কথায় আছে ‘সবুরে মেওয়া ফলে’। তবে এই সবুর করা রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষে ধরা সম্ভব হয়নি। সাল ২০০০, মাদ্রিদ মরিয়া হয়ে ওঠে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার জন্য। শেষ তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল ৯৭/৯৮ মৌসুমে। এরপরে তারা টানা দুই মৌসুম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়।
মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ নির্বাচিত হন। পেরেজ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রতিশ্রুতি দিলেন যে তিনি বিশ্বের সেরা দল গঠন করবেন মাদ্রিদের জন্য। এভাবেই জন্ম নেয় মাদ্রিদের এক নতুন যুগ- গ্যালাকটিকোদের যুগ।
তৎকালীন বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানোর জন্য কাজে লেগে পড়ে মাদ্রিদ। তারা শুরু করে লুইস ফিগোকে দলে ভেড়ানোর মাধ্যমে। একে একে তারা জিনেদিন জিদান, রোনালদো নাজারিও, ডেভিড বেকহ্যাম, মাইকেল ওয়েন, রুড ভ্যান নিস্টেলরয় কে দলে ভেড়ান। সাথে রাউল, গুটি, রবার্তো কার্লোস, ইকার ক্যাসিয়াসের মতো পুরোনো তারকারা তো ছিলেনই।
মাদ্রিদের এই অদম্য দলকে ঘিরে ছিল প্রত্যাশার পাহাড়। তারা এই গ্যালাকটিকোর সময়ে বেশ কিছু শিরোপাও জিতেছেন। রিয়াল মাদ্রিদ এই সময়কালে ৮ টি শিরোপায় রেখেছিল হাত। উল্লেখযোগ্য তিনটি লা লিগা, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, দুইটি সুপার কোপা, একটি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ জিতেছেন।
তাদের এতগুলো শিরোপা জেতার পরও এই গ্যালাকটিকো সময়কালকে ব্যর্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতেই বোঝা যায় এই দলের প্রতি ভক্তদের প্রত্যাশা কতটা প্রখর ছিল। ভক্তরা মনে করেছিল এই দল হয়ত ক্লাব ফুটবলের সকল শিরোপা জিততে সক্ষম হবে। হয়ত তাদের আশা ছিল এই দলকে কেউ হয়ত হারাতে পারবে না।
ফুটবল খেলার জন্য যে শুধু তারকা খেলোয়াড়ের প্রয়োজন বিষয়টি এমন নয়। একটি দল গঠন করার জন্য প্রয়োজন দলের ভারসাম্য। দলের প্রত্যেকটি খেলোয়াড়ের মাঝে মতের মিল প্রয়োজন। যা এই দলে কিছুটা ঘাটতি ছিল।
গ্যালাক্টিকো যুগের এই অধ্যায় থেকে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বিশ্ব ফুটবল একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছিল। তারকা খেলোয়াড়দের সমাগম দলে উজ্জ্বলতা আনতে পারে, তবে দলগত ভারসাম্যের অভাব শিরোপা জয়ের ধারাবাহিকতায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রিয়াল মাদ্রিদ পরবর্তীতে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন পরিকল্পনায় এগিয়ে যায়।
গ্যালাক্টিকোদের যুগ শেষ হলেও, রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আধিপত্য বজায় রাখার যাত্রা শেষ হয়নি। দলটি ক্রমাগত তাদের কৌশল পুনর্গঠন করে এবং পরবর্তী সময়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইউরোপীয় ফুটবলে রাজত্ব করে আসছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালে দশম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ‘লা ডেসিমা’ জয়ের মাধ্যমে তারা আবার প্রমাণ করে যে রিয়াল মাদ্রিদ শুধু তারকা খেলোয়াড়দের জন্যই নয়, দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমেও বিশ্ব সেরা।
গ্যালাক্টিকোদের উত্থান এবং পতন রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায়। এটি ফুটবলপ্রেমীদের মনে করিয়ে দেয় যে ফুটবল কেবল প্রতিভার প্রদর্শনী নয়, এটি একে অপরের প্রতি আস্থা, শৃঙ্খলা এবং একতা বজায় রাখার খেলা।