এই মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে ধুঁকতে থাকা দলগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রীলঙ্কা। অথচ ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ জয় করার পর পরাশক্তি হয়ে উঠেছিল দেশটি। সিংহের মত দাপিয়ে বেড়িয়েছে গোটা ক্রিকেট দুনিয়া। এমনকি ২০১১ বিশ্বকাপেও রানার্স আপ দলটিতে ছিল তারকার ছড়াছড়ি।
অথচ কুমার সাঙ্গাকারা কিংবা মাহেলা জয়াবর্ধনেদের উত্তরসূরিদের বাইশ গজে এই ধুঁকতে থাকার চিত্র কেই বা কল্পনা করেছিল। গত পাঁচ-ছয় বছরে বলার মত কোনো সাফল্যই নেই দলটির। এছাড়া মাঠের বাইরেও নানা জটিলতায় ভুগছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট। তবে এই করুণ অবস্থা থেকেও ফিরে আসা সম্ভব। সমস্যা যতই প্রকট হোক – এখনো চাইলে ফিরতে পারে শ্রীলঙ্কা।
- ফিটনেস মন দিতে হবে
আধুনিক ক্রিকেটে ফিটনেস বেশ বড় ইস্যু। এখনকার ক্রিকেটে টিকে থাকার জন্য ভালো ফিটনেস বিকল্প নেই। তবে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের কয়েক বছর ধরেই এই সমস্যায় ভুগতে দেখা যাচ্ছে। ইনজুরির কারণে অনেক ক্রিকেটারই বছরের একটা বড় সময় ক্রিকেটের বাইরে থাকছেন।
এছাড়া ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যাট খেলতে হলেও নূনত্যম মান ধরে রাখা প্রয়োজন। স্রেফ ফিটনেস ইস্যুতেই বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা থিসারা পেরেরা বয়স থাকতেও অবসর নিয়ে ফেলেছেন। ফলে দেশটিকে খুব দ্রতই এই দিকটায় মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।
- খুঁজতে হবে সঠিক অভিভাবক
শ্রীলঙ্কা দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই এখন তরুণ। নতুন ক্রিকেটারদের নিয়ে নতুন করে পথচলা শুরু করতে যাচ্ছে দেশটি। আশা করা যায় অল্প সময়েই এই তরুণ ক্রিকেটারেরা দেশটিকে আবার সাফল্য এনে দিবেন।
তবে, এর জন্য ঠিকঠাক একজন অভিভাবক প্রয়োজন। অথচ দেশটি গত আট বছরে নতুন আটজন কোচের দ্বারস্থ হয়েছে। শ্রীলঙ্কার উচিৎ হবে একজন সঠিক কোচকে দীর্ঘমেয়াদে এই তরুণ ক্রিকেটারদের দায়িতে দেয়া।
- শৃঙ্খলার বিকল্প নেই
শ্রীলঙ্কা ক্রিক্রেটে সাম্প্রতিক সময়ে ডিসিপ্লিন একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে দেশটির তিনজন ক্রিকেটারকে বায়ো বাবল ভেঙে মাঝরাতে রাস্তায় দেখা যায়। ফলে এই তিনজনকে বাড়িও পাঠানো হয়েছিল সিরিজের আগেই।
অবশ্য এটিই একমাত্র ঘটনা না। এর আগে নানা সময়ে এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে দলটি। ফলের তরুণ এই ক্রিকেটারদের দ্রুত একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
- ক্রিকেটারদের উপর আস্থা রাখুক বোর্ড
২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকেই কোনো স্থায়ী দল গঠন করতে পারছেনা দেশটি। প্রায় প্রতি সিরিজে অধিনায়ক পরিবর্তন করা হচ্ছে। আবার প্রতি সিরিজের ক্রিকেটারদের বাদ দেয়া হচ্ছে , আবার ডাকা হচ্ছে। অর্থাৎ কোনো ক্রিকেটারের উপরই ঠিক আস্থা করতে পারছেনা নির্বাচকরা।
তবে এই খারাপ সময়ে বোর্ডের উচিৎ তাঁর সেরা ক্রিকেটারদের উপর আস্থা রাখা, তাঁদের সাহস দেয়া। তাঁদেরকে লম্বা একটা সময় সুযোগ দেয়া। তাহলেই হয়তো আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অবস্থান ফিরে পাবে দেশটি।
- ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়াতে হবে
ঘরোয়া ক্রিকেট শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা। দেশটির ঘরোয়া ক্রিকেটের মানও দিন দিন নিচের দিকে নামছে। ফলে ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে সহজে মানিয়ে নিতে পারছেনা।
এছাড়া শ্রীলঙ্কার ঘরোয়া ক্রিকেটে মোট ২৪ টি দল খেলায় মান আরো কমে যাচ্ছে। এর চেয়ে দল কমিয়ে এনে মানের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন দেশটির।