ইউরোপে রীতিমতো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। দ্য সুপার লিগের আগমণ তোলপাড় করে দিয়েছে বিশ্ব ফুটবল। উয়েফাকে বর্জন করে নতুন লিগের ঘোষণা, পুরো উয়েফার অবস্থাই টালমাটাল করে ফেলেছে। ইউয়েফাও জবাব দিয়েছে ভালোমতোই। দিয়েছে নতুন চ্যাম্পিয়নস লিগ ফরমেটের ঘোষণা।
সুপার লিগের ঘোষণাতে এমনিতেই ফুটবলের অবস্থা টালমাটাল হয়ে গিয়েছিল। বলতে গেলে এক কথায় অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে ইউয়েফাকে। হবেই বা না কেন? উয়েফার আয়ের বিশাল একটা অংশ কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে এই ১২ দল। আগামী মৌসুম থেকে যদি চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল, বার্সার মতন দল না থাকে, তবে ব্যাপারটা কেমন হবে? স্পন্সররাও মুখ ঘুরিয়ে নিবে না? অবশ্যই নিবে। তাই স্পন্সরদের হাতে রাখতে নতুন কিছু আনতেই হতো।
সেটাই এনেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ; নতুনত্ব। সুপার লিগের বদলে আরো ভালো একটা সিস্টেম আনতে চেয়েছে উয়েফা। আর সেজন্যই নতুন চ্যাম্পিয়নস লিগের নতুন ফরমেট দাঁড় করিয়েছে তারা।
- কেমন হচ্ছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের নতুন ফরম্যাট?
নতুন ফরম্যাটে চ্যাম্পিয়নস লিগে দলের সংখ্যা ৩২ থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩৬-এ। ৩৬ ক্লাবের চ্যাম্পিয়নস লিগে থাকছে না কোনো গ্রুপ পর্ব। অর্থাৎ প্রতিবছর ৪ দল করে ৮ গ্রুপিং সিস্টেম থাকতো, সেটা আর এবার থাকছে না। বরং পুরো ৩৬টি দল যাচ্ছে একটি বিশাল পটে। সেখান থেকে একটি একটি করে তোলা হবে একটি দলকে। এরপর সেই পট থেকেই তোলা হবে আরো ৫টি দল। সেই ৫ দলের বিপক্ষে খেলবে সেই দল। পাঁচটি ম্যাচ হবে হোম আর পাঁচটি ম্যাচ হবে অ্যাওয়ে ম্যাচ। ফলে থাকছে না কোনো দ্বিতীয় লেগ।
আগে চারটি দল নির্বাচন করে গ্রুপ করে খেলা হতো। যেখানে প্রতি দল খেলার সুযোগ পেত ৬টি করে ম্যাচ। এই নিয়মে তারা পাবে মোট ১০ ম্যাচ খেলার সুযোগ। ফলে গ্রুপ পর্বেই খেলার সংখ্যা ১২৫ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ২২৫-এ।
এখানেই শেষ নয়, ৩৬ দলের গ্রুপ পর্ব থেকে সেরা ৮ দল সরাসরি সুযোগ পাবে কোয়ার্টার ফাইনালে। আর শেষ ৮ দল বাদ পরে যাবে এই টুর্নামেন্ট থেকে। বাকি থাকে ৯ থেকে ২৪ পর্যন্ত দলগুলো। এই ১৬ দল লটারির মাধ্যমে একে অপরের মুখোমুখি হবে প্লে-অফ রাউন্ডে। সেখানে হোম-অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে মুখোমুখি হয়ে জয়ী ৮ দল সুযোগ পাবে কোয়ার্টার ফাইনালে।
সেখান থেকে গল্পটা আগের মতই, হোম-অ্যাওয়ে ভিত্তিতে একে অপরের মুখোমুখি হবে ১৬ দল। সেখান থেকে শেষ ৮, শেষ ৪, ফাইনালিস্ট আর চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী!
চ্যাম্পিয়নস লিগের পাশাপাশি বদলাচ্ছে ইউরোপা লিগও। যে ফরমেটে চ্যাম্পিয়নস লিগ চলছে, ঠিক সে অনুযায়ীই ইউরোপা লিগে একে অপরের মুখোমুখি হবে দলগুলো। শুধু গ্রুপ পর্বে ৮ টি করে ম্যাচ খেলতে হবে তাদের।
এখান প্রশ্ন হচ্ছে বাড়তি ৪ টি ক্লাব আসবে কোত্থেকে? এখানে সুযোগ পাবে দুইটি ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি, যারা চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপা লিগ, কোনোটাই খেলার সুযোগ পাবে না সে বছর। ইউরোপে তাদের সাফল্য ও শেষ কয়েক বছরের ফর্ম দেখে সিলেক্ট করা হবে ক্লাবগুলোকে। সেখান থেকে সুযোগ পাবে বাকি দুইটি দল। আর একটি ক্লাব বেশি সুযোগ পাবে প্লে-অফ রাউন্ড থেকে। আর ফ্রান্স থেকে বাড়ছে একটি দল।
গতকাল এ ঘোষণা আসলেও এর পরিকল্পনা কিন্তু চলছিল অনেকদিন আগে থেকেই। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম এই কথা তোলা হয়েছিল ইউয়েফার সম্মেলনে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত কথা-বার্তা চলছিল। কিন্তু বিদ্রোহী লিগের হঠাৎ করে নেওয়া এই অবস্থানের কারণে তড়িঘড়ি করেই পাস করতে হয়েছে এই বিল। তবে এই বিল এখনই পাস হচ্ছে না। বরং এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সাল পর থেকে। এর আগে পর্যন্ত ঠিক থাকছে এই ফরমেট।
ইউয়েফা সভাপতি আলেকজেন্দার সেফারিন অবশয় বলেই দিয়েছেন, কেউ সুপার লিগ খেলতে গেলে তাকে আর কখনওই ঢুকতে দেওয়া হবে না চ্যাম্পিয়নস লিগে। মিড-উইকের চ্যাম্পিয়নস খেলতে হলে তাদের বর্জন করতে হবে পুরো সুপার কাপ।