রাজ্য শাসন যেমন হয়

নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে নড়বড়ে হলেন। কিন্তু, হাল ছাড়লেন না। সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছে গেলেন বাউন্ডারি গিয়ে। এরপর শুরু হল আসল রাজ্য শাসন।

ব্যাট কাঁধে নিয়ে মাঠে নামছেন। যেন সেনাপতির বেশে যুদ্ধ জয় করতে নামছেন কোনো এক রাজা। চোখে মুখে নতুন রাজ্য জয়ের নেশা। ব্যাট যেন ধারাল তলোয়ার, যার অগ্নিবানে দগ্ধ হওয়ার অপেক্ষায় প্রতিপক্ষ, কাবু হওয়া কেবলই সময়ের ব্যাপার।

ভারতের প্রথম উইকেটের পতন ঘটেছে। কিন্তু, গোহাটির দর্শক আরও বিপুল গর্জনে উল্লাস করছে। কারণ, ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষের চোখ রাঙাতে, নতুন স্বপ্ন আঁকতে নামবেন বুড়ো হয়ে যাওয়া সেই সেনাপতি। হেলমেটের ফাঁক গলে যার সাদােপাঁকা দাড়ি চোখে পড়ে, কিন্তু চোখের সেই উত্তাপ আজও সেই প্রথম দিনের মতউ আগুনের ফুলকি ছোটানো।

আর ব্যাট হাতে যখন খেলতে শুরু করলেন, তখন মনে হল – এর চেয়ে রাজসিক, এর চেয়েও মনোমুগ্ধকর কিংবা এর চেয়েও আগ্রাসী কিছু আর হওয়া সম্ভব নয়। বিরাট কোহলি এমনই, তাঁর হাটার ভঙ্গি, তাঁর ব্যাটিং স্ট্যান্ট, তাঁর চাহনী – কোনো কিছুকেই আপনি কোনো ছকে ফেলতে পারবেন না। তাঁর আগ্রাসনের সামনে দাঁড়াতে এমন কোনো বোলারের পৃথিবীর বুকে আবির্ভাবই ঘটেনি।

কোহলি সেঞ্চুরি পেলেন। ক্যারিয়ারের ৮৩ তম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। তাঁর মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশ ছুঁতে চাইল। গলার লকেট বের করে চুমু খেলেন, আকাশে তাঁকিয়ে বাবাকে খুঁজলেন। গ্যালারি থেকে দৌঁড়ে এসে কোনো এক দর্শক কোহলির পায়ের নিচে লুটিয়ে পড়ল।

খুবই পরিচিত এক দৃশ্য। শুধু দর্শক কেন কোহলির পায়ের নিচে কার্যত পুরো ক্রিকেট বিশ্বই তো লুটিয়ে পড়তে বাধ্য। সেঞ্চুরি করা তো তাঁর জন্য রীতিমত ডালভাত। মাঝখানের খরা আর করোনাকাল না চললে দিব্যি তিনি ১০০ টা সেঞ্চুরি করে ফেলতে পারতেন।

নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে নড়বড়ে হলেন। কিন্তু, হাল ছাড়লেন না। সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছে গেলেন বাউন্ডারি গিয়ে। এরপর শুরু হল আসল রাজ্য শাসন। যেন শুধু বাউন্ডারি দিয়েই বাকিটা সময় কাটিয়ে দিলেন, ইনিংস শেষ করলেন ১২০ বলে ১৩৫ রান করে। ইনিংসে ছিল ১১ টি চার আর সাতটি ছক্কা। এমন একটা ইনিংসন চাইলেও দুই-চার-পাঁচ দিনে ভোলা যায় না।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link