তিলক ভার্মা, ভারতের বিজয়ী তিলক

বয়সটা সবেমাত্র পেরিয়েছে বিশের কোঠা। ইতোমধ্যেই বনে গেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তারকাদের একজন। ছোটদের বিশ্বকাপ, আইপিএল কিংবা এ দল – সবখানেই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন এই তারকা। তিনি তিলক ভার্মা, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের নতুন দিনের তারকা। হতে পারে তিনিই ভারতীয় ক্রিকেটের নেক্সট বিগ থিঙ।

অথচ পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না তিলকের। বিদ্যুৎ মিস্ত্রী বাবার সামর্থ্য ছিল না ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর। তিলকও সেটা মেনে নিয়েই মনোযোগ দিয়েছিলেন পড়ালেখাতেই। ক্রিকেট বলতে তাঁর কাছে বন্ধুদের সাথে পাড়ায় টেপ টেনিস খেলাতেই সীমাবদ্ধ। 

কিন্তু সবকিছু বদলে দেয় ১১ বছর আগের এক ঘটনা। সেদিন হায়দ্রাবাদের ক্রিকেট কোচ সালাম বায়াশ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পান দশ বছর বয়সী এক ছেলের ব্যাটিং। জহুরির চোখে রত্ন চিনতে ভুল করেননি তিনি, তিলকের পরিবারকে রাজি করিয়ে নিয়ে আসেন নিজের একাডেমিতে। 

এরপরের সময়টা কেবলই তরতর করে উপরে উঠবার। হায়দ্রাবাদের বয়সভিত্তিক দল কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটের গণ্ডী  পেরিয়ে জায়গা করে নেন দক্ষিণ আফ্রিকাগামী ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। 

কিন্তু, সেবারের বিশ্বকাপটা মোটেই ভালো কাটেনি তিলকের। সতীর্থ যশস্বী জয়সওয়াল, কার্তিক ত্যাগী, রবি বিষ্ণয় কিংবা প্রিয়ম গার্গরা যেখানে বিশ্বকাপ বাদেই দল পেয়ে যান আইপিএল নিলামে, যেখানে তিলককে দলে ভেড়াতে আগ্রহ দেখায়নি কোনো দলই। অবশ্য গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে তিলকের ৮৯ রানের বিপরীতে জশওয়াল করেছিলেন পাহাড়সম ৪০০ রান! ফলে দৃশ্যপট থেকে একপ্রকার হারিয়েই গিয়েছিলেন এই তরুণ। 

কিন্তু হাল ছাড়েননি এই তরুণ। ছোটবেলা থেকে জীবনযুদ্ধে লড়ে আসা তিলকের জন্য লড়াই করাটা নতুন কিছু নয়। কোচ সালাম বায়াশকে নিয়ে শুরু হয় তাঁর নতুন লড়াই, নিজেকে জানান দেবার লড়াই। কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি বদলে ফেলেন নিজের ব্যাটিংয়ের খোলনলচে। ২০২১-২২ মৌসুমে বিজয় হাজারে ট্রফিতে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সুবাদেই খুলে যায় আইপিএলের দরজা। 

নিলাম থেকে একপ্রকার যুদ্ধ করেই ১.৭ কোটি রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিলক এই সুযোগটা হাতছাড়া করেননি। বয়সভিত্তিক দলের সতীর্থরা যেখানে আইপিএলে একাদশে জায়গা পেতে হিমশিম খান, তিলক সেখানে প্রথম সুযোগেই বনে গেছেন মুম্বাই একাদশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নিজের প্রথম মৌসুমেই ১৪ ম্যাচে ৩৬ গড় এবং ১৩১ স্ট্রাইক রেটে সংগ্রহ করেন ৩৯৭ রান।

দুর্দান্ত টেকনিকের পাশাপাশি সময়োপযোগী ব্যাটিং করতে পারা তিলকের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। খেলতে পারেন টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডারের যেকোনো পজিশনে, দলের বিপদে যেন বেরিয়ে আসে তাঁর সেরাটা। যুব পর্যায়ের ক্রিকেটে তাঁকে দেখে যেমন সাদামাটা মনে হয়েছিল, আইপিএলে তিনি তেমন নন। অনেক ঘষামাজার পরই এসেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে।

প্রয়োজনে যেমন একপ্রান্ত আগলে রাখতে জানেন, তেমনি মারকুটে ব্যাটিংয়েও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। প্রথম মৌসুমের ফর্মটা টেনে এনেছেন এবারের আইপিএলেও, এখনো পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে ৫৩ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ২১৪ রান। স্ট্রাইক রেটটাও বেড়েছে বিস্তর, প্রায় ১৬০ ছুঁইছুঁই।  

ঘরোয়া ক্রিকেটের দারুণ পারফরম্যান্স দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন এ দলে। আইপিএলের ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে তিলকের জন্য ভারত জাতীয় দলের পথটা দূরের পথ নয় মোটেই। আইপিএল হল বিসিসিআইয়ের একরকম বিনিয়োগ। এখানে তাঁদের ব্যবসায়িক লাভের সাথে সাথে ভবিষ্যত ভারতীয় ক্রিকেটেরও আখেরে লাভই হয়। সেই লাভের খাতায় এবার হয়তো এই তিলকের নামটাও যোগ হয়ে যাবে দ্রুতই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link