ভারত ও পাকিস্তান – দুই প্রতিবেশি। অবশ্য প্রতিবেশী না বলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বললে দুই দেশের পরিচয় আরো ভালভাবে দেয়া যায়। বহুল প্রতীক্ষিত এই ম্যাচ নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনারও কোন কমতি নেই। যদিও, এমন উপলক্ষ্য এশিয়া কাপ বা আইসিসির কোনো ইভেন্ট ছাড়া আসে না।
আর এই ম্যাচ আসলেই বড় সব কিংবদন্তিদের কথাও আলোচনায় আসতে বাধ্য। কপিল দেব এবং ওয়াসিম আকরাম দুইজনে এবার একসাথে হাজির হয়েছেন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পুরোনো কোন গল্প বলার জন্য। এই দুই কিংবদন্তির আলোচনায় উঠে এসেছে ১৯৮৭ সালের ব্যাঙালুরু টেস্টের কথা, যেখানে কি না লেগ স্পিন বল করেছিলেন ওয়াসিম আকরাম।
ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘উইকেটে কিছু ঘাস ছিল।’ তাঁর কথার মাঝখানেই কপিল দেব বলে উঠেন ম্যাচের আগেরদিন পিচ থেকে ঘাস সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। ভারতীয় অলরাউন্ডারের কথার উত্তরে পাক পেসার আবার বলেন, ‘সরিয়ে নেয়া সত্ত্বেও পিচে ঘাসের উপস্থিতি ছিল। এবং বলগুলো প্রচুর টার্ন করছিল।’
আর ঠিক এই কারণেই সুইংয়ের সুলতান খ্যাত ওয়াসিম আকরাম ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে লেগ স্পিন বোলিং করতে শুরু করেন। বলের টার্ন করার সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য এমনটা করেন তিনি। এই বাঁহাতি ফাস্ট বোলার বলেন, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে বল অনেক বেশি স্পিন করছিলো। তাই নতুন বলে আমি লেগ ব্রেক বোলিং করতে শুরু করি।’
ওয়াসিম আকরামের এই বুদ্ধিমত্তা দারুণভাবে কাজে লেগেছিল। লেগ স্পিন দিয়েই কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত এবং মহিন্দর অমরনাথের উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।
অন্যদিকে কপিল দেব আলোকপাত করেন সুনীল গাভাস্করের দুর্দান্ত এক ইনিংসের দিকে। ভারতের অন্যতম সেরা ওপেনারের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচ ছিল সেদিন। বর্ণাঢ্য ক্রিকেট জীবনে শেষবারের মত সাদা পোশাকে ব্যাট করতে নেমে সুনীল গাভাস্কার করেছিলেন ২৬৪ বলে ৯৬ রান। অন্য ব্যাটাররা যেখানে উইকেটে এসে বল-ই বুঝতে পারছিলেন না, গাভাস্কর তখন স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে যাচ্ছিলেন।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব বলেন, ‘আমি আমার ক্যারিয়ারে সুনীল গাভাস্কারের সঙ্গে অনেক ম্যাচ খেলেছি। সেটা (ব্যাঙ্গালোর টেস্ট) তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ ছিল। সবাই সেদিন ব্যাটিং করতে হিমশিম খাচ্ছিলো অথচ গাভাস্কার নিঁখুত টাইমিংয়ে ব্যাট করছিল। আমরা ভেবেছি সে হয়তো ভিন্ন কোন পিচে ব্যাটিং করছে।’
অবশ্য নিজের বিদায়ী টেস্টে নায়কোচিত এক ইনিংস খেললেও দলকে জেতাতে পারেননি সুনীল গাভাস্কর। ট্র্যাজিক হিরো হয়েই টেস্ট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি হয়েছিল তাঁর।
প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানকে মাত্র ১১৬ রানে অলআউট করলেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা বড় লিড নেয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। তারা অলআউট হয়ে গিয়েছিল মাত্র ১৪৫ রানে। ২৯ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় বার ব্যাট করতে নেমে সফরকারীরা সংগ্রহ করেছিল ২৪৯ রান। কিন্তু গাভাস্করের ৯৬ রান সত্ত্বেও পাকিস্তানের দেয়া ২২১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া।
স্মরণীয় সেই ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার সুনীল গাভাস্কারের হাতেই উঠেছিল। কিন্তু খুব কাছে এসেও দলকে জেতাতে না পারার আক্ষেপ এই পুরস্কার হয়তো মুছে দিতে ব্যর্থ হয়েছে।