গ্রেসফুল নন যে গ্রেস

ক্রিজে দাঁড়ানো ব্যাটারের পেছনের স্ট্যাম্প বোলারের আঘাতে ছত্রভঙ্গ। স্বাভাবিকভাবেই বোল্ড আউট, আম্পায়ার তর্জনী তুলে আউট ঘোষণা করলেন। কিন্তু ব্যাটারকে অবিচল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। বলটি মাটি থেকে তুলে বোলারকে ছুঁড়ে দিয়ে আম্পায়ারকে বললেন, ‘ছোকরা, এখানে লোকেরা পয়সা খরচ করে আমার ব্যাটিং দেখতে এসেছে, তোমার আম্পায়ারিং দেখতে নয়।’ এই বলে দিব্যি ব্যাটিং চালিয়ে যেতে থাকলেন।

এই গল্প ঠিক কতখানি সত্য সে বিষয়ে স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। প্রায় দেড়শ বছর আগের ঘটনা কালের বিবর্তনে নিশ্চয়ই বহুবার বিকৃত হয়েছে। সে যাই হোক, এই গল্পের প্রধান চরিত্রকে বলা হয় ‘গডফাদার অব ক্রিকেট’। সেই বিখ্যাত ক্রিকেটারের নাম ডব্লিউ জি গ্রেস।

তিনি যে কেবল আচরণগত গডফাদার ছিলেন তাই নয়, তাঁর ক্রিকেটীয় রেকর্ডই প্রমাণ করে দেয় যে তিনি সত্যিই সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের একজন। সেই বিখ্যাত ক্রিকেটারের জ্যেষ্ঠ পুত্রও পেশায় ক্রিকেটার ছিলেন। বিখ্যাত বাবার ক্রিকেটার পুত্রেরও নিশ্চয়ই বহু গল্প রয়েছে।

ক্রিকেটের অতিমানব বলে খ্যাত উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেসের জ্যেষ্ঠ পুত্র উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস জুনিয়র। জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৬ জুলাই, ১৮৭৪ সালে। বাবার মতো ক্রিকেটের দুনিয়ায় জৌলুস দেখাতে পারেননি। আরও স্পষ্ট করে বললে বলা যায় সেই সময়টাই হয়তো পাননি। কারণ প্রায় ৩১ বছর বয়সেই নিভে গিয়েছিল তাঁর জীবনপ্রদীপ। ১৯০৩ সালে অ্যাপেনডিসাইটিসের অপারেশনের পর মারা যান তিনি।

তিনি ক্লিফটন কলেজ একাদশের হয়ে খেলতেন। কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন ১৮৯১-৯৩ এর সময়কালে অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর প্রথম সাফল্য অর্জিত হয়েছিল ১৮৯৪ সালের রিগেট ফেস্টিভ্যালে। যখন তিনি তাঁর পিতার একাদশের হয়ে ১৪৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। সেই ম্যাচটি ছিল মিস্টার ডব্লিউ.ডব্লিউ. রিডের একাদশের বিপক্ষে।

পহেলা জুন, ১৮৯৬ সালে ক্যামব্রিজে, তিনি ও জিএস গ্রাহামস্মিথ পেমব্রোক কলেজ বনাম কেয়াস কলেজের ম্যাচটিতে প্রথম উইকেটে ৩৩৭ রানের জুটি গড়েন। আবার ১৯০১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে ডব্লিউ জি গিলবার্ট জুনিয়র ও ডব্লিউ এল মার্ডক মিলে লন্ডন কাউন্টি বনাম ইরাটিক্সের ম্যাচটিতে প্রথম উইকেট জুটিতে ৩৫৫ রান করেছিলেন।

এই ম্যাচগুলোতে তার ব্যাটিং স্কোর ছিল যথাক্রমে ২১৩ এবং ১৫০ রান। বোলার হিসেবেও তিনি দারুণ ছিলেন। ২৫ আগস্ট ১৯০২ সালে ক্রিস্টাল প্যালেসে অনুষ্ঠিত লন্ডন কাউন্টি বনাম ব্রমলে টাউনের খেলায় তিনি এক ইনিংসে দশটি উইকেট শিকার করেছিলেন।

১৮৯৭ সাল থেকে ১৯০৩ সাল পর্যন্ত তিনি আউন্ডলেতে একজন সহকারীমাস্টার হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। তাঁর জীবনের শেষ দুই বছর তিনি রয়্যাল নেভাল কলেজ, অসবোর্নে মাস্টারি করেছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে তিনি কখনো আন্তর্জাতিক মাঠে খেলার সুযোগই পাননি। তাকে ৬ মার্চ,১৯০৩ সালে এলমারস এন্ড রোড কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস জুনিয়র তাঁর বিখ্যাত বাবার মতো নাম করতে পারেননি এটা সত্য। হয়ত তাঁর জীবন যদি তাঁকে আরও বেশি সময় দিতো তিনি তাঁর নিজের মহিমাতে আলোকিত করতে পারতেন ক্রিকেটাঙ্গন। আফসোস বড্ড তাড়াতাড়ি দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হল! দুর্ভাগা এক ক্রিকেটারই ছিলেন বটে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link