অধিনায়কদের আয়ের খতিয়ান

একজন অধিনায়ক দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।

দল সাফল্য পেলে যেমন অধিনায়ক প্রশংসা কুড়ান; আবার ব্যর্থতার প্রথম দায়ভার নিতে হয় তাঁকেই। অধিনায়কের দায়িত্ব কেবল মাঠেই সীমাবদ্ধ নয় বরং মাঠের বাইরেও সবাইকে এক সুতোয় গেঁথে রাখা। এজন্য অধিনায়ক বেছে নেয়া ক্রিকেট বোর্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের একটি। এবং অবশ্যই তার বেতনও উল্লেখযোগ্য ব্যাপার। কারণ স্লো ওভার রেটের কারণে জরিমানার খড়গটা প্রথমে অধিনায়কের উপরেই আসে।

আসুন দেখে নেয়া যাক বর্তমান সময়ে বিশ্বের সেরা কয়েকজন অধিনায়কের বাৎসরিক বেতন।

  • দ্বিমুথ করুনারত্নে (টেস্ট অধিনায়ক, শ্রীলঙ্কা)

কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, তিলকারত্নে দিলশানদের অবসরের পর লংকান ক্রিকেট মাঠ এবং মাঠের বাইরে দুসময় পার করছে। গত কয়েক বছরে বহুবার অধিনায়ক পরিবর্তন করার পর অবশেষে দিমুথ করুণারত্নে দলের হাল ধরার পর দলের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তার অধীনেই লংকানরা দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় জয়ের পর ধারণা করা হয়েছিল লংকানরা জয়ের কক্ষপথে ফিরে এসেছে। যদিও জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারেনি তারা, পরের ১২ টেস্টে জিতেছে কেবল তিনটিতে। সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী, লংকান টেস্ট দলপতি দিমুথ করুণারত্নে বাৎসরিক ৭০ হাজার ডলার পান যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬০ লাখ।

  • কুশল পেরেরা (সীমিত ওভারের অধিনায়ক, শ্রীলঙ্কা)

২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকেই সাদা বলের ক্রিকেটে সাফল্য পাচ্ছে না লংকানরা। দীর্ঘমেয়াদে অধিনায়ক নিযুক্ত না করে অধিনায়ক পরিবর্তন করা হয়েছে প্রতিনিয়ত যা সর্বশেষ সংযোজন কুশল পেরেরা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সিরিজের আগে নতুন অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয় এই বাঁহাতি মারকুটে ব্যাটসম্যানকে। অধিনায়ক হিসেবে তিনি পাবেন ৩৫ হাজার ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা।

  • বাবর আজম (অধিনায়ক, পাকিস্তান)

বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যানকে সম্প্রতি তিন ফরম্যাটেই পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সরফরাজ আহমেদ এবং লাল বলের ক্রিকেটে আজহার আলীর স্থলাভিষিক্ত হন তিনি।

তার অধীনে পাকিস্তান চার টেস্টের সবকটিতে জয়ের পাশাপাশি ওডিয়াইতে ছয় ম্যাচে জিতেছে চারটিতে। তিনি পিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে এ ক্যাটাগরিতে আছেন। তার বাৎসরিক বেতন ১৩.২ মিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭২ লাখ টাকা।

  • কিয়েরন পোলার্ড (সীমিত ওভারে অধিনায়ক, ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

২০১৯ বিশ্বকাপের পরেই কিয়েরন পোলার্ডকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। এখনো পর্যন্ত তার নেতৃত্বে ১৫ ওডিয়াইতে ৯টি এবং ১৭ টি-টোয়েন্টিতে সাতটি জিতেছে ক্যারিবিয়রা।

সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী পোলার্ড বছরে ২৫০,০০০ হাজার ডলার বেতন যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা।

  • ক্রেইগ ব্রাথওয়েট (টেস্ট অধিনায়ক, ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

জেসন হোল্ডার বাংলাদেশ সফর থেকে নাম সরিয়ে নিলে ক্রেইগ ব্রাথওয়েট অন্তবর্তীকালীন অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। প্রায় তৃতীয় সারির দল নিয়ে তার নেতৃত্বে ক্যারিবীয়রা বাংলাদেশকে ২-০ ব্যবধানে হারায়; ফলশ্রুতিতে তাকেই পাকাপাকিভাবে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয় উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড।

প্রতি মৌসুমে ব্রাথওয়েট ২০০,০০০ ডলার পেয়ে থাকেন যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ৮৫লাখ টাকা।

  • কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক, নিউজিল্যান্ড)

নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান এবং বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম ক্রিকেট মস্তিষ্ক। তার অধীনেই কিউইরা পার করছে ইতিহাসের সেরা সময়- সুপার ওভারের নিয়মের মারপ্যাঁচে বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরে গেলেও এখন দলটি আছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের অপেক্ষায়।

উইলিয়ামসনের অধীনে কিউইরা জিতেছে ৩৫ টেস্টের ১৯টি, ৫০ ওডিয়াইতে ২৬টি এবং ৪২ টি-টোয়েন্টির ১৯টি। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান বছরে ৪৪০,০০০ ডলার বেতন পান যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবে বোনাস পান ৪০ হাজার ডলার।

