ছেড়া জুতো, ভাঙা ব্যাট, নতুন রেকর্ড

দিনটা ঠিক নিজের বলেই দাবি করতে পারেন জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্ল। মিডল অর্ডার ব্যাটার তো এদিন ছিলেন এক অন্যরকম ফর্মে। বাংলাদেশি বোলারদের দূর্বলতা যেন আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। রেকর্ড গড়ার দিনে তিনি যখন আউট হলেন তখন মনটা নিশ্চয়ই খানিক বিষন্নতায় ছেয়ে গেছে তাঁর।

বিষন্নতা অবশ্য বার্লের জীবনে নতুন কিছু নয়। খুব বেশিদিন নয়, ছেড়া জুতোর ছবি পোস্ট করে আক্ষেপ করেছিলেন টুইটারে। তাতে স্পন্সর পেয়েছিলেন হয়তো, তবে তাতে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ‍দুর্দশা খুব বেশি কাটেনি। সেই আক্ষেপটা প্রায়ই তাই বার্লরা মাঠেই মিটিয়ে ফেলেন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নির্ধারণের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি জিম্বাবুয়ে। সিরিজে ১-১ সমতা। শেষ ম্যাচটার গুরুত্ব ঠিক কতটা তা তো আন্দাজ করে নেওয়াই যায়। সে ম্যাচে টস জিতেই জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। শুরুটা ভালই করেন অধিনায়ক রেগিস চাকাভাকে সাথে নিয়ে। ২৯ রানে যখন চাকাভা ফিরে গেলেন তখন মৃদু একটা কম্পন বয়ে যায় জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপের উপর দিয়ে।

তাতেই হুড়মুড় করে উইকেট পড়তে থাকে জিম্বাবুয়ের। রায়ান বার্ল যখন ক্রিজে এলেন তখন জিম্বাবুয়ের রান ৫৫। সেই সাথে নেই পাঁচ উইকেট। মিডল অর্ডারের একমাত্র ভরসা হয়েই তখন ক্রিজে নেমেছিলেন বার্ল। এরপর শুরুটা করলেন একটু দেখে খেললেন। বোঝার চেষ্টা করলেন পরিস্থিতি। কেননা তখনও তো ইনিংসের অর্ধেকটা বাকি। বার্ল তাই অপেক্ষা করলেন সঠিক সময়ের।

সে সঠিক সময়টা এলো, বাংলাদেশের বা-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের হাত ধরে। ১৫ তম ওভারে নাসুমকে বল হাতে দেখা মাত্রই কোন এক অপার্থিব শক্তি এসে ভর করেছিল বার্লের শরীরে। নিমিষেই বদলে গেল বার্লের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ। পেশিশক্তির বা স্মার্ট ব্যাটিংয়ের যে একটা আক্ষেপে পুড়ে বাংলাদেশ সেই আক্ষেপের আগুনে যেন ঘি ঢেলে দিলেন বার্ল।

নাসুমের ওভারটাই তিনি শুরু করলেন লং অন বরাবর এক বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে। ঠিক এখানটায় থেমে যেতেই পারতেন। দলের অবস্থা তখন খুব একটা ভাল না। শেষ পর্যন্ত খেলার একটা চিন্তা নিশ্চয়ই ভর করার কথা ছিল বার্লের উপর। তবে না। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন খেলার মোড় ওই এক ওভারেই ঘুরিয়ে দেবেন। সেটাই করলেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে একটি ওভারেই প্রতিপক্ষের স্বপ্ন কিংবা পরিকল্পনা যে দুমড়ে-মুচড়ে ছুড়ে ফেলে দেওয়া যায় সেটার প্রমাণ রাখলেন তিনি হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে।

হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠের ইতিহাসে এক ওভারে সর্বোচ্চ ৩৪ রান নিয়ে ফেলেন তিনি নাসুমের দ্বিতীয় ওভারে। গুণে গুণে তিনি পাঁচ খানা ছক্কা হাঁকিয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালে সাকিবের এক ওভারে তিন ছক্কা ও তিন চার মেরেছিলেন বার্ল। তিন বছর পর নাসুমের বিপক্ষে এক ওভারে পাঁচ ছক্কা।

পঞ্চম বলে একখানা চারও আদায় করেছিলেন। সেটাতেও বল উড়ে গিয়ে প্যাভিলনে পড়তে পারত। তাতে কিংবদন্তি যুবরাজ সিংয়ের পাশে নিজের নামটি আবিষ্কার করতেই পারতেন বার্ল। তবে সেটা এক আক্ষেপ হয়ে রয়ে গেল। কিন্তু আক্ষেপটা বোধহয় তিনি বেশি করছেন তাঁর ব্যাট নিয়ে।

২৮ বলে ৫৪ রানের ইনিংসে তিনি ভেঙেছেন দুই খানা ব্যাট। দলকে একটা স্বস্তিজনক অবস্থানে নিয়ে তিনি গেলেন সে কথা সত্য। তবে নিজে খানিকটা বিপাকেই পড়ে গেলেন। এই রায়ান বার্লই বেশ কয়েকদিন আগে টুইটারে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের করুন দশার চিত্র তুলে আকুতি করেছিলেন ক্রিকেট সরঞ্জামের স্পন্সরের জন্যে। দুর্নীতির বেড়াজালে জর্জরিত জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে। ফলশ্রুতিতে দেশটির ক্রিকেটে উন্নতির দেখা মেলে না।

 

তাইতো স্পন্সরদের কোনরকমের আগ্রহ নেই দেশটির ক্রিকেট থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের নিয়ে। তবুও রায়ান বার্লদের মত খেলোয়াড়েরা খেলে যান। নিজেদের সামান্য পৃষ্ঠপোষকতা নিয়েই। তবে তাঁদের ইচ্ছেটা কোনদিন যেন মরে না। ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসাটা যেন প্রতিটা দিনের সূর্যদয়ের মতই সত্য ও চিরন্তন। এই বার্লরাই প্রমাণ করেন, মাঠের ক্রিকেটটা অন্তত অর্থ দিয়ে খেলা যায় না। ইচ্ছেটা থাকতে হয় কিছু করে দেখাবার, বিশ্ব জয় করবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link