ওয়ানডে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ব্যাটিং

১৯৯২ বিশ্বকাপে যা কেউই ভাবেনি সেটাই হয়েছিল, ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। আর সেটার পিছনে বড় কৃতিত্ব ওয়াসিম আকরামের। পরপর দুই বলে দুই আনপ্লেয়েবল ডেলিভারিতে তিনি আউট করেছিলেন অ্যালান ল্যাম্ব এবং ক্রিস লুইসকে। এর আগে ইয়ান বোথামও ফিরেছেন তাঁর বলে। এতেই মূলত ইংল্যান্ডের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়, আবার ব্যাট হাতে সেদিন ৩৩ রানের ক্যামিও খেলেছিলেন ওয়াসিম।

ওয়ানডে ইতিহাস কিন্তু নতুন নয়, একদিনে ম্যাচ শেষ করার তাড়না নিয়ে যে খেলা শুরু হয়েছে সেটা প্রতিনিয়ত দর্শকদের উপহার দিয়েছে অবিশ্বাস্য সব মুহূর্ত। এমন কিছু ব্যাটিং পারফরম্যান্সের দেখা মিলেছে ওয়ানডেতে, যা আজো পুলকিত করে। খেলা-৭১ তেমনই কিছু পারফরম্যান্স খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে।

  • এবি ডি ভিলিয়ার্স – ১৪৯ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০১৫)

ধ্বংসলীলাকেও যে শিল্পের রূপ দেয়া যায় সেটা এবি ডি ভিলিয়ার্স দেখিয়েছিলেন। ৩৯তম ওভারে যখন উইকেটে আসেন তিনি তখন দলীয় সংগ্রহ ২৪৭ রান। এরপর স্রেফ চার-ছক্কা, ১৬ বলে হাফসেঞ্চুরি করে জয়াসুরিয়ার দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙেন এই প্রোটিয়া; আরো ১৫ বল পার হতেই দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও চলে আসে তাঁর দখলে। এমন একটা শট নেই যেটা তিনি খেলেননি সেদিন, সবমিলিয়ে এটাকে আসলে অলৌকিক তান্ডব বলা যায়।

  • রোহিত শর্মা – ২৬৪ বনাম শ্রীলঙ্কা (২০১৪)

ওয়ানডেতে কোন দল ২৫০ এর বেশি রান করতে পারলেই তৃপ্তির হাসি হাসতো, সেসময় রোহিত শর্মা নামক এক ছোকরা একাই করে ফেললেন ২৬৪! শ্রীলঙ্কান বোলারদের স্রেফ কচুকাটা করেছিলেন তিনি, মাত্র ১৭৩ বল লেগেছিল তাঁর। থিসারা পেরেরা শুরুতে রোহিতের একটা ক্যাচ ছেড়েছিলেন, সেজন্য এমন ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন উপহার দিবেন তিনি সেটা বোধহয় ভাবতেও পারেননি কেউ।

  • কপিল দেব – ১৭৫ বনাম জিম্বাবুয়ে (১৯৮৩)

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসেছিল ভারত, পরাজয়ের দূত যখন ঘাড়ের কাছে তখন দূতকেই ঘাড় ধরে বের করে দেন কপিল দেব। ছয় ছক্কা আর চৌদ্দ চার হাঁকিয়ে ১৩৮ বলে ১৭৫ রান করেন কপিল। একা হাতে বদলে দেন ম্যাচের গতিপথ। কেউ যদি আজও একা হাতে দলকে উদ্ধার করেন তাঁকে তুলনা করা হয় কপিলের সঙ্গে। তিনি আসলে একটা মানদন্ড তৈরি করে গিয়েছিলেন, ঘুরে দাঁড়ানোর মানদন্ড।

  • ভিভ রিচার্ডস – ১৩৮* বনাম ইংল্যান্ড (১৯৭৯)

১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডকে একা হাতে বিদায় দেন গ্যারি গিলমার, পরের আসরে ঠিক একইভাবে তাঁদের শিরোপা বঞ্চিত করেন ভিভ রিচার্ডস। সতীর্থদের আসা যাওয়ার মাঝেও তিনি ছিলেন পাহাড়ের মত অটল। কলিস কিংয়ের সঙ্গে ১৩৯ রানের জুটি, শেষপর্যন্ত উইকেটে থেকে ২৮৬ রান বোর্ডে জমা করা – ভিভের কাছেই মূলত হেরে গিয়েছিল ইংলিশরা।

  • শচীন টেন্ডুলকার – ৯৮ বনাম পাকিস্তান (২০০৩)

পাকিস্তান ২৭৩ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল ভারতকে; তাড়া করতে নেমে শচীন টেন্ডুলকার শুরুটা করেছিল শোয়েব আখতারকে পরপর তিন বলে ৬, ৪ আর ৪ মেরে। আর এই তিন বল পরে পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাস কর্পূরের মত উবে গিয়েছিল। আউট হওয়ার আগে শচীন শেষপর্যন্ত ৯৮ রান করেন। ইনিংসটা তো বটেই, ওয়াসিম আকরামকে ব্যাকফুট পাঞ্চে বাউন্ডারিতে পাঠানোর দৃশ্যও মনে রেখেছে ক্রিকেটপ্রেমীরা।

  • গ্লেন ম্যাক্সওয়েল – ২০১* বনাম আফগানিস্তান (২০২৩)

অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে নেমে ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে! অথচ জয়ের জন্য আফগানিস্তান লক্ষ্য দিয়েছে ২৯২ রানের। সেখান থেকে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ২১ চার আর ১০ টি ছক্কা হাকান। ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন, কিন্তু খেলা ছাড়েননি। পুরোপুরি ফিট না হয়েও কেবল এক পায়ে দাঁড়িয়ে ছক্কা হাঁকান! ২০১ রানে অপরাজিত থাকেন, খেলেন ওয়ানডে ইতিহাসের অবধারিত সেরা ম্যাচ ফিনিশিং নক।

Share via
Copy link