  • টেম্বা বাভুমা (সীমিত ওভারে অধিনায়ক, দক্ষিণ আফ্রিকা)

টেম্বা বাভুমা দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক। অধিনায়ক হিসেবে কুইন্টন ডি ককের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। তার অধীনে প্রোটিয়ারা ৩ ম্যাচ খেলে জিতেছে কেবল একটিতে। বাভুমা বোর্ডের কাছে থেকে বেতন পান ৩৫০,০০০ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ কোটি টাকার কাছাকাছি।

  • ডিন এলগার (টেস্ট অধিনায়ক, দক্ষিণ আফ্রিকা)

সম্প্রতি কুইন্টন ডি কক দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলে তার জায়গায় ডিন এলগারকে দায়িত্ব দেয় ক্রিকেট বোর্ড। অধিনায়ক হিসেবে তার প্রথম সিরিজ ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সামনের মাসে। এই বাঁহাতি ওপেনার বেতন পান ৪৫০,০০০ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

  • অ্যারন ফিঞ্চ (সীমিত ওভারে অধিনায়ক, অস্ট্রেলিয়া)

বল টেম্পারিং বিতর্কে স্টিভ স্মিথ নিষিদ্ধ হলে অধিনায়কের দায়িত্ব পান অ্যারন ফিঞ্চ। তার অধীনেই ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে অজিরা। তার অধীনে ৪১ ওডিয়াইতে ২৩ টি এবং ৪৩ টি-টোয়েন্টিতে ২২টি জিতেছে অজিরা।

সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী ফিঞ্চ ৭৫০,০০০ ডলার বেতন পান যা প্রায় ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

  • টিম পেইন (টেস্ট অধিনায়ক, অস্ট্রেলিয়া)

স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারিতে স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, ক্যামেরন ব্যানক্রফট নিষিদ্ধ হলে টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পান টিম পেইন।

তার অধীনেই ২০১৯ অ্যাশেজ নিজেদের রাখতে সক্ষম হয় অজিরা। সম্প্রতি ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে হেরে গেলেও বছর শেষে হতে যাওয়া অ্যাশেজে তিনিই নেতৃত্ব দেবেন অজিদের। তিনি বাৎসরিক ২৭৮,০০০ ডলার বেতন পান যা প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

  • বিরাট কোহলি (অধিনায়ক, ভারত)

বিরাট কোহলির অধীনে ভারত টেস্ট ক্রিকেটে শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছে বিশেষ করে দেশের বাইরে শক্তিশালী পেস বোলিং লাইনআপের কারণে। বর্তমানে টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল ভারত, সাদা বলের ক্রিকেটেও সমান সমীহ জাগানিয়া এক দল।

তার অধীনেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৩-১ সিরিজ জিতেছে ভারত। কোহলির অধীনে ৬০টেস্টে ৩৬ ম্যাচ জিতেছে ভারত। ক্রিকেটে বোর্ডের এ প্লাস ক্যাটাগরিতে থাকা কোহলি ৭ কোটি ভারতীয় রুপি বেতন পান যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮কোটি ১০ লাখ টাকা।

  • ইয়ন মরগ্যান (সীমিত ওভারে অধিনায়ক, ইংল্যান্ড)

২০১৫ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর ইয়ন মরগ্যান ইংল্যান্ড দলের খোলনলচে বদলে ফেলেছেন। যার ফলশ্রুতিতে ঘরের মাঠে জিতেছেন ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ।

এই আইরিশম্যান ১২১ ওডিয়াইতে ৭২ এবং ৫৭ টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিয়ে ৩৩টিতে জিতিয়েছেন থ্রি-লায়ন্সদের। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বেতন পান ১৭০,০০০ পাউন্ড যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ কোটি টাকা।

  • জো রুট (টেস্ট অধিনায়ক, ইংল্যান্ড)

২০১৭ সালে অ্যালিস্টার কুকের কাছে থেকে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান জো রুট। দুইবারের দেখায় এখনো অ্যাশেজ জিততে না পারলেও টেস্ট জিতেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতের বিপক্ষে। তার অধীনে ৫০ টেস্টের মধ্যে ২৬টি টেস্ট জিতেন তিনি।

অধিনায়কদের মাঝে বোর্ডের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি বেতন পান রুট। বোর্ডের কাছ থেকে বছরে ৮৭০,০০০ পাউন্ড পান তিনি যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

  • তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক)

বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি অনুযায়ী দু’জনই এ+ ক্যাটাগরির ক্রিকেটার। দু’জনই শুধু ক্রিকেটার হিসেবে বোর্ডের কাছ থেকে মাসে চার লাখ টাকা করে পারিশ্রমিক পান। মানে তাঁদের বাৎসরিক আয় ৪৮ লাখ টাকা। এর বাদে অধিনায়ক হিসেবে বাড়তি একটা সম্মানি তাঁরা পেয়ে থাকেন।

  • মুমিনুল হক (বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক)

টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক ‘এ’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটার। তাঁর মাসিক বেতন তিন লাখ টাকা। এর বাদে অধিনায়ক হিসেবে তিনি বাড়তি একটা সম্মানি পান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link