ইউনাইটেডের চোখ এবার কার দিকে?

স্বপ্নের মতন একটা দলবদলের মৌসুম কাটাচ্ছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তাদের দলবদলের মৌসুমটাকে একটা তাদের কোচ ওলে গুনার সুলশারের শেষ ইন্টার্ভিউ থেকেই ব্যাখা করা যায়। ‘দলবদলের মৌসুমের শেষদিকে চলে এসেছি আমরা। এখন আমি দল নিয়ে বলতে পারি, ভালো একটা অবস্থানেই আছি আমরা। তবে আরো ভালো অবস্থানে যাওয়া উচিৎ।’

গত কয়েক মাসে বদলে গিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চিত্র। প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত ট্রফির জন্য লড়াই করার অবস্থান থেকে সরে এসেছে অনেকদিন ধরেই। কিন্তু মাঠের বাইরে সুপার লিগ কাণ্ড নিয়ে যে ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল ইউনাইটেড, তাতে করে বিশাল পরিবর্তন এসেছে রেড ডেভিলদের ঘরে। শুধু মাঠের ভেতরে নয়, বাইরেও আমূল পরিবর্তন এসেছে। দলের মালিকের যেন শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, তারা বুঝতে শুরু করেছে দলের প্রয়োজনটা ঠিক কোথায়।

এড উডওয়ার্ডের বিদায়ের পরপরই শুরু হিয়েছে তাদের ঝোপ বুঝে কোপ মারা। যে জায়গায় খেলোয়াড় দরকার ঠিক সে জায়গাতেই খেলোয়াড় আনছেন ইউনাইটেডের নতুন ট্রান্সফার পলিসির দায়িত্ব নেওয়া জন মুর্তাহ ও ড্যারেন ফ্লেচার। কিন্তু এখানেই থাকছেন না দু’জনে, ওলে গুনার সুলশারের কথা সত্য ধরে নিলে এখনও মার্কেটে আছে ইউনাইটেড। মৌসুমের শেষদিকে এসেও খেলোয়াড় কিনতে ব্যস্ত তারা। তবে কারা হচ্ছেন ইউনাইটেডের সমাধান?

দলবদলের মৌসুম শুরুর আগে ইউনাইটেডের সমস্যার শেষ ছিল না। ওলে গুনার কোচ হিসেবে তেমন অভিজ্ঞ নন। যখন প্রথম এসেছিলেন, ছিলেন তরুণ, প্রাণোচ্ছ্বল, মাথাভর্তি বাদামী কোকড়া চুল। সেই ওলে গুনার গত তিন বছরে ঠেকে ঠেকে শিখেছেন, মোরিনহোর রেখে যাওয়া ভাঙা দলকে আস্তে আস্তে শেপে এনেছেন। ফলাফল হিসেবে মাথায় এখন বাদামী চুল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রথম দুই বছরে চাইলেও নিজের সেরা খেলোয়াড়দের মার্কেট থেকে কিনতে পারেননি, কিন্তু এই মৌসুমে এসেই সে চিন্তা দূর হয়ে গিয়েছে। এড উডওয়ার্ডের সরে যাওয়া মার্কেটে স্বাধীনতা দিয়েছেন সুলশারকে।

সেটাই কাজে লাগিয়েছেন তিনি। দুই বছর ঝুলে থাকা সাঞ্চো ডিল সম্পন্ন হয়েছে অবশেষে, সেই সাথে ডিফেন্সে এতদিন পর হ্যারি ম্যাগুইয়ারের একজন যোগ্য সঙ্গী খুঁজে পেয়েছেন, রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বদলে সে সঙ্গী হতে উড়ে এসেছেন রাফায়েল ভারানে। কিন্তু এখনও কিছু জায়গায় খেলোয়াড় কেনা বাকি। আর তা নির্ভর করছে আগামী কয়েকদিনে দলের অবস্থার উপরে।

  • ক্রয়

প্রথমত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পগবার অবস্থান এখনও দোটানায়। এজেন্ট মিনো রাইওলার সাথে এমন কোনো দল নেই যাদের আগে ঝামেলা হয়নি। ইউনাইটেডের সাথে তো সে ঝামেলা অনেক পুরোনো। এই মৌসুম শেষেই চুক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে পগবার। খুব সম্ভবত এর আগেই বিক্রি করে দেওয়া হবে তাকে। ফলে এই মৌসুমেই তাদের প্রয়োজন একজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের, বিশেষ করে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের। যে কারণে বেশ কয়েকজনের দিকেই নজর রেখেছে তারা।

রেঁনের এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গা, ওয়েস্ট হ্যামের ডেকলান রাইসের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে তাদের জন্য চাওয়া মূল্যে তাদের কেনা প্রায় অসম্ভবই। দেড়শ মিলিয়নের কাছাকাছি ইতোমধ্যে খরচ করা শেষ ইউনাইটেডের।

সেদিক দিয়ে তাদের জন্য ভালো ট্রান্সফার হবেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাউল। সাউলের দল ছাড়া প্রায় নিশ্চিত, কিছুদিন আগে বার্সাতে যাওয়াও নিশ্চিত ছিল কিন্তু বার্সা বোর্ডের বাধায় থমকে যায় তা। এখনও মার্কেটে আছেন তিনি। তাকে কম মূল্যেও পাওয়া সম্ভব, ইউনাইটেড মিডফিল্ডের তৎক্ষনাত সমাধান হতে পারেন তিনি। কারণ পরের মৌসুমে ফ্রিতে লিওন গোরেৎস্কাকে আনতে চাচ্ছে ইউনাইটেড। পগবা বিদায় নিলে এক মৌসুমের জন্য সাউলই তাই সেরা অপশন।

  • বিক্রয়

এই মৌসুমে এসে দুই হাতে খরচ করা শুরু করেছে ইউনাইটেড বোর্ড। তাতে করে তাদের কাজ শেষ হয়ে যায়নি অবশ্য। দুই হাতে খরচ করলে দুই হাতে বিক্রিও করতে হবে। নইলে ফিফা বসে আছে হিসাবে গড়মিল ধরার জন্য। যে কারণ দল থেকে খেলোয়াড় বের করে দেওয়ার কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে তাদের।

প্রথমেই যে নামটা বারবার উঠে আসে সেটা হচ্ছেন পল পগবা। ফ্রান্সের জার্সিতে সেরা মিড ইউনাইটেডে আসলেই কেমন যেন চুপসে যান। খুঁজেই পাওয়া যায় না তাকে। কেউ বলেন কোচের দোষ, কেউ বলেন খেলার স্টাইল কেউ আবার বলেন এজেন্টের অতিরিক্ত মাতাব্বরিতেই এই ঘটনার সূচনা। কিন্তু এই মৌসুমেই তাকে অফলোড করার কথা ভাবছে ইউনাইটেড। নইলে পরের মৌসুমে ফ্রিতেই দল ছাড়বেন তিনি। তাকে কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছে পিএসজি, জুভেন্টাসের মতন দল।

শুধু তাই নয়, অ্যাটাকিং মিডফিল্ড পজিশনেও বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় জমে গিয়েছে ইউনাইটেডের। বেশিরভাগ সময়েই তারা কাটান বেঞ্চে। এমনকী গত মৌসুমের মতন ব্যস্ত মৌসুমও তারা কাটিয়েছেন বেঞ্চে। জেসি লিনগার্ড, আন্দ্রেস পেরেইরা দল থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন সামনের কয়েকদিনে। সাঞ্চো ডিল সম্পন্ন হওয়ার পর আমাদ দিয়ালোও চলে যেতে পারেন ধারে।

সবমিলিয়ে অসাধারণ একটা ট্রান্সফার মৌসুম কাটিয়েছে ইউনাইটেড। শেষদিকে এসে আরো কাউকে কেনা হবে কীনা নির্ভর করছে কেউ চলে যাবে কীনা তার উপর। এই মৌসুম তাই সুলশারের জন্য পরীক্ষা। আগের মৌসুমগুলোয় না হয় দল সাজাচ্ছেন বলে পার পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এই মৌসুমে শিরোপা না আসলে বেশ বিপদেই পরতে হবে তাকে, তা বলাই বাহুল্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link