আসিফ ইকবাল, অসাধ্য সাধনের বিশেষজ্ঞ
ছোটবেলা থেকে হয়তো সবাই শৈশবের নায়কের মতোই হতে চায়। আসিফও ব্যতিক্রমী নন। কিশোর বয়সে সিদ্ধান্ত নেন চাচার মতো ক্রিকেটজীবনকে বেছে নেয়ার। মিডিয়াম পেসার আসিফ সু্যোগও পেয়ে যান রঞ্জি ট্রফির দলে। ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের ভারত সফরের সময় প্রস্তুতি ম্যাচে সাউথ জোনের হয়ে খেলেন তিনি। ভাগ্যের কি মারপ্যাঁচ! পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক কিনা ম্যাচ খেলছে তাদেরই বিপক্ষে তাও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে।
পুরো পৃথিবীজুড়ে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল। ভাঙনের হাওয়া লেগেছে ভারতীয় উপমহাদেশেও। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় যখন পুরো উপমহাদেশ টালমাটাল ঠিক সেসময় ভারতের হায়দ্রাবাদে (বর্তমানে তেলেঙ্গানা) সম্ভ্রান্ত রিজভি পরিবারে জন্ম হলো এক শিশুর। তার নাম রাখা হল আসিফ ইকবাল রিজভি। আসিফের চাচা গুলাম আহমেদ তখন ভারতীয় দলের অধিনায়ক। যৌথ পরিবার হবার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি আসিফের।
ছোটবেলা থেকে হয়তো সবাই শৈশবের নায়কের মতোই হতে চায়। আসিফও ব্যতিক্রমী নন। কিশোর বয়সে সিদ্ধান্ত নেন চাচার মতো ক্রিকেটজীবনকে বেছে নেয়ার। মিডিয়াম পেসার আসিফ সু্যোগও পেয়ে যান রঞ্জি ট্রফির দলে। ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের ভারত সফরের সময় প্রস্তুতি ম্যাচে সাউথ জোনের হয়ে খেলেন তিনি।
ভাগ্যের কি মারপ্যাঁচ! পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক কিনা ম্যাচ খেলছে তাদেরই বিপক্ষে তাও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে। ১৯৬১ সালে পুরো পরিবারসহ পাকিস্তানে চলে যান আসিফ। সরফরাজ নওয়াজ, ফজল মাহমুদের মতো পেসাররা যেখান থেকে উঠে এসেছেন সেই করাচিতে এসে নিজের নতুন আবাস গড়েন আসিফ। আয়ত্ব করেন দুই দিকেই বলকে সুইং করানোর দক্ষতা, পাশাপাশি নিচের দিকে নেমে টুকটাক ব্যাট চালাতে পারতেন তিনি।
ঘরোয়া ক্রিকেটে করাচি এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের হয়ে দারুণ পারফর্ম করার পর ১৯৬৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে পাকিস্তান দলে ডাক পান তিনি। সেই সিরিজে আসিফ নতুন বলে বল করেন এবং দশ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন। ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ড সফরের আগে আসিফ খুব খারাপ পারফর্ম করছিলেন। দল থেকে বাদ পড়েন যান এমন অবস্থা। তখন আসিফ সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হবেন, এক সিদ্ধান্তেই ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল তার ক্যারিয়ারের গতিপথ।
লর্ডসে প্রথম টেস্টে ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ১৩৯ রানে সাত উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে। হানিফ মোহাম্মদ একপ্রান্ত আগলে রাখলেও অপরপ্রান্তে লেগেছে আসা-যাওয়ার মিছিল। এমন অবস্থায় নয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে আসিফ খেললেন ৭৬ রানের দারুণ এক ইনিংস এবং হানিফ মোহাম্মদের সাথে গড়লেন ১৩০ রানের জুটি। তাদের জুটির ফলেই পাকিস্তান ম্যাচটি ড্র করতে সক্ষম হয়। তবে আসিফের ব্যাটিং প্রদর্শনীর সবচেয়ে শৈল্পিক রূপটি দেখা যায় ওভালে তৃতীয় এবং শেষ টেস্টে।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ২১৬ রানে। জবাবে ইংল্যান্ড পায় ৪৪০ রানের দারুণ এক সংগ্রহ। দ্বিতীয় ইনিংসে যেন আরো দুরবস্থায় পড়ে পাকিস্তান দল, কেন হিগস এবং ডেরেক আন্ডারউডের বোলিংয়ে ৬৫ রানেই হারায় আট উইকেট। গ্যালারিতে তখন ইংরেজ দর্শকদের বিদ্রুপের ফুলঝুরি ছুটছে, লাঞ্চের আগেই ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে এ কারণে দর্শকদের বিনোদন দিতে ৪০ ওভারের ম্যাচ আয়োজন করা যায় কিনা এমন প্রস্তাবও উঠলো।
আর এ ব্যাপারটাই তাতিয়ে তুললো আসিফকে, উইকেটে এসেই শুরু করলেন লড়াই। ইন্তিখাব আলমকে সঙ্গে নিয়ে গড়লেন ১৯০ রানের জুটি, নিজে খেললেন ১৪৬ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। ২১ চার এবং দুইটি ছয়ের মারে দুই ঘন্টা ১৯ মিনিট ব্যাট করে যখন ব্রায়ান ক্লোসের বলে আউট হয়ে ফিরছেন ওভালের দর্শক তখন উঠে দাঁড়িয়েছে তাকে অভিবাদন জানাতে। ১৯৬৮ সালে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন তিনি।
ইংল্যান্ড সিরিজের পরই পরিবর্তন আসে আসিফের ক্রিকেটজীবনে। মিডল অর্ডারে প্রমোশন পান। কয়েকবছরে মাঝেই খ্যাতি লাভ করেন স্টাইলিশ এক ব্যাটসম্যান হিসেবে। পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত আসিফ হুক এবং পুল শট খেলতেন দারুণ। ১
৯৬৮ সালে সুযোগ পান কেন্টের হয়ে কাউন্টি খেলার। ১৯৭৭ সালে সিডনিতে ডেনিশ লিলি- গ্যারি গিলমোরদের সামলে খেলেন ১২০ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। ১৯৭৯ সালে অধিনায়ক হিসেবে পাকিস্তানের তুলেন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। ১৯৮০ সালে ইডেন গার্ডেনসে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেটজীবনকে বিদায় জানান আসিফ।
অবসরের পর আসিফ শারজায় ক্রিকেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হন। ১৯৯৩ সালে আইসিসি ম্যাচ রেফারি হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। জীবনের বহু বসন্ত পার করে আসিফ এখন লন্ডনের বাসিন্দা। শেষ বয়সে এসে নাতি-নাতনিদের সাথেই সময় কাটে এখন আসিফের।