বিরাট ব্যর্থতার মহাসাগর

চার বছর আগে জোহানেসবার্গ টেস্টের আগে তখন অনুশীলনে বিরাট কোহলি। ১৭ বছর বয়সী এক তরুণ পেসারের পর পর তিন বলেই পরাস্থ হলেন। না ভারতীয় কোনো বোলার না! দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ বাঁ-হাতি পেসার মার্কো জেনসেন। সেখানে নেটে বোলিং করেছেন তার যমজ ভাই ডুয়াইন জেনসেন। এই তরুণ তুর্কি বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়ে বেশ প্রশংসাও করেছিলেন বিরাট।

চার বছর বাদে সেই জেনসেনের বলেই আবার পরাস্থ হলেন বিরাট। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলা জেনসেনের বলে আউট হয়ে টানা দ্বিতীয় গোল্ডেন ডাকে ফিরেন বিরাট কোহলি।

সময় বদলেছে, মঞ্চটাও ভিন্ন। চার বছর আগে ফর্মের তুঙ্গে থাকা সেই বিরাট এখন নিষ্প্রভ। ২২ গজে দাপিয়ে বেড়ানো বিরাট এখন ধুঁকছেন। নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন ব্যর্থতার সাগরে। নেট বোলার থেকে জেনসেনও এখন জাতীয় দলের সম্ভাবনাময় এক তরুণ তারকা।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার। এবারের আসরে নিজের প্রথম ম্যাচে বোলিংয়ে জেনসেন। ওভারের দ্বিতীয় বলেই দুর্দান্ত এক ইনস্যুইংয়ে বোল্ড করলেন স্বদেশী ক্রিকেটার ফাফ ডু প্লেসিসকে। অভিষেক শর্মাকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে প্রথম স্লিপে সরানো হল। এইডেন মার্করাম ছিলেন দ্বিতীয় স্লিপে, স্ট্রাইকে বিরাট কোহলি। জেনসেনের পরের বলটা সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়ে এজ হয়ে দ্বিতীয় স্লিপে সরাসরি মার্করামের হাতে।

সামনের পা আর ব্যাটের টাইমিংটা মিলল না। শরীর থেকে হাতের দূরত্বও বেশি। বলের লাইনে খেলতে পারলেন না। তিনিও বুঝতে পেরেছেন যেখানে খেলতে চেয়েছেন সেটা পারেননি। বল সোজা মার্করামের হাতে।

‘সোনালি হাঁসে’ আরও একবার বিরাট কোহলি। আউট হবার পর ক্রিজের দিকেই হতাশ চোখে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। গ্যালারিতে বিরাট সমর্থকদের মাথায় হাত। বিরাট ব্যর্থতা মেনে নিতে পারছেন না সমর্থকরাও। আরও এক ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে মাথা নুইয়ে গুটি গুটি পায়ে বিরাট হেঁটে চললেন ডাগ আউটের দিকে। বিরাটের জন্য এই চিত্রটা এখন স্বাভাবিক বলা চলে। পর পর দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে ফিরলেন সোনালি হাঁসের লজ্জায়। তাও আবার ক্যারিয়ারে প্রথমবার এমন লজ্জার মুখে পড়েছেন এই তারকা ক্রিকেটার।

বিরাটের ব্যর্থতায় দলের অবস্থাও নাজেহাল। বিরাটের গোল্ডেন ডাকের দিনে মাত্র ৬৮ রানেই শেষ ব্যাঙ্গালুরুর ইনিংস। ৯ উইকেটের পরাজয়ে ব্যাকফুটে বিরাটের ব্যাঙ্গালুরু।

সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছে না বিরাটের। আইপিএল ক্যারিয়ারে উদ্বোধনী আসরের পর কোনো মৌসুমে এর চেয়ে খারাপ অবস্থানে ছিলেন না বিরাট। ৬ মাস আগেও তিনি সিংহের মত দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ২২ গজ। সেঞ্চুরিখরা থাকলেও ব্যাটে রানের ফোয়ারাটা ছুঁটছিল ঠিক। কিন্তু এরপরই দমে গেলেন। সেই দাপট দেখানো সিংহ এখন নিষ্প্রভ।

৮ ম্যাচ, ১১৯ রান। ১৭ গড়, ১২৩ স্ট্রাইক রেট। ফিফটি আর সেঞ্চুরির ঘরটা ফাঁকা।

ঠিক যেন ১৬ বছর আগের তরুণ বিরাটের দেখা মিলল। ২০০৮ সালের উদ্বোধনী আসরে ১৩ ম্যাচে করেছিলেন ১৬৫ রান। আইপিএল ক্যারিয়ারে একমাত্র ওই আসরেই কোনো ফিফটি কিংবা সেঞ্চুরি পাননি তিনি। বিরাট যেন সেদিকেই ধাবিত হচ্ছেন আরও একবার। বিরাটের সমস্যা সবার চোখের সামনে। তিনি হতাশ, তিনি পারছেন না।

চেষ্টার কমতি হয়ত নেই, দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তন চান বিরাট নিজেও। কিন্তু পারছেন না। বিরাটের অংকটা ভুল হচ্ছে বার বারই। কিন্তু এর সমাধাণও করতে হবে খোদ বিরাটকেই। টানা ব্যর্থতায় তিনি ক্লান্ত। বিরাটের মত ক্যালিবারের খেলোয়াড়ের জন্য দাপুটে প্রত্যাবর্তন কিংবা ফর্মে ফেরাটা খুব কঠিন না।

সাবেক ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী বলেন, ‘বিরাটের প্রয়োজন বিশ্রামের। বিশ্রাম নিলে সে হয়ত নিজের চিরচেনা রূপে ফিরতে পারবে।’ বিরাট ব্যর্থতার উত্তর মেলাতে পারছেন না বিরাটকে জাতীয় দলে উঠিয়ে আনা দিলীপ ভেৎসরকারও। সবাই শঙ্কিত বিরাটের ভবিষ্যত নিয়ে। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বাজে সময় কাটাতে পারবেন কিনা সে নিয়েও আছে চিন্তা।

ব্যর্থতার স্রোতে হেঁটে চলেছেন বিরাট। এই ব্যর্থতার স্রোতে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন তিনি। ক্যারিয়ার গ্রাফটা ক্রমশ নিম্নগামী হচ্ছে। হয়ত একটা সেঞ্চুরি বিরাটকে আবার ফেরাতে পারে চিরচেনা আগ্রাসী রূপে। ২২ গজে এভাবে বোলারদের কাছে বিরাটের অসহায় আত্মসমর্পণটা মানতে পারছেন না ক্রিকেট সমর্থকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link