ফরম্যাট ভেদে কোচ: ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়

ক্রিকেট বিশ্বে ক্রমাগত বাড়ছে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের আধিপত্য। বছর জুড়ে এসব টুর্নামেন্ট চলার কারণে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সূচি হয়ে পড়েছে বিরতিহীন। একটানা ম্যাচ খেলতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। ফলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

এমতাবস্থায় ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে একটানা ম্যাচ আর আর্থিক নিরাপত্তার ব্যাপার চিন্তা করে ইতোমধ্যে ক্রিকেটাররা যেকোনো এক ফরম্যাটকে বিদায় বলার সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছেন। ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তাঁর এই অবসরের খবরে তৈরি হয়েছে অনেক আলোচনা-সমালোচনা। সেসময় মূলত আইসিসির ব্যস্ত সূচির ব্যাপারটি সবার নজরে আসে।

এছাড়া প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আবার কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট নিজ দেশের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। খেলোয়াড়দের এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে উঠে এসেছে কোচিং স্টাফদের কথাও; সারা বছর এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছুটে বেড়ানো তাদের জন্যও কঠিন বটে।

তাই এখন প্রশ্ন তোলা যায় যে, কোচরা কোচিংয়ের জন্য ফরম্যাট বেছে নিবেন? বর্তমানে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্টের দায়িত্বে থাকা শ্রীধরন শ্রীরাম অবশ্য মনে করছেন একটা সময় আসবে যখন নির্দিষ্ট ফরম্যাটের জন্য নির্দিষ্ট কোচ থাকবে।

সাবেক ভারতীয় এই ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি অস্ট্রেলিয়াতে কাজ করেছি। এবং সেই সাথে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু দলের সাথে ছিলাম। ৩৬৫ দিন কোচিং করানো খুবই কঠিন। আমি জানি না, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু কারো পক্ষে একইসাথে সবধরনের ক্রিকেটে কোচিং করানো মোটেই সহজ নয়। আমি মনে করি, ক্রিকেটারদের মত কোচদেরও ভারসাম্য ঠিক রেখে কাজ করার অধিকার আছে।’

এরই মাঝে ইংল্যান্ড তাদের কোচিং প্যানেল দুই ভাগে ভাগ করেছে। টেস্ট ফরম্যাটের দায়িত্বে আছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। অন্যদিকে রঙ্গিন পোশাকে অর্থাৎ ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশদের হেড কোচ ম্যাথু মট। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ অস্থায়ীভাবে হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো টি-টোয়েন্টি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। আপাতত তিনি শুধু ওয়ানডে এবং টেস্ট দল নিয়ে কাজ করছেন।

কিন্তু অন্যান্য সব দল এখনো তিন ফরম্যাটে একজন কোচকেই ব্যবহার করছে। ক্রিকেটের তিন সংস্করণে ভিন্ন ভিন্ন অধিনায়কের অভিজ্ঞতা কম-বেশি সব দলেরই রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে তিন ফরম্যাট ভিন্ন ভিন্ন কোচও দেখা যেতে পারে।

শ্রীধরন শ্রীরাম রাহুল দ্রাবিড়ের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘দ্রাবিড়কে অভিবাদন। খেলোয়াড় থাকাকালীন সমর্থকদের চাপ এবং প্রত্যাশা সামলে পারফর্ম করেছেন। এখন কোচ হিসেবে একই কাজ করে যাচ্ছেন। আমি নিশ্চিত, সে (দ্রাবিড়) এই কাজটা তুলনামূলক কঠিন মনে করছে।’

তবে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) শুধুমাত্র একটি কোচিং প্যানেল থাকার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন। তাই তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষে রাহুল দ্রাবিড়কে বিশ্রাম দেয়া হয়েছিল। এবং আরেক সাবেক ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণকে সেসময় দায়িত্ব দেয়া হয়।

এমনিতেই ক্রিকেট দলকে কোচিং করানো অনেক বেশি চাপের; সেই সাথে ক্রমাগত ভ্রমণ যে কারো মানসিক স্বাস্থ্যে অবনতি ঘটাতে পারে। তাই নিজেদের সুরক্ষায় কোচদের এখনই করণীয় সম্পর্কে ভাবতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে আপাতত বোঝা যাচ্ছে যে, শীঘ্রই কোচরা হয়তো স্টোকস, ডি ককদের দেখানো পথে হাঁটবে।

আর এর সাথে আরো যোগ করা উচিৎ যে, একাধিক কোচের ওপর দায়িত্ব দেওয়া ক্রিকেটের কোনো নতুন ব্যাপার নয়। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মত দল গুলো লাল বল ও সাদা বোলিংয়ের বিপক্ষে ব্যাটিংকে আলাদা করে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাটিং কোচ রাখেন। পেস বোলিং কোচ, স্পিন বোলিং কোচ – দুই ধরণের বোলিং কোচ আজকাল সব দলই রাখছে। এখন ফরম্যাট ভেদে কোচও রাখাটা আসলে সময়েরই দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link