১৮ তম ওভারের শেষ ডেলিভারি। হাফ সেঞ্চুরি থেকে তখন তিন রান দূরে দাঁড়িয়ে তিনি। সামনে তরুণ ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ হাসনাইন। ঘণ্টায় ১৪৯ কিলোমিটার গতিতে বলটা ধেয়ে আসলো।
সামনে এগিয়ে এসে কোহলি মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারলেন। ছক্কা। হাফ সেঞ্চুরি হল, গ্যালারি উদ্বেল হল। ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে সঞ্জয় মাঞ্জেরেকার বলে উঠলেন, ‘বিরাট কোহলি হ্যাজ অ্যারাইভড।’
এই ছক্কা, এই উচ্ছ্বসিত গ্যালারির চিৎকার, ধারাভাষ্য কক্ষের এই প্রশস্তি, কিংবা এই নান্দনিক শট – কোনো কিছুই কোহলির জন্য নতুন তো কিছু নয়। সমস্যা ছিল একটাই – কামবাখত সময়টাই ছিল না তাঁর পক্ষে।
যদিও, বলতেই হচ্ছে, আসলে বিরাট কোহলি অন্য পর্যায়ের ক্রিকেটার। বলা যায়, তিনি ভিন্ন গ্রহের ব্যাটার। নি:সন্দেহে একটা বাজে সময়ের মধ্য দিয়েই যাচ্ছিলেন তিনি। হয়তো এখনও সময়ের নেতিবাচকতা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে তিনি পারেননি।
তবে, তিনি রান পাচ্ছিলেন না কিংবা পাচ্ছেন না – এই কথা তাঁর নিন্দুকও বলতে পারবেন না। হ্যাঁ, বিরাট কোহলি রানের মধ্যেই আছেন। এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপেও তিনি রানের মধ্যেই আছেন। শেষ ১১ টি ইনিংসের পাঁচটিতেই হাফ সেঞ্চুরি তাঁর টি-টোয়েন্টিতে।
তবে, হ্যাঁ, বিরাট কোহলির ইনিংসগুলো ঠিক মন রাঙাতে পারছিল না। গ্যালারি কাঁপাতে পারছিল না। বিরাট কোহলি মানেই যে ‘জোশ’, বিরাট কোহলির ব্যাট মানেই যে তলোয়ার – সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না।
যদিও, সেই আক্ষেপটা সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচেই বেশ খানিকটা ঘুঁচিয়ে দিয়েছেন ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক। না, বিরাট কোনো হাতি ঘোড়া মার্কা ইনিংস নয়। তবে, কোহলির ৬০ রানের ইনিংসে সাবেকী আমলের সেই সম্রাটকে খুঁজে পাওয়া গেছে।
সেই সম্রাট, সময়ের সাথে কিংবা মোমেন্টামের সাথে পাল্লা দিতে জানেন। কোহলি ৪৪ বলে ৬০ রানের একটা ইনিংস খেলেছেন। এই ইনিংসে বড় শট যেমন ছিল, তেমনি ছিল দুর্দান্ত রানিং বিটুইন দ্য উইকেট, ছিল ভয়ডরহীন ব্যাটি। এই করেই তো কোহলি এতকাল প্রতিপক্ষের বোলারদের শিরদাড়ায় শীতল রক্তের স্রোত এনে দিতেন।
‘বিরাট কোহলি ইজ ব্যাক’ – এই কথাটা এখনও পুরোপুরি বলা যাচ্ছে না। হয়তো, হারানো সুরটা পুরোপুরি ফিরে পেতে আরো কিছুদিন সময় তিনি লাগিয়েই ফেলবেন। তবে, এটুকু অন্তত সঞ্জয় মাঞ্জেরেকারের সাথে গলা মিলিয়ে বলা যায় – ‘বিরাট কোহলি হ্যাজ অ্যারাইভড!’
পরে চারটি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি খেলে তিনি যখন ফিরছেন, তখনও ভারতের ইনিংস শেষ হতে দু’টি ডেলিভারি বাকি। ভারত একটা স্বচ্ছল অবস্থানেও চলে গেছে। যদিও, এমন ইনিংসের পরও বিরাট তখন সন্তুষ্ট নন। কারণ, তিনি তো বটেই গোটা বিশ্ব জানে ছন্দে থাকা বিরাট কোহলি ওই দুইটা ডেলিভারিতেও কি করার ক্ষমতা রাখেন। তাই, আক্ষেপে পুড়ছিলেন হারানো সম্রাট। এই আক্ষেপ আসলে নিজের হারানো দিন খুঁজে ফেরার তাড়না।
হ্যাঁ, এবার বলতেই হচ্ছে – তিনি এসেছেন। তিনি এসে গেছেন তাঁর হারানো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে!