ছোট ভাইয়ের মত তাঁর ক্রীড়া যাত্রাটাও শুরু হয়েছিল ফুটবল দিয়েই। তবে উচ্চতা কম থাকায় ফুটবলে এক ট্রায়াল থেকে বাদ পড়ে যান। সেই বাদ পড়াই যেন তৈরি করেছিল নতুন এক কিংবদন্তি। ফুটবল ছেড়ে তিনি আসলেন ক্রিকেটে। এরপর কাউন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হয়ে উঠেন তিনি।
পুরো ক্যারিয়ার খেলেছেন মিডলসেক্সের হয়ে। দলটিরই অধিনায়কও ছিলেন প্রায় ১৫ বছর। ইংল্যান্ডের এই কিংবদন্তি আবার স্বীকার হয়েছিলেন শেন ওয়ার্নের বল অব দ্য সেঞ্চুরির। সবমিলিয়ে মাইক গ্যাটিং ছিলেন ইংল্যান্ড ক্রিকেটের এক বর্ণাঢ্য চরিত্র।
ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেটে আসার পর আর কখনো ফিরে তাকাতে হয়নি মাইক গ্যাটিংকে। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। কাউন্টি ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের পুরাটা সময় অর্থাৎ প্রায় দুই যুগ খেলেছেন মিডলসেক্সের হয়ে। এর মধ্যে ১৯৮৩-১৯৯৭ টানা ১৫ বছর দলটির অধিনায়ক ও ছিলেন তিনি।
ফলে ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় এই ব্যাটিং অলরাউন্ডারের। তবে জাতীয় দলের হয়ে শুরুটা খুব ভালো হয়নি তাঁর। কোনোভাবেই বড় ইনিংস খেলতে পারছিলেন না এই ব্যাটসম্যান। তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি আসে ৫৪ তম ইনিংসে।
তবে, এরপর আস্তে আস্তে ইংল্যান্ডে ব্যাটিং লাইন আপের ভরসা হয় উঠেছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে ৭৯ টেস্টে ৩৫.৫৫ গড়ে করেছেন ৪৪০৯ রান। টেস্টে ১০ টি সেঞ্চুরি ও একটি ডাবল সেঞ্চুরিও আছে তাঁর ঝুলিতে। ওদিকে ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৯.৫০ গড়ে করেছেন ২০৯৫ রান। ওদিকে ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যায় ভেসেছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ৫০ গড়ে করেছেন ৩৬ হাজারের বেশি রান। লিস্ট এ ক্রিকেটেও ১৪ হাজার রানের মালিক তিনি।
গ্যাটিং মূলত তাঁর ব্যাটিং এর জন্য পরিচিত হলেও বল হাতে যথেষ্ট কার্যকর ছিলেন এই অলরাউন্ডার। ডান হাতি এই মিডিয়াম পেসার ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় ৩০০ এর বেশি উইকেট নিয়েছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও লিস্ট এ ক্রিকেটে তাঁর বোলিং গড় যথাক্রমে ২৯.৭৬ ও ২৭.৫২। ফলে ঘরোয়া ক্রিকেটে যথেষ্ট সফল হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেভাবে বোলিং করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
এছাড়া বেশি কিছু উদ্ভট ঘটানার সাথে জড়িয়ে আছেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে সমান সংখ্যক টেস্ট ও ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন এই ক্রিকেটার। তাঁর ক্যারিয়ারে ৫৫১ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ও ৫৫১ টি লিস্ট এ ম্যাচ খেলার রেকর্ড রয়েছে। আবার ১৯৮৭ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের প্রথম বলে রিভার্স সুইপ করেও সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি।
ওদিকে এক অ্যাশেজ সিরিজে নতুন এক বোলার নিয়ে এল অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের হয়ে সেই বোলারকে সামলাবেন গ্যাটিং। নতুন সেই ছেলেটা ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁর প্রথম বলেই ভড়কে দিল গোটা ক্রিকেটবিশ্বকে। লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে পড়া একটা বল আঘাত করলো গিয়ে স্ট্যাম্পে। অসহায় আত্মসমর্পণ করলেন গ্যাটিং। নতুন সেই ছেলেটার নাম শেন ওয়ার্ণ। পরবর্তীকালে ওই বলটাই ঘোষিত হয়েছিল বল অব দ্য সেঞ্চুরি হিসেবে।
আবার পাকিস্তানের বিতর্কিত আম্পায়ার শাকুর রানার সাথেও জড়িয়ে গিয়েছিলেন তর্কে। সেই সময় ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন মাইক গ্যাটিং। তাঁর বিরুদ্ধে ফিল্ডিং সেটাপ নিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগ তুলেন শাকুর রানা। যদিও সেই সিদ্ধান্তের জন্য শাকুর রানাই বেশি সমালোচিত হয়েছিলেন। তবে পরেরদিন ম্যাচ চালিয়ে নেয়ার জন্য লিখিত ক্ষমা চাইতে হয়েছিল গ্যাটিংকে।
১৯৮৮ সালে তিনি অধিনায়কত্ব হারান। এক বারকর্মীরা সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সংবাদ মাধ্যমগুলো ফলাও করে সেই খবর প্রচার করে। যদিও, পরের বছরই তিনি বিদ্রোহী সফরে অধিনায়ক হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করে। ক্যারের শেষ ৫১ টি টেস্টে করতে পারেন মাত্র একটা সেঞ্চুরি। ১৯৯৫ সালে তাঁর ক্যারিয়ারের পর্দা শেষবারের মত নেমে যায়।
সবমিলিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনায় মাইক গ্যাটিং ইংল্যান্ড ক্রিকেটে এক অবিস্মরণীয় চরিত্র। কাউন্টি ক্রিকেট তো বটেই ইংল্যান্ড ক্রিকেটেও সেই সময় অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি।
তাঁর ক্যারিয়ারটাকে স্পষ্ট তিনভাগে ভাগ করা যায় – প্রথম যুগের সেঞ্চুরিহীন সাত বছরের ৫৩ ইনিংস, পরের ২৮ টেস্টে ৬৩ গড়ে করা তিনটি সেঞ্চুরি, শেষ ধাপে ৫১ টি টেস্টে এক সেঞ্চুরি। ধারাবাহিক ভাবে ব্যাটিং করতে পারলে হয়তো তিনি ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন হিসেবে বিবেচিত হতেন।