শুরুটা করেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান, শেষটা হয়েছে হাসান মাহমুদের হাত ধরে। মাঝখানে নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে ধংসযজ্ঞ চালিয়েছেন সাকিব আল হাসান। আর ব্যাট হাতে শেষের প্রলেপটা অধিনায়ক তামিম ইকবালের সাথে দিয়েছেন সাকিব, মুশফিক।
তাতেই সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬ উইকেটের এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। যদিও, বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের দিনে ব্যাটসম্যানরা নিজেদের সামর্থ্যের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে পারেননি।
দীর্ঘ দিন পর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাকিব আল হাসানের প্রত্যাবর্তন। অধিনায়ক হিসাবে তামিম ইকবালের যাত্রা শুরু। উপরের যে কোন একটা কারণেই ম্যাচটা বিশেষ কিছু হতে পারতো।
সেখানে তিনটা কারণ মিলিয়ে এই ম্যাচের গুরুত্বটা অন্য দশটা ম্যাচের থেকে অবশ্যই আলাদা ছিলো। এরকম একটা ম্যাচে প্রত্যাশিত জয়ই পেয়েছে বাংলাদেশ। অলরাউন্ড পারফর্ম করে রাজকীয় ভাবে ফিরেছেন সাকিব। জয় দিয়ে অধিনায়ক হিসাবে যাত্রা শুরু হয়েছে তামিমের।
বোলারদের সৌজন্যে মাত্র ১২২ রানের লক্ষ্য পেয়েছিলো বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ড বলছে ৬ উইকেট ও ৯৭ বল হাতে রেখে জিতেছে বাংলাদেশ। জয়টা এসেছে খুব সহজেই। কিন্তু এই রান করতেও লড়াই করতে হয়েছে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের। পেসারদের দেখে শুনে খেলে উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবাল ও লিটন দাস ৪৭ রান তুলে ফেললেও স্পিনাররা আক্রমণে আসার পরই বাঁধে বিপত্তি।
আকিল হোসেনের ঘূর্ণিতে লিটন দাস (১৪) বোল্ড হওয়ার পর উইকেটে এসে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্তও। আকিলের বলেই ৯ বলে ১ রান করে ফিরে যান তিনি। হাফ সেঞ্চুরির পথে থাকা তামিম ইকবালও আউট হয়ে যান আরেক স্পিনার জেসন মোহাম্মদের বলে স্ট্যাম্পিং হয়ে। ৬৯ বলে ৭ টি চারের সাহায্যে ৪৪ রান করেন তামিম।
তামিমের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। জুটি বাঁধেন সাকিবের সাথে। তবে এই জুটিও শেষ করতে পারেননি ম্যাচ। দলীয় ১০৫ রানে আকিল হোসেনের তৃতীয় শিকার হয়ে ৪৩ বলে ১৯ রান করে ফিরে যান সাকিব।
সাকিবের বিদায়ের পর উইকেটে এসে মুশফিককে সাথে নিয়ে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিক ৩২ বলে ১৯ ও মাহমুদউল্লাহ ১৬ বলে ৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আকিল হোসেন ৩ টি ও জেসন মোহাম্মদ ১ টি উইকেট লাভ করেন।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে মুস্তাফিজ-সাকিবের বোলিংয়ে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলীয় ৯ রানে মুস্তাফিজের বলে ৭ রান করে লিগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ফিরে যান সুনীল আমব্রিস। অভিষিক্ত আরেক ওপেনার জসুয়া ডি সিলভাকেও বেশি দূর যেতে দেননি মুস্তাফিজ। ৯ রান করে লিটনের দুর্দান্ত ক্যাচ হয়ে ফিরে যান তিনিও।
পাওয়ার-প্লেতে মুস্তাফিজুর রহমান যেখানে শেষ করেছিলেন। পাওয়ার-প্লে শেষে সাকিব আল হাসান শুরু করেন ঠিক সেখান থেকেই। আইসিসির দেওয়া নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই সাকিব একে একে সাজঘরে ফেরান আন্দ্রে ম্যাককার্থি (১২), অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ (১৭) ও এনক্রুমাহ বোনারকে (০)।
মাত্র ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেয় ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে। কাইল মেয়ার্সকে সাথে নিয়ে ৫৯ রানের জুটি গড়েন অভিজ্ঞ রভম্যান পাওয়েল। ভালো খেলতে থাকা পাওয়েলকে অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ ফিরিয়ে দিলে ভাঙে এই জুটি। ২৮ রান করে পাওয়েল ফিরে যাওয়ার পরের বলে রানের খাতা খোলার আগেই হাসান মাহমুদের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান রেমন রেইফার।
দলীয় ১২১ রানে কাইল মেয়ার্সকে ফিরিয়ে দিয়ে ক্যারিবিয়ানদের সম্মানজনক স্কোরের স্বপ্ন শেষ করে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪০ রান করে মেয়ার্স ফিরে যাওয়ার পর বাকি দুটি উইকেট দ্রুত তুলে নেন হাসান মাহমুদ ও সাকিব আল হাসান। শেষ পর্যন্ত ৩২.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে মাত্র ১২২ রান সংগ্রহ করেন ক্যারিবিয়ানরা।
বাংলাদেশের পক্ষে দারুণ বোলিং করেছেন নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরা সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান ও অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ। সাকিব আল হাসান ৪ টি, হাসান মাহমুদ ৩ টি, মুস্তাফিজুর রহমান ২ টি এবং মেহেদী হাসান মিরাজ শিকার করেন বাকি ১ টি উইকেট।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : বাংলাদেশ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১২২/১০ (৩২.২ ওভার) সুনীল আমব্রিস- ৭, জসুয়া সিলভা- ৯, ম্যাককার্থি- ১২, মেয়ার্স- ৪০, পাওয়েল- ২৮, জেসন ১৭, বোনার- ০, রেইফার- ০, জোসেফ- ৪, চেমার হোল্ডার- ০, আকিল- ১; সাকিব- ৭.২-২-৮-৪, হাসান- ৬-১-২৮-৩, মুস্তাফিজ- ৬-০-২০-২, মিরাজ- ৭-১-২৯-১।
বাংলাদেশ: ১২৫/৪ (৩৩.৫) তামিম- ৪৪, লিটন- ১৪, শান্ত- ১, সাকিব- ১৯, মুশফিকুর- ১৯*, মাহমুদউল্লাহ- ৯*; আকিল- ১০-১-২৬-৩, জেসন- ৮-০-১৯-১।
ফলাফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
সিরিজ: বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।