হবে পোলিশ স্ট্রাইকারের